(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
(১) পর্দা ফরয সম্পর্কিত সর্ব প্রথম নাযিলকৃত আয়াত হলো আল কোরআনের ‘সূরা আহযাব' এর আয়াত নং ৫।
(২) কারো ঘরে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা ফরজ।অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা হারাম।
(৩) কোন ব্যক্তির ঘরের ছিদ্র দিয়ে তাকানো হারাম।
এতে ঘরওয়ালা যদি পাথর মেরে অথবা লৌহ খণ্ড দিয়ে চোখ নষ্ট করে দেয়, তাতে কোন গুণাহ হবে না। বরং দোষ ও হবে না।
(৪) বাহির থেকে ঘরওয়ালাকে যদি দেখা যায় তাহলে প্রথমে সালাম দিবে অতঃপর ঘরে প্রবেশের অনুমতি নিবে।
কিন্তু যদি ঘরওয়ালাকে যদি দেখা না যায় তাহলে লোক মারফত করে প্রবেশ করবে।
অথবা অন্য কোনভাবে প্রবেশের অনুমতি নিবে অতঃপর সালাম দিয়ে প্রবেশ করবে।
(৫) অন্য কারো ঘরে প্রবেশের জন্য তিনবার সালাম দেয়া সুন্নত।
তিনবার সালামের পর যদি কোন সাড়া শব্দ না পাওয়া যায়, তবে ফিরে যেতে হবে।
(৬) ঘর ওয়ালার প্রশ্নের জবাবে প্রবেশকারী তার নিজের নাম বলা সুন্নত ।
অজানা কোন ব্যক্তির মত আমি আমি বলা সুন্নতের খিলাফ।
(৭) যে ব্যক্তি সালাম দেয়না, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে প্রবেশের অনুমতি দিতে নিষেধ করেছেন।
(৮) আপন ঘরের অধিবাসী যেমন, মা, বোন প্রমূখগণের ঘরে প্রবেশের সময় অনুমতি নেওয়া ও ওয়াজিব।এতে মান-সম্মান, ইজ্জত সংরক্ষণ থাকে।
(৯) নিজের দাসী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কাদেরকে তিন সময়ে ঘরে আসতে অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উক্ত তিন সময় নিম্নে
(ক) ফজরের নামাযের পূর্বে যখন মানুষেরা ঘুমের কাপড় পাল্টিয়ে নামাযের কাপড় পরিধান করে।
(খ)দুপুরে যখন মানুষের কাজড় আলগা করে বিশ্রামের জন্য শুয়ে থাকে।
(গ) এবং ইশার নামাযের পর যখন মানুষেরা কাপড় পাল্টিয়ে ঘুমানোর জন্য আলাদা কাপড় পরিধান করে থাকে।
এ তিন সময় ছাড়া অন্যসময় অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করতে অসুবিধা নেই।
(১০) নিজ সন্তান যদি প্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কা হয়, তবে তাদের জন্যও অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা ওয়াজিব।
(১১) মুসলিমা, মু'মিনা মহিলাদের কাছ থেকে বিশেষ প্রয়োজনে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে শালীনতার সাথে চাইতে হবে।
বেপর্দা হয়ে সামনা সামনি দেখা করে চাওয়া জায়িয নেই বরং হারাম।
(১২) মহিলাদের জন্য গায়রে মাহরামদের সামনে মুখমণ্ডল বা চেহারাসহ সমস্ত শরীরই ঢেকে রাখা ফরযে আইন।
(১৩) আল্লাহ পাক-এর বাণী “যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপছে আপ বের হয়ে যায় তা ব্যতীত।
“ অর্থাৎ নামাযের সময় হাত, পা, মুখমন্ডল খুলে নামায পড়া এবং মাহরামের সামনে হাত, মুখমন্ডল, পায়ের পাতা ইত্যাদি খোলা যে জায়িয।
এ আয়াত শরীফ দ্বারা সেটাই বুঝানো হয়েছে। যারা বলে, ‘এ আয়াত শরীফ পর-পুরুষদের সামনে হাত, পা, মুখমন্ডল খোলা জায়িয প্রমাণ করে'
তাঁদের এ বক্তব্য কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফতওয়া মতে অশুদ্ধ।
মূল ফতওয়া হলো হাত, পা, মুখমন্ডলসহ মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীর, ঢেকে রাখা ফরযে আইন।
(১৪) কোন জরুরতে বেগানা বা পর পুরুষের সাথে কথা বলতে হলে কঠোর বা শক্তস্বরে কথা বলতে হবে,
কোমল ও আকর্ষণীয় স্বরে কথা বলা জায়িয নেই। কথা বলার সময় মুখে হাত দিয়ে কর্কশভাবে কথা বলতে হবে।
(১৫) মহিলাদের জন্য অপর মহিলার নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত স্থানের দিকে তাকানো বা দেখা হারাম।
পুরুষ কর্তৃক অপর পুরুষেরও নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম বা নাজায়িয।
(১৬) দু'জন পুরুষ বস্ত্রহীন হয়ে একই চাদরের নিচে শয়ন করা জায়িয নেই।
দু'জন স্ত্রী লোকও বস্ত্রহীন হয়ে একই চাদরের নিচে শয়ন করা জায়িয নেই।
(১৭) বেগানা মহিলার সামনে পুরুষের সতর হলো সমস্ত শরীর। অনুরূপভাবে বেগানা পুরুষের কাছে মহিলার সতর হলো সমস্ত শরীর।
তাই পুরুষ কর্তৃক মহিলার
দিকে এবং মহিলা কর্তৃক পুরুষের কোন অঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই।
(১৮) সৌন্দর্য প্রকাশ না করে অতিবৃদ্ধাদের জন্য অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করা জায়িয, তবে ব্যবহার করা উত্তম।
(১৯) যতজন পুরুষ কতৃক মহিলাদেরকে এবং মহিলা কর্তৃক পুরুষকে দেখা দেয়া জায়িয তার একটি তালিকা দেয়া হলো-
একজন পুরুষ কর্তৃক যতজন মহিলাকে দেখা জায়িয
(১) মা (আপন ও সৎ উভয়েরই দেখা করা জায়িয)।
(২) দাদী, পরদাদী (এভাবে যত উর্ধে যাক)।
(৩) নানী, পরনানী (এভাবে যত উর্ধে যাক)।
(৪) মেয়ে (বৈপিত্রেয়া, বৈমাত্রিয়া মেয়ে ও দুধ মেয়েও শামিল)।
(৫) পুতনী (এখানে দুধ ছেলে ও বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রেয় ছেলের মেয়েও শামিল)।
(৬) নাতনী (এখানে দুধ মেয়ে ও বৈপিত্রেয়া মেয়ের মেয়েও শামিল)।
(৭) বোন (তিন প্রকারঃ আপন, বৈমাত্রিয়া বোন ও বৈপিত্রিয়া বোন শামিল)।
(৮) ফুফু (আপন ফুফু, বৈমাত্রিয়া ফুফু, বৈপিত্রিয়া ফুফু ও দুধ ফুফু শামিল।
(৯)খালা (আপন খালা, বৈমাত্রিয়া খালা, বৈপিত্রিয়া ও দুধ খালা শামিল)।
(১০) ভাতিজী (ভাতিজীর মেয়ে যত নিম্নে যাক)।
(১১) ভাগ্নী (ভাগ্নীর মেয়ে যত নিম্নে যাক)
(১২) দুধ মা (আড়াই বছরের মধ্যে যার দুধ পান করা হয়েছে)।
(১৩) দুধ বোন (আপন বোনের মত দুধ বোনকে দেখা জায়িয)।
(১৪) শাশুড়ী (এখানে শুধু আপন শাশুড়ী উদ্দেশ্য, সৎ শাশুড়ীকে দেখা হারাম)।
(১৫)যে স্ত্রীর সাথে মিলামিশা করা হয়েছে তার অন্য পক্ষের মেয়ে।
(১৬) ঔরসজাত পুত্রের বধু বা স্ত্রী (এখান থেকে পালক পুত্রের স্ত্রীকে বাদ দেয়া হয়েছে)।
(১৭) দুধ পুত্রের বধু বা স্ত্রী।
(১৮) অতি বৃদ্ধা মহিলা, যাদের প্রতি তাকালে আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়।
একজন মহিলা যতজন পুরুষকে দেখতে পারে বা দেখা দিতে পারে
(১) পিতা (আপন ও মায়ের পূর্বের স্বামী উভয়েরই দেখা করা জায়িয)।
(২) দাদা (পর দাদা এভাবে যত উর্ধে যাক)।
(৩) নানা (পর নানা এভাবে যত উর্ধে যাক)।
(৪) ছেলে (বৈপিত্রেয়, বৈমাত্রেয় ও দুধ ছেলে সকলেই শামিল)।
(৫)নাতী বা পৌত্র (এখানে দুধ ছেলে, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ছেলের ছেলেও শামিল)।
(৬) নাতী বা দৌহিত্র (এখানে দুধ মেয়ে, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় মেয়ের ছেলেও শামিল)।
(৭) ভাই (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই শামিল)।
(৮) চাচা (আপন, বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় ও দুধ চাচা শামিল)।
(৯) মামা (আপন, বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় ও দুধ মামা শামিল)।
(১০) ভাতিজা (ভাতিজার ছেলে যত নিম্নে যাক)।
(১১) ভাগিনা (ভাগিনার ছেলে যত নিম্নে যাক)।
(১২) দুধ পিতা (আড়াই বছরের ভিতরে যার স্ত্রীর দুধ পান করা হয়েছে)।
(১৩) দুধ ভাই (আপন ভাইয়ের মত দুধ ভাইকেও দেখা ও দেখা দেয়া জায়িয)।
(১৪) শ্বশুর। (শুধু আপন শশুর উদ্দেশ্য)
(১৫) যে স্বামীর সাথে মিলামিশা করা হয়েছে তার অন্য পক্ষের বা স্ত্রীর ছেলে।
(১৬) ঔরসজাত মেয়ের স্বামী বা জামাতা (এখান থেকে পালিত মেয়ের স্বামী বাদ যাবে)।
(১৭) দুধ মেয়ের স্বামী বা জামাতা।
(১৮) পুরুষদের মধ্যে যারা অবুঝ, মহিলার প্রতি যাদের কোন আকর্ষণ নেই।
(১৯) বালকদের মধ্যে ঐ সমস্ত বালক যাদের কাছে এখনো মেয়েদের বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি।
(২০) অতি বৃদ্ধ পুরুষ, যাদের দিকে তাকালে আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়।
(২১)কোন কাজে জরুরতে বোরকা পরিধান করে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হতে হবে।
মুখের নেকাব ঝুলাতে হবে এবং হাত পায়ে মোজা পরিধান করে ঢাকতে হবে। তাহলেই পরিপূর্ণ হিজাব হবে, অন্যথায় নয়।
(২২) হাদীছ শরীফে এক চোখ খোলা রাখার যে কথা বলা হয়েছে। এর পদ্ধতি হলো,
সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে মাথার উপর থেকে মুখমন্ডলের উপর এমন ভাবে নিকাব ঝুলাতে হবে যাতে শুধু নিচের দিকে রাস্তা দেখা যায়,
পর পুরুষ যেন চোখের কোন অংশই দেখতে না পারে। কারণ মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীরই পর্দার অন্তর্ন্তুক্ত।
(২৩) বিশেষ প্রয়োজনে ডাক্তার মহিলার প্রয়োজনীয় অঙ্গ দেখতে পারবে।
তবে সামান্য সময় বেশী এবং সামান্য বেশী অংশ দেখা হারাম।
(২৪) মহিলাদের কণ্ঠস্বরও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত।
(২৫)বোরকার উপর ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দেয়া হারাম।
(২৬) নির্জনে দুধ বোন ও শাশুরীর সহিত সাক্ষাৎ নিষেধ।
(২৭)হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষের নামাযের ছতর হলো নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ।
অর্থাৎ এ পরিমাণ অঙ্গ নামাযের সময় ঢাকা ফরয।
মহিলাদের নামাযের ছতর হলো মুখমণ্ডল
হাতের কব্জির উপর এবং পায়ের পাতা ব্যতীত সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ।
অর্থাৎ নামাযের সময় মুখমণ্ডল, হাতের কব্জির উপর এবং পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরয।
(২৮) ইলিম অর্জনের জন্য খাছ পর্দার সাথে মহিলাদের বাইরে বের হওয়া জায়িয।
(২৯) মহিলাদের মাহরাম সহ হজ্ব বা ছফর করা ফরয, মাহরাম ব্যতীত হজ্ব করা জায়িয নেই বরং হারাম।
(৩০) মাহরামসহ ছফরকারীনী পরহেযগার মহিলার তথ্যাবধানে আরো একাধিক মহিলা ছফরসঙ্গী হিসেবে থাকলে খাছ পর্দার শর্তে তাদের ছফর জায়িয।
তথ্যাবধায়ক মহিলার মাহরামই সকলের মাহরামের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ধার্য হবে। তাই এমন ছফর শরীয়ত মতে জায়িয।
(৩১) মহিলাদের পোশাক পর্দার অন্তর্ভুক্ত।
(৩২)যে সমস্ত ভণ্ড পীর, মাওলানা, নামধারী আলিম, ইমাম, খতীব, ওয়ায়িয বেগানা মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করে,
একসঙ্গে মিটিং-মিছিল করে তাদের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। যদি তারা এগুলোকে হারাম জেনে করে থাকে।
কারণ, তারা চরম ফাসিক। আর যদি হালাল জেনে করে তবে তাদের পিছনে নামায পড়া শক্ত হারাম, কারণ তারা কাফির।
(৩৩) দাইয়্যূছ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা, তাদের জন্য জান্নাত হারাম। দাইয়্যূছ হলো,
যে নিজে পর্দা করে না এবং পরিবার পরিজনকেও পর্দায় রাখে না। সে যে শ্রেণীরই হোক না কেন।
(৩৪) মাহরামদের সম্মুখে মহিলাদের মুখমণ্ডল, হাত,পা, খোলা রাখা জায়িয; গাইরে মাহরামদের সামনে জায়িয নয়।
আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে হিজাব বা পর্দার যাবতীয় মাসয়ালা জেনে ও মেনে তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে,
আপনার সন্তুষ্টি এবং আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
আরো পড়ুন 👇👇👇
হে বর্তমান যুগের আধুনিকা বোন তোমাকেই বলছি