(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের ফজিলত ও গুরুত্ব অত্যাধিক।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: “আর তোমরা রুকু কারীদের সাথে রুকু করো”।
অর্থাৎ, মুসল্লীদের সাথে নামাজ আদায় কর। (সূরা বাক্বারাহ) এখানে (রুকু কারীদের সাথে) শব্দের দ্বারা নামাজ জামাতের সাথে আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ নির্দেশটি কোন পর্যায়ের, এ নিয়ে ওলামা ও ফিকুহবিদগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
সাহাবা, তাবেয়ীন এবং ফিকুহবিদদের একদল জামাতকে ওয়াজিব বলেছেন এবং তা পরিত্যাগ করাকে গুরুতর পাপ বলে অভিহিত করেছেন।
কোন কোন সাহাবা এবং তাবেয়ীনদের মতানুসারে জামাতে নামাজ আদায় করা ফরজ।
তাদের মতে শরীয়ত সম্মত উজর ছাড়া জামাত ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হবে না।
তবে অধিকাংশ সাহাবা তাবেয়ীন, উলামা ও ফিকুহবিদের মতে জামাত হল সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
ফজরের সুন্নাতের ন্যায় সর্বাধিক তাকিদপূর্ণ সুন্নাত তথা ওয়াজিবের একেবারে নিকটবর্তী। হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফিকুহগ্রন্থ বাহরুর রা-ইক্বে রয়েছে:
“জামাতে নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ।অর্থাৎ, গুরুত্বের দিক দিয়ে তা ওয়াজিব সমতুল্য। ইমামগণের নিকট ওয়াজিব হওয়াই অতিশয় অগ্রগণ্য। “১/৩৪৪)
অনুরূপভাবে উল্লেখ রয়েছে -ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৫৫২ ও ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী-১/৮২তে।
বিভিন্ন হাদীসে জামাতের অনেক ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। নমুনা স্বরূপ কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হল-
(এক)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সা.) ইরশাদ ফরমান:
একাকী নামাজ পড়ার চে' জামাতে নামাজ পড়লে সাতাইশ গুণ অধিক সওয়াব পাওয়া যায়। (বুখারী ও মুসলিম)
(দুই)
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- একাকী নামাজ অপেক্ষা দুইজন মিলিত হয়ে নামাজ পড়া অনেক ভাল।
দুই জনের চে' তিনজন মিলিত হয়ে নামাজ আদায় করা আরও অধিক ভাল। এভাবে লোক যত বেশী হবে তা আল্লাহর নিকট তত বেশী পছন্দনীয় হবে।
(আবু দাউদ)
(তিন)
মহানবী (সা.) বলেন: যে ব্যক্তি এশার নানাজ জামাতের সাথে পড়বে, তাকে অর্ধরাত পর্যন্ত ইবাদত করার সওয়াব দেয়া হবে।
যে এশা ও ফজর উভয় ওয়াক্তের নামাজ জামাতে পড়বে, তাকে সম্পূর্ণ রাত ইবাদত করার সওয়াব দেয়া হবে।
(তিরমিযী)
(চার)
হুজুর (সা:) ইরশাদ করেন: আমার মন চায় যে, মুয়াজ্জিনকে ইকামত দিতে আদেশ করব। তারপর কোন ব্যক্তিকে লোকদের ইমামতি করার জন্য নির্দেশ দেব।
অত:পর অগ্নিশিখা হাতে নিয়ে ঐ সব লোকদেরকে জ্বালিয়ে দেব যারা (জামাতে) নামাজ পড়ার জন্য (ঘর থেকে) বের হয় না।
(বুখারী ও মুসলিম)
(পাচ)
হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন: যে বস্তি বা ময়দানে তিনজন মুসলমান থাকবে আর সেখানে যদি জামাতে নামাজ আদায় করা না হয়,
তাহলে শয়তান তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ফেলবে। কাজেই তোমরা জামাতকে আকড়ে ধরো। কারণ, দলতত্যাগকারী বকরীকেই বাঘ খেয়ে থাকে।
(আহমদ)
(ছয়)
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন: জুলুম, পূর্ণ জুলুম, কুফর ও নেফাক হচ্ছে:
যে ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজের দিকে আহবানকারীর (মুয়াজ্জিনের) আহবান শুনার পরও জামাতে হাজির হল না।
(আহমদ)
উক্ত হাদীসে যারা জামাতে হাজির হয় না তাদের কাজকে কাফির এবং মুনাফিকের কাজের সাথে তুলনা করে ইশারা করা হচ্ছে যে, কোন মুসলমান এ রূপ কাজ করতে পারে না।
এটা কত কঠোর সতর্কবাণী। মোটকথা, এ ধরণের বহু হাদীসে জামাতেবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
তাই এ ব্যাপারে সবাইকে পূর্ণ যত্নবান থাকা একান্ত প্রয়োজন।
আরো পড়ুন 👇👇👇
সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাজের আলোচনা
সালাতুত তাসবীহ নামাজ পড়ার নিয়ম
ইশরাক চাশত তাহিয়্যাতুল অজু ও তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজের আলোচনা