Breaking News
Home / ইসলাম ধর্ম / ইস্তেগফারের ফজিলত

ইস্তেগফারের ফজিলত

অধিক হারে ইস্তেগফারের ফজিলত

হা ও সালাতের পর…

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যত ভালো কাজ শিক্ষা দিয়েছেন, তাতে কমপক্ষে তিনটি উপকার নিহিত আছে।

াহরণত একবার দুরূদ শরীফ পড়লে তিনটি উপকার পাওয়া যায়। দশটি নেকী লাভ হয়, দশটি গুনাহ মাফ হয় এবং দশটি দরজা বুলন্দ হয়।

দুরূদ শরীফ বেহতেরীন ইবাদত। ইস্তিগফার আমাদের কাছে খুব হালকা-পলকা লাগে।

এটাও বেহতেরীন ইবাদত। শরীফে বিভিন্ন তরীকায় ইস্তিগফারের শব্দাবলী বর্ণিত আছে। যেমন,

استغفر الله ربي من كل ذنب واتوب اليه

 استغفر الله الذى لا اله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه

اللهم اغفر لي وارحمني

 

এগুলো সবই ইস্তিগফারের শব্দ। ইস্তিগফার দুরূদ শরীফের মতই বেহতেরীন ইবাদত।

দু'আ কবুল হওয়ার জন্য দুরূদ শরীফ একটা বড় উসিলা। দুরূদ শরীফ পড়ে দু'আ করলে তা কবুল হয়।

অনুরূপভাবে ইস্তিগফারও দু'আ কবুল হওয়ার বেহতরীন উপকরণ। দুরূদ শরীফ পড়লে যেমন তিনটি ফায়দা হয়,

ইস্তিগফার পড়লেও তিনটি ফায়দা হয়। তবে দুরূদ শরীফ পড়ার ফায়দাগুলো বাকি; নগদ না। দশটা নেকি পাবেন,

এগুলো আমলনামায় লেখা হবে; কিয়ামতের দিন দেখানো হবে। দশটা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, এটাও ঠিক ঐরকম।

দশটা দরজা বুলন্দ হয়ে সম্মানিত হবেন, এটা বেহেশতের মধ্যে দেখা যাবে। দুরূদ শরীফের খায়ের ও বরকত বাকি। নগদও আছে। একেবারেই নেই তা নয়।

 

আর ইস্তিগফারের সব ফায়দা নগদ নগদ। দুরূদ শরীফের মতো কিছু বাকি কিছু নগদ এমন নয়। কাজেই ইস্তিগফার পড়ে সঙ্গে সঙ্গে ফায়দা লুটে নাও।

তবে ইস্তিগফার পড়লে যে নগদ তিনটা ফায়দা পাওয়া যাবে সেটা শর্তবিহীন নয়। সুতরাং কোনও রকমে ইস্তিগফার পড়ে নিলেই কাঙ্ক্ষিত ফায়দা হাসিল হবে না।

হাদীসের শব্দ হলো- من لزم الاستغفار অর্থাৎ যে ঈমানদার বান্দা ইস্তিগফারকে আবশ্যক করে নিয়েছে।

উঠতে-তে চলতে-ফিরতে সব সময় সে ইস্তিগফার পড়ে। মানে যার যবান ইস্তিগফার থেকে মুক্ত হয় না,

ইস্তিগফারের সঙ্গে তার যবান লেগে থাকে। এই রকম ইস্তিগফারকারীর জন্য তিনটি নগদ ফায়দা আছে।

 

ইস্তিগফারকারীর প্রথম ফায়দা

من كل هم خرج অর্থাৎ ব্যক্তি জীবনে,পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে,

রাষ্ট্রীয় জীবনে যত রকমের দুশ্চিন্তা আছে সকল দুশ্চিন্তা আল্লাহ তা'আলা দূর করে দিবেন।

ইস্তিগফারকারীর কোনো রকমের চিন্তা-দুশ্চিন্তা থাকবে না; সব দূর হয়ে যাবে।

 

কিছুদিন ধরে একজন বড় আলেম আমাকে বিরক্ত করছে। টেলিফোনে কান্নাকাটি করে। আমার কাছে পরামর্শ চায়।

আরে, আসামীর তালিকায় তো আমার নামও আছে। সে মনে করছে, হুযূর এমন নিশ্চিন্ত হয়ে কীভাবে বসে আছে?

নিশ্চয় হুযরের কোনো উসিলা আছে, লাইন-ঘাট আছে! আমি তাকে বললাম, ভাই! তোমার যে অবস্থা আমারও সেই অবস্থা।

তুমি গা ঢাকা দিবে কোথায়। কতদিন দিবে। পড়া- পড়ানো তো নষ্ট হবে। এতে চিন্তা বাড়বে বৈ কমবে না। চিন্তা কেন করছো?

পড়া-পড়ানো চালিয়ে যাও আর খুব ইস্তিগফার করো। ইস্তিগফার তো করবে, কিন্তু খুব একীন সহকারে করতে হবে।

এই তো হাদীসের লফয جعل الله له من كل هم خرج খুব একীন করে পড়তে থাকবে। শুয়ে বসে সর্বাবস্থায় পড়।

সে ভাবছে, হুযুর এতো নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছে কেন? আরে! দুশ্চিন্তা করলে লাভটা কী হবে। কজেই নিশ্চিন্তে বসে থাকা ছাড়া উপায়ও তো নেই ।

হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ. বলেন, তুমি আল্লাহর নিকট খুব দু'আ করো। দু'আর মধ্যে দু'টি লাভ। একটা নগদ, একটা বাকি।

নগদ লাভ হল, দু'আর বরকতে তৎক্ষণাৎ পেরেশানী দূর হয়ে যাবে।

আর যে জিনিসের জন্য দু'আ করছো এই জিনিস হয় দুনিয়াতেই পেয়ে যাবে নতুবা আখিরাতে পাবে। সুতরাং খুব দু'আ করতে থাকো।

তোমার দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে। এর জন্য বেশি বেশি দু'আ করো আর ভালো করে ঘুমাও। কিন্তু ঘুম আসলে তো ঘুমাবে!

 

পরশু একজন মাওলানা এসেছিল। এখানে বসুন্ধরা মারকাযে নাকি অনেক বছর পড়েছে। এখন মা-শা-আল্লাহ দাওরায়ে হাদীস মাদরাসায় পড়ায়।

আমাকে খতমে বুখারীতে নেয়ার জন্য এসেছিল। হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাবে। আমি বললাম, ভাই! দেশের অবস্থা খুব একটা ভালো না।

এখন এত বড় প্রোগ্রাম করো না। অন্যান্য বছরের মতো সাদাসিধে আয়োজন করে ফেলো। ইনশা-আল্লাহ আমি আগামী বছর যাবো।

সে মনে করেছে, আগামী বছর হুযুর বাঁচলে তো? তো আমি বলছি, ইনশা-আল্লাহ আমি মরবোও না। আল্লাহ কবুল করুন, আমীন।

তাদেরকে এতো করে বললাম, তারপরও মানল না। শেষ পর্যন্ত তাদের পীড়াপীড়ির কারণে রাজি হলাম। ১৪ তারিখ এখান থেকে হেলিকপ্টারে যাবো মাগুরা।

সেখান থেকে হেলিকপ্টারে আবার খুলনায়। দুই দিন পর প্লেনে ঢাকায় ফিরবো। গতকাল রাত পৌনে তিনটায় আমার মোবাইল বাজছে।

তখন কোন কারণে আমি হাম্মামে। রাতে জরুরত সারতে বারবার উঠতে হয়। একা একা উঠতে পারি না।

কেউ আমাকে হাম্মামে পৌছে দিতে হয়। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। তারা নিজেরাও তো ঘুমাতে পারে না।

আর আমি তো মাজবুরান ঘুমাতে পারি না। কিন্তু ওরা এই মাজবূরিতে সহযোগিতা করে বলে ঘুমাতে পারে না।

মাঝে মাঝে ওদেরকে বলি, তোমরা আরো কয়েকজনকে নিয়ে খেদমত করো। যা হোক, রাত পৌনে তিনটার সময় আমি হাম্মামে,

এদিকে মোবাইল বাজছে। মোবাইল সাধারণত আমি ধরি না। আজকে যখন হাম্মাম থেকে বের হলাম, তো আমাকে যে হাম্মাম থেকে আনা-নেয়ার খেদমত করছিল তাকে বললাম,

একটু বসো, মোবাইলটা ধরি। রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে বলল, হুযুর! আমি অমুক বলছি। সেই দুই মাওলা একজন।

বললাম ব্যাপার কি? এতো রাতে ফোন? বলল, হুযূর সারারাত ঘুমাতে পারিনি। তাহাজ্জুদ পড়ে জেগে আছেন মনে করে ফোন দিলাম।

কি ব্যাপার? বলল,মাগুরার মাদরাসাগুলো সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ হয়রানি করছে। আমি বললাম, ভাই! আমি তো আগেই বলেছিলাম এ বছর প্রোগ্রাম করো না।

 

তো বলছিলাম যে, আমরা কিভাবে ঘুমাবো, সারারাত ঘুম ধরে না? নানা রকম চিন্তা-দুশ্চিন্তায় ঘুম ধরে না।

আমার তো হাম্মামের জরুরতের কারণে রাতে কয়েকবার উঠতে হয়। জরুরত সেরে আবার ঘুমাতে যাই, ঘুম এসেও যায়।

শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম এসে যায়। আলহামদুলিল্লাহ চিন্তাও নেই,দুশ্চিন্তাও নেই। যা হওয়ার তাতো হবেই। এটার জন্য মেহনত করি।

এমন কোন দিন যায় না যেদিন কয়েক শতবার ইস্তিগফার না পড়ি। পড়তে থাকি। যখনই সুযোগ পাই ইস্তিগফার পড়ি।

যে কোন শব্দে পড়ি। বড় ইস্তিগফারও পড়ি, ছোটও পড়ি। পড়তেই থাকি। আল্লাহর ে এর কিছু বরকত নগদেই পাচ্ছি।

বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়তে থাকো বরকত তুমিও পাবে। চিন্তা- দুশ্চিন্তা থেকে আল্লাহ তোমাকে নাজাত দিবেন।

من كل هم خرج এর চেয়ে বড় নিয়ামত দুনিয়াতে আর কিছু নেই। মানুষের ঘুম আসে না। বিশেষ করে এই বয়সে।

হাটহাজারীর আল্লামা শফী সাহেব বগুড়ায় বয়ান করেছেন। বলেছেন, ‘আমার বয়স প্রায় নব্বই বছর,

আর পাশে বসা সভাপতি সাহেব (মুফতী আব্দুর রহমান সাহেব) আমার চেয়েও বয়সে বড়।

হুযূরের বয়স কত বেশি জানি না। যা হোক, কেউ ৯২ বলে আবার কেউ বলে ৯৩।

তো এই বয়সে ডাক্তাররা আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনার ঘুম কেমন হয়? বলি, প্রয়োজনে ঘুম দূর করার ট্যাবলেট দিতে পারেন,

ঘুম আসার জন্য ওষুধের প্রয়োজন নেই। আমার ঘুমের অবস্থাও এমনই। শোয়া মাত্রই ঘুম এসে যায়।

ডাক্তাররা বলে, মা-শা-আল্লাহ তাহলে তো খুব ভালো। আমি বলি, ভালোর কারণ হল,আমার কোন চিন্তা-দুশ্চিন্তা নেই।

আমার কোন ব্যবসা নেই যে লোকসান হয়ে যাবে। কোন জমি-যিরাত নেই যে বন্যায় ডুবে যাবে। আর কোন বেতনও নেই যে কাটা যাবে।

তো আমার চিন্তা কিসের?

 

প্রশ্ন করতে পারো তাহলে খাবেন কোত্থেকে? আরে ঐ চিন্তা তো আরো নেই। পেলে খাবো, না পেলে খাবো না।

এই বয়সে বেশি খাওয়া যায় নাকি? এখন শুধু ঘুম আসে। তো ‘পেলে খাবো, না পেলে খাবো না' তোমরা এটা ভালো করে রপ্ত করে নাও।

পেলে খাবে, না পেলে খাবে না। তবে ঘুমটা যেন ভালো করে হয়। দুনিয়াতে ঘুমের চেয়ে বড় কোন নেয়ামত নেই।

আমাদের এখানকার যে সব লোক সৌদি আরব যায়, দুবাই যায়- এরা ফজরের নামায পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে। একঘুমে এগারোটা বাজিয়ে দেয়।

নাস্তা-টাস্তাও করে না। খালি ঘুমায়। মানে হল, ঘুম তাদের কাছে অনেক বড় নেয়ামত। তোমরা তো এখন পড়া-শোনা করছো।

আলহামদুলিল্লাহ, যে পরিমাণ ঘুম তোমাদের হচ্ছে এটা আল্লাহর নেয়ামত। যদি দুশ্চিন্তায় ভুগো, চিন্তা-ভাবনায় পড়ে যাও তাহলে ঘুম ধরবে না।

এই বয়সেই যদি ঘুম না আসে কিছুদিন পর তো ঘুমের জন্য ট্যাবলেট খেতে হবে। ট্যাবলেট খাওয়ার পর যে ঘুম আসে সেটা কিন্তু নেয়ামত না।

জবরদস্তি ঘুমকে কিভাবে নেয়ামত বলা যায়? এজন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করো যেন ট্যাবলেট ছাড়াই ঘুম আসে।

খুব ঘুমাও, কোন অসুবিধা নাই। ইবাদতের মধ্যে বেহতেরীন ইবাদত হল ঘুমানো। কারণ জাগ্রত অবস্থায় সাধারণত ইবাদত- বন্দেগী হয় না।

তবে আল্লাহ যাদেরকে তাওফীক দেন তাদের হয়। জাগ্রত অবস্থায় গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

গীবত, শেকায়েত, বদগুমানী এগুলো জাগ্রত অবস্থায় হয়।

জাগ্রত অবস্থায় যে সব গুনাহ হয় এগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য মেহনত করতে হবে।

এই মেহনত যারা করবে আল্লাহ হয়তো জাগ্রত অবস্থায়ও তাদেরকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। অন্যথায় বেহতেরীন ইবাদত হলো ঘুমিয়ে থাকা।

ঘুমের মধ্যে কোন গুনাহই নেই। কথার কথা, ঘুমের মধ্যে বিবিকে তালাক দিলেও কার্যকর হবে না।

যদি কুফুরী কালিমাও বলে ফেলো কোন গুনাহ নেই; ঈমান নষ্ট হবে না। তাহলে বোঝো ঘুম কতো বড় ইবাদত।

এই ইবাদতে কোন রকমের অসুবিধা নেই। এমনকি ঘুমের মধ্যে যদি ফরয নামাযের ওয়াক্তও চলে যায় কোন গুনাহ হয় না।

ঘুম যে কত বড় নেয়ামত ও ইবাদত তা বোঝানোর জন্য মাসআলা বললাম। এর অর্থ এই নয় যে, তুমি ইচ্ছা করেই নাামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকবে।

নামাযের জন্য জাগ্রত হওয়ার ইচ্ছায় তুমি ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখলে।

কোন কারণে অ্যালার্ম বাজল না বা অ্যালার্মের শব্দেও তোমার ঘুম ভাঙল না এবং কেউ তোমাকে জাগিয়েও দিল না,

এদিকে ফরয নামাযের ওয়াক্ত চলে গেল। তো এতে তোমার কোন গুনাহ নেই।

তবে তোমাকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন ঘুম এতোটা লাগামহীনও না হয়ে যায়, যাতে জরুরী কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে।

আমার বলার উদ্দেশ্য হল ঘুম অনেক বড় ইবাদত। নফল ইবাদত। এই রকম ঘুম কোন ঔষধ ছাড়াই তোমার আসবে ইনশা-আল্লাহ।

তুমি চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা মুক্তও হয়ে যাবে। তবে এর জন্য তোমাকে একটি মাত্র আমলের পাবন্দি করতে হবে।

তা হলো “কাছরাতে ইস্তিগফার বা অধিকহারে ইসতিগফার পাঠ। এতটুকু পুরস্কার পেয়ে গেলে তোমার জিন্দেগী কামিয়াব। 

ইস্তিগফারের দ্বিতীয় ফায়দা

এরপর দ্বিতীয় ফায়দা ও পুরস্কার দিচ্ছেন আল্লাহ তা'আলা- ومن كل ضيق مخرج জীবনে যত রকমের তংগি ও সঙ্কীর্ণতা আসবে,

যত রকমেই তোমার রাস্তা সবদিক থেকে খাটো হয়ে আসবে, শত্রুরা খাটো করে দিবে, দুশমনরা খাটো করে দিবে-

তখনও আল্লাহ তা'আলা তোমার জন্য রাস্তা কোশাদা করে দিবেন, প্রশস্ত করে দিবেন।

ومن كل ضيق مخرج অনেক সময় মনে হয়, আর বুঝি দুনিয়াতে থাকার অবস্থা নেই। কিন্তু হঠাৎ করে দেখা যায় কোত্থেকে আল্লাহর কোন বান্দা এসে উদ্ধার করে দিয়ে যাচ্ছে।

এই ধরনের পুরস্কার আল্লাহর বান্দারা পায়। তাহলে তুমি পাবে না কেন? তারা পায় কোন আমলের বিনিময়ে? কাছরাতে ইস্তিগফারের কারণে।

 

ইস্তিগফারের তৃতীয় ফায়দা

ورزقه الله من حيث لا يحتسب অধিক পরিমাণে ইস্তিগফারের কারণে আল্লাহ এই মুমিন বান্দাকে রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন অকল্পনীয়ভাবে।

অর্থাৎ এমনভাবে যা কল্পনাযোগ্য নয়। করে ভাত খাবে- এটা আশ্চর্যের কী হল? যে চাকরী করে সে খানা পায়।

ইস্তিগফার পড়নেওয়ালাও পায়, না পড়নেওয়ালাও পায়। ব্যবসা-বাণিজ্য করে তুমি রিযিক লাভ করলে, ভাত পেলে, বিরিয়ানি খেলে এতে আশ্চর্যের কী?

পক্ষান্তরে তুমি কিচ্ছুটি করলে না, শুধু ইস্তিগফার করতে থাকলে- আল্লাহ তোমাকে এর বিনিময়ে কল্পনাতীত রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন-

এটা হল প্রকৃত বিস্ময়ের ব্যাপার। অবাক লাগে, তোমাদের মত মুখলিসীন তালিবুল ইলম,

যারা কেবল আল্লাহকে রাজি করানোর উদ্দেশ্যে মাদরাসায় এসেছো, তোমাদের দাবী তোমরা যদি “কাছরাতে ইস্তিগফার' করে থাকো

তাহলে তোমাদের রিযিকের জন্য কেন আমাদেরকে এতো পেরেশান হতে হচ্ছে এবং তোমরাই বা কেন কষ্ট পাচ্ছো?

কল্পনাতীত রিযিক তোমাদের জন্য কেন আসবে না? আমার মনে হয়, কোথাও আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি হচ্ছে।

কোন রুমে অথবা গাড়িতে এয়ার কন্ডিশন চলছে, কিন্তু গাড়ি বা রুম ঠাণ্ডা হচ্ছে না। গাড়ি ঠাণ্ডা হচ্ছে না কেন?

ড্রাইভার বলছে, পেছনের জানালাটা একটু ফাঁক হয়ে আছে। ঐ ফাঁক দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে।

আরোহীরা টের পাচ্ছে না। তো তোমরা যদিও কাছরাতে ইস্তিগফার করছো তবুও রিযিক – من حيث لا يحتسب আসছে না।

বোঝা গেল নিশ্চয়ই কোথাও ছিদ্র রয়ে গেছে। ঐ ছিদ্রটা কিসের? গুনাহের ছিদ্র।

কাজেই ইস্তিগফার করার পাশাপাশি গুনাহও ছাড়তে হবে। গুনাহকে গুনাহ মনে না করাও একটা গুনাহ। ওটাও ছাড়তে হবে।

 

ورزقه الله من حيث لا يحتسب এর রিযিক বড় আজীব ও বিস্ময়কর রিযিক। বনি ইসরাইলের জন্য মান্না-সালওয়া এসেছে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ের জন্য من حيث لا يحتسب আসছে। মান্না-সালওয়া তো من حيث لا يحتسب না।

মান্না-সালওয়া প্রতিদিন আসতো। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে আসতো।

কিন্তু ইবরাহীম বিন আদহামের রিযিক হলো من حيث لا يحتسب তোমরা যখন ইবরাহীম বিন আদহাম রহ.এর তরীকার আনুসারী,

তোমরা যদি ‘কাছরাতে ইস্তিগফার' করো ইনশা-আল্লাহ তোমার জন্যও من حيث لا يحتسب রিযিক আসবে।

 

এক গরীব লোক। গায়ে পুরানা কাপড়- চোপড়। মসজিদে ইশার নামায পড়ছে। নামাযের পর মসজিদেই ঘুমাবে।

মুয়াযযিন বলল, ভাই আমার সঙ্গে খানা খাও। গরিব লোকটি জিজ্ঞেস করে, কী খানা? বলে ভাত-সবজি ইত্যাদি ইত্যাদি।

লোকটা বলে, আমি তো এগুলো খাই না। তাহলে কী খাও তুমি? বলে, আমি তো বিরিয়ানী খাই, অন্য কিছু খাই না।

মুয়াযযিন বলল, ঠিক আছে তুমি তাহলে বিরিয়ানিই খেয়ো! লোকটি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।

রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ এক মহিলা মুয়াযযিনকে ডাকছে- বাবা! আমি বুড়া মানুষ, রান্না করতে দেরি হয়ে গেছে।

আমি তোমার জন্য খানা নিয়ে এসেছি। জিজ্ঞেস করা হলো, কী খানা? বলল বিরিয়ানী।

মুয়াযযিন বলল, এ খানা আমার না, খানা তো ঐ যে বড় মিয়া শুয়ে আছেন তার।

এরপর তাকে ডাক দিয়ে বলল, ও ভাই! তোমার বিরিয়ানি এসেছে, খেয়ে নাও।

সে উঠলো। হাত মুখ ধুলো। এবার সে মুয়াযযিনকে ডাকে, ভাই তুমিও আসো, বিরিয়ানী খাও। না, আমি খাবো না।

দেখো, আমি একলা সব খেতে পারবো না। আমি যা খাই খাবো বাকিটা কিন্তু থেকে যাবে। সেটা বাসি হলে তো তোমাকেই খেতে হবে, কারণ আমি বাসি খাই না। তুমি আমার সঙ্গে খাও,

আর না হয় তোমাকে বাসি খেতে হবে। কি রকম এক্বীন আল্লাহর যাতের উপর! ফাটাফুটা কাপড় আর আল্লাহর যাতের উপর এমন এক্বীন-

‘আমি বিরিয়ানী খাই। বাসি খাই না।' শুনতে তো অবাক লাগে। কিন্তু অবাক হওয়ার কী আছে? আল্লাহর ওয়াদা

ورزقه الله من حيث لا يحتسب আল্লাহ যেহেতু ওয়াদা করেছেন, তুমি অবাক হচ্ছো কেন?

আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য দরকার শুধু মেহনত আর মেহনত। শুধু কাছরাতে ইস্তিগফারের কারণে দুঃচিন্তা চলে যায়।

ঘুম বেশি হয়। ঘুম যতো ভালো হবে ততো বেশি খেতে পারবে। তোমার সব দুশ্চিন্তা চলে যাবে। বাধা- বিঘ্ন দূর হয়ে যাবে।

অফুরন্ত খানা খুব বেশি করে খেতে পারবে। এরপর আল্লাহর শোকর আদায় করবে- الحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه মৌলবী সাব!

মাকসাদ না। তোমরা এসব কিভাবে পড়েছো। এখন এর উপর একীন পয়দা করে আমল করো। নিজের জন্য করো।

পরিবারের জন্য করো। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের জন্য করো। নিজের মুহসিনীনদের জন্য করো। আসাতিযায়ে কেরামের জন্য করো।

শাইখদের জন্য করো। ইনশা- আল্লাহ গায়েব থেকে আল্লাহ তোমাকে মদদ করবেন। আজকে সারাদেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

দেশবাসী দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কওমী মাদরাসাগুলোও কমবেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

সারা বাংলাদেশের অন্যান্য কওমী মাদরাসার তুলনায় আল্লাহ তোমাদেরকে যে শান্তিতে রেখেছেন এর শুকরিয়া আদায় করো।

আর বেশি বেশি ইস্তিগফার করে সবার জন্য দু'আ করো। কওমী মাদরাসাগুলোতে ইখতেলাফ থাকতে পারে।

যেহেতু সবাই আমরা মানুষ। তবে আমাদেরকে আরও সতর্ক হতে হবে।

সামান্য অদূরদর্শিতার কারণে স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে আমাদের মাদরাসাগুলিতে মাঝে মাঝে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে।

পুলিশ হয়রান পেরেশান করে। উস্তাদরা আত্মগোপনে থাকে। আল্লাহ তা'আলা মাদরাসাগুলোকে হেফাজত করুন।

তালিবে ইলমদেরকে পড়ালেখার ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে দিন। আমাদের সবার ভুল-ভ্রান্তিগুলো মাফ করে দিন।

‘কাছরাতে ইস্তিগফার' করে উক্ত নেয়ামতগুলো হাসিল করার ব্যবস্থা করে দিন। আমীন।

সূত্র: ফকিহুন নাফস মুফতি আব্দুর রহমান সাহেব রহঃ এর বয়ান থেকে সংগৃহীত

About আবদুল্লাহ আফজাল

হাফিজ মাওঃ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আফজাল। ২০১২ সনে হিফজ সম্পন্ন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন২০১৬ সনে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন ২০২০ সনে। ঠিকানা: বালাগঞ্জ, সিলেট। মোবাইল নাম্বার: 9696521460 ইমেইল:hafijafjal601@gmail.com সকল আপডেট পেতে এবং ওয়েবসাইটে লিখা পাঠাতে ফেসবুক পেজ👉MD AFJALツ ফলো করুন।

Check Also

কেন মানুষের অন্তর কঠোর হয়

যেসব কারণে অন্তর শক্ত হয়

কলব মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুস্থ কলব মানুষকে কল্যাণের পথদেখায়। আর অসুস্থ কলব মানুষকে কুপথে নিয়ে …

Powered by

Hosted By ShareWebHost