(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
ফরজ নামাজের আগে পরে কিছু সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাজ রয়েছে। যা গুরুত্বের দিক দিয়ে ওয়াজিবের কাছাকাছি। যেমন-
(১) ফজরের ফরজের আগে দুই রাকআত নামাজ। কেউ কেউ তো এটাকে ওয়াজিব-ই আখ্যা দিয়েছেন।
(২) জোহরের ফরজের আগে চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
(৩) জুমুআর ফরজের আগে চার রাকআত ও পরে চার রাকআত।
(৪) মাগরিবের ফরজের পর দুই রাকআত।
পক্ষান্তরে আছরের আগে চার রাকআত এবং এশার আগে চার রাকআত সুন্নাত রয়েছে,
তবে তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নয় বরং সুন্নাতে গায়েরে মুয়াক্কাদাহ। যা প্রায় মুসতাহাব্বের পর্যায়েরই।
উপরোল্লিখিত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাজগুলো অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে আদায় করতে হবে। এতে গাফলতি করা ঠিল নয়।
ফজরের সুন্নাত আদায়
ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত ফরজ নামাজের আগে আদায় করতে হবে। হ্যা, যদি এমন হয় যে, সুন্নাত আদায় করলে জামায়াত ছুটে যাবে,
তাহলে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হতে হবে। তবে যদি সুন্নাত আদায় করে জামাতে শরীক হবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে প্রথমে সুন্নাত পড়ে নিতে হবে।
এমনকি ইমাম সাহেবের সাথে তাশাহহুদে শরীক হওয়া সম্ভবপর মনে হলেও প্রথমে সুন্নাত আদায় করে নিতে হবে।
তবে এ ক্ষেত্রে জামাতের স্থান ছেড়ে অন্য কোন পৃথক স্থানে গিয়ে সুন্নাত পড়তে হবে। যেমন, মসজিদের বারান্দা।
বারান্দায় সুযোগ না থাকলে মসজিদের অভ্যন্তরস্থ কোন দেয়াল কিংবা স্তম্ভের অন্তরালে পড়ে নিবে।
জামাতের কোন সফফ (কাতার)-এর সাথে মিলিত হয়ে কিংবা মধ্যখানে কোন আড়াল ছাড়াই সফফের পেছনে সুন্নাত নামাজ পড়া মাকরূহে তাহরীমী।
বারান্দায় সম্ভব না হলে কিংবা ভেতরকার কোন দেয়াল বা স্তম্ভের আড়ালে নামাজ পড়ার সুযোগ না থাকলে সুন্নাত না পড়েই জামাতে শরীক হয়ে যাবে।
কেননা, সুন্নাত আদায় করতে গিয়ে মাকরূহে তাহরীমীতে লিপ্ত হওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।
(ফাতাওয়ায়ে শামী-২/৫৬, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম-৪/২০০-২০১, আহসানুল ফাতাওয়া-৩/৪৬০-৪৬১)
ফজরের সুন্নাতের ক্বাযা
কেউ যদি কোন কারণে ফজরের সুন্নাত আদায় করতে না পারে তাহলে তা পরবর্তীতে ক্বাযা করতে হবে। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যা নিম্নরূপ:
(ক) ফজরের সুন্নাত যদি ফরজসহ ক্বাযা হয়ে যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দিন দুপুরের পূর্বে ক্বাযা আদায় করলে ফরজের সাথে সুন্নাতেরও ক্বাযা আদায় করতে হবে।
কিন্তু দুপুরের পর ক্বাযা আদায় করলে কেবল ফরজেরই ক্বাযা করবে। সুন্নাতের ক্বাযা করতে পারবে না।
(খ) যদি কোন কারণবশত: কেবল ফজরের সুন্নাত ছুটে যায়, তাহলে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত পড়তে পারবে না।
কেননা, ফজরের ফরজ আদায় করার পর সূর্যাদয়ের পূর্ব পর্যন্ত নামাজ পড়া মাকরূহ। তবে, সূর্যাদয়ের পর দুপুর পর্যন্ত এর ক্বাযা পড়তে পারবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী-২/৫৭-৫৮)
জোহরের সুন্নাত আদায়রত অবস্থায় ইকামত হয়ে গেলে তখন
জোহরের সুন্নাত তৃতীয় রাকআত বা চতুর্থ রাকআত আদায়রত অবস্থায় ইকামত হলে চার রাকআত পূর্ণ করে সালাম ফেরাবে।
আর দ্বিতীয় বা প্রথম রাকআত আদায়রত অবস্থায় ইকামত হয়ে গেলে দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেবে এবং জামাতে শরীক হয়ে যাবে।
তবে জোহরের ফরযান্তে দুই রাকআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আদায় শেষে ঐ চার রাকআত সুন্নাত ওয়াক্তের ভেতর ক্বাযা করতে হবে।এটাই প্রসিদ্ধ কথা।
কিন্তু কেউ যদি অন্য মতানুসারে এ ক্ষেত্রে চার রাকআত পূর্ণ করে জামাতে শরীক হতে চায়, তাহলে এরও সুযোগ রয়েছে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী-২/৫৩-৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া-১/৪৬৪-৪৬৫)
জোহর ও জুমুআর পূর্ববর্তী চার রাকআত সুন্নাত পড়তে না পারলে
কোন কারণবশত: জোহর কিংবা জুমুআর পূর্ববর্তী চার রাকআত সুন্নাতে ফরজের আগে না পড়ে থাকলে পরে ওয়াক্তের ভেতর এর ক্বাযা করতে হবে।
সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এর ক্বাযাও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ এ,ব্যাপারে অনেককেই গাফলতি করতে দেখা যায়।
(ফাতাওয়ায়ে শামী-২/৫৮, আহসানুল ফাতাওয়া-৩/৪৫৬-৪৫৭)
সুন্নাত এবং ফরজের মধ্যখানে দুনিয়াবি কথা বলা
ফরজের প্রথমে এবং পরে যে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ পড়া হয় সে সুন্নাত এবং ফরজ নামাজের মধ্যখানে অর্থাৎ,
ফরজের পূর্বে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আদায় করার পর ফরজ আদায় পর্যন্ত এবং ফরজ আদায় শেষে পরের সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আদায় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নফল নামাজ পড়া যাবে।
কিন্তু বিনা ওজরে দুনিয়াবি কোন কথাবার্তা বলা তথা নামাজের ভেতর যে সকল কাজ নিষিদ্ধ এমন কিছু করা (যেমন আহার, পানাহার, ইত্যাদি করা) যাবে না।
কারও কারও মতে এতে সুন্নাতই নষ্ট হয়ে যাবে। পুনরায় আবার পড়তে হবে। কিন্তু বিশুদ্ধ মতানুযায়ী এতে সুন্নাত নষ্ট হবে না। তবে সওয়াব কমে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৫৩০,২/১৯-২০, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী-১/১১৩, আহসানুল ফাতাওয়া-৩/৪৯০-৪৯১)
তাসবীহ ওযীফা ইত্যাদি সুন্নাত শেষে আদায় করাই উত্তম
যেহেতু ফরজ এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এর মধ্যখানে তেমন দেরী করা উত্তম নয় বিধায়, নামাযোত্তর যে সকল তাসবীহ-ওযীফা আদায়ের ফজীলত রয়েছে,
সেগুলো ফরজের সাথে সাথে আদায় না করে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এর পরই আদায় করা উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৫৩০)
আরো পড়ুন: 👇👇👇
ফজর ও জোহরের সময় কখন থেকে শুরু হয় জেনে রাখুন