মুসলিমবিডি২৪ডটকম
মানুষের দেহ চলমান। সুস্থতার জন্য নড়া-চড়া, হাঁটা-চলা ও ওঠা-বসা দরকার। ৫ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদে যাওয়া-আসা করতে হয়।
নামাজে ওঠা-বসা করতে হয়। এ সবই উপকারী। নামাজ বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদত।
প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ।
নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাজই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
ঈমানদাররা আল্লাহকে স্মরণ করলে শুধু যে তাদের মনে শান্তি আসে তা নয়, এর প্রভাবে তাদের পরিবারে ও সমাজে শান্তি আসে।
আর আল্লাহকে স্মরণ করার সর্বোত্তম পথ হচ্ছে নামাজ। অর্থাৎ নামাজ কায়েম থাকলে ব্যক্তিগত শান্তি,
পারিবারিক শান্তি ও সামাজিক শান্তি বিরাজমান থাকে। কেননা নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়।
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলিমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে। এর মাধ্যমে মূলত আল্লাহর একটি আদেশ পালন হয়।
সেই সাথে আল্লাহর সাথেও সাক্ষাত হয়। হাদিসে এসেছে, নামাজ হচ্ছে মুমিনের মেরাজ।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তোমরা নামাজ শেষ করার পর দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো।
আমেরিকার বিংহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এটা প্রমাণ করেছে যে,
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার মাধ্যমে মানুষ স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও উপকৃত হতে পারে এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, নামাজের সময় শারীরিক যে ক্রিয়া হয়ে থাকে এটা যদি নিয়মিতভাবে ও নির্ধারিত সময়ে হয়
তবে অন্য সকল চিকিৎসা থেকে পিঠের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা পালন করবে এই নামাজ।
নিয়মিত নামাজ শরীরের উপর এই ঝিম প্রভাব, রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন কমাতে পারে, পরিণামে পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তারাই এ ধরনের লোক যারা
(এ নবীর দাওয়াত) গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়।
আমেরিকার বিংহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখিয়েছেন
যদি কেউ ঠিক মত রুকু করতে পারে তাহলে তার পিঠে কোন ব্যাথা থাকবে না।
কেননা রুকুর সময়ই পিঠ সময় হয়ে থাকে। এই গবেষণায় মূলত নামাজ পড়লে শারীরিক যে উপকারগুলো হবে
সেই বিষয়গুলোকেই বড় করে তুলে ধরা হয়েছে।
রুকু: নীচের পিঠ, উরু এবং ঘাড়ের পেশীগুলি সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করে। রক্ত শরীরের উপরের অংশে প্রবাহিত হয়।
সিজদা : সিজদা দিলে হাড়ের জোড়ার নমনীয়তা বাড়ে।
মাথা নামানোর সময় মস্তিকে রক্ত সঞ্চালন হলে রক্তচাপও কমে, এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
সিজদার পুনরাবৃত্তি- এই সিজদা শরীরিরে ভারসাম্য এনে দেয়।
ফজরের নামাজ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান- ফজরের সময় নামাজ আদায় করলে সারা রাত ঘুমের পর হালকা অনুশীলন হয়ে যায়।
এ সময় পাকস্থলী খালি থাকে তাই কঠিন অনুশীলন শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
এ সময়ে নামাজ আদায় করলে নামাজি অবসাদগ্রস্ততা ও অচলতা থেকে মুক্তি পায়। মস্তিষ্ক ফ্রি হয়ে পুনরায় চিন্তা করার জন্য প্রস্তুত হয়।
এ সময়ে নামাজি হেঁটে মসজিদে যায় আর আত্মা পরিচ্ছন্ন, প্রশান্ত পরিবেশ থেকে সূক্ষ্ম অনুভূতি লাভ করে- এসবই উপকারী।
জোহরের নামাজ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান- মানুষ জীবিকার জন্য দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে। এতে ধুলা, ময়লা, বিষাক্ত কেমিকেল শরীরে লাগে।
দেহে জীবাণু আক্রমণ করে। ওজু করলে এসব দূর হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়ে দেহ পুনর্জীবন লাভ করে।
গরমের কারণে সূর্য ঢলে পড়ার সময় বিষাক্ত গ্যাস বের হয়। এ গ্যাস মানবদেহে প্রভাব ফেললে মস্তিষ্ক, পাগলামিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
এ সময় ওজু করে নামাজ আদায় করলে এ গ্যাস প্রভাব ফেলতে পারে না ফলে দেহ বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে যায়।
আসরের নামাজ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান- পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে চলে। লম্ব ও বৃত্তীয়। যখন সূর্য ঢলতে থাকে তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে।
আসরের নামাজের সময় অবচেতন অনুভূতির শুরু হয়। এ সময় নামাজ আদায় করলে অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্ততা,
অবচেতন অনুভূতির আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমে। নূরানি রশ্মি নামাজিকে প্রশান্তি দান করে।
মাগরিবের নামাজ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান- সারাদিন মানুষ জীবিকার জন্য শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটায়।
মাগরিবের সময় ওজু করে নামাজ আদায়ের ফলে আত্মিক ও দৈহিক প্রশান্তি লাভ হয়। এ সময় পরিবারের মধ্যে আনন্দের রেশ বয়ে যায়।
এশার নামাজ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান- মানুষ কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে রাতে খাবার খায়। এ সময় খেয়ে শুয়ে পড়লে বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অল্প ব্যায়াম করে বিছানায় গেলে কোনো সমস্যা হবে না। এশার নামাজ ব্যায়ামের চেয়েও বেশি উপযোগী।
এ নামাজ আদায়ে শান্তি পাওয়া যায়, খাদ্য হজম হয় এবং অস্থিরতা দূর হয়।
তাহাজ্জুদের নামাজ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান- এ সময়ে নামাজ আদায় করা অস্বস্তি, নিদ্রাহীনতা,
হার্ট, স্নায়ুর সংকোচন ও বন্ধন এবং মাথার বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা।
ডা. মাহমুদ চুগতাই বলেন, যারা দূরের জিনিস দেখে না এ সময়ে নামাজ আদায় করা তাদের চিকিৎসা।
এছাড়াও এ সময়ে নামাজ আদায় করলে বুদ্ধি, আনন্দ এবং অসাধারণ শক্তির সৃষ্টি হয় যা নামাজীকে সারাদিন উৎফুল্ল রাখে।
এটা সত্য যে নামাজ শারীরিক উপকারের জন্য পড়তে হয় না এমন নয়, নামাজ পড়তে হয় মহান আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য।