রোগীর শরীরে অন্যের রক্ত দেওয়ার বিধান
রক্ত মানুষের শরীরের অংশ। শরীর থেকে বের করে নেওয়ার পর তা নাপাক। তদানুসারে একজনের শরীরের রক্ত
অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করানো দু'কারণে হারাম হওয়া উচিত। প্রথমত: মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্মানিত এবং আল্লাহ কতৃক সংরক্ষিত।
শরীর থেকে পৃথক করে নিয়ে তা অন্যত্র সংযোজন করা সে সম্মান ও সংরক্ষণ বিধানের পরিপন্থি।
দ্বিতীয়ত: হারাম একারণে হওয়া উচিৎ যে, রক্ত ‘নাজাসাতে গালিযা' বা জঘন্য ধরণের নাপাকি। আর নাপাক বস্তু ব্যবহার জায়েয নয়।
তবে নিরূপায় অবস্থায় এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়ত যে সব সুযোগ সুবিধা দিয়েছে; সেগুলোর ভিত্তিতে চিন্তা ভাবনা করলে
নিম্নোক্ত সিদ্বান্তে উপনিত হওয়া যায়। প্রথমত: যদিও রক্ত মানুষের শরীরেরই অংশ, তথাপি এটা অন্য মানুষের শরীরে স্থানান্তরিত করার জন্য
যার রক্ত,তার শরীরে কোনো প্রকার কাটা-ছেড়ার প্রয়োজন হয় না,
কোনো অঙ্গ কেটে পৃথক করতে হয় না। সুঁই এর মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে রক্ত বের করে অন্যের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়।
এ হিসাবে রক্তকে দুধের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যা অঙ্গ কর্তন ব্যতিরেকেই একজনের শরীর থেকে বের হয়ে অন্যের শরীরের অংশে পরিণত হতে থাকে।
শিশুর প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ করেই ইসলামি শরিয়ত মানুষের দুধকে শিশু খাদ্য হিসেবে নির্ধারিত করেছে এবং
স্বীয় সন্তানকে দুধ পান করানো মায়ের উপর ওয়াজিব সাব্যস্ত করে দিয়েছেন।
“ঔষধ হিসেবে স্ত্রী লোকের দুধ পুরুষের পক্ষে নাকে প্রবেশ করানোতে কোনো দোষ নেই''। (আলমগীরি)
রক্তকে যদি দুধের সাথে তুলনা করা হয়, তবে তা সামঞ্জস্যহীন হবে না। কেননা দুধ রক্তেরই পরিবর্তিত রূপ এবং মানব দেহের অংশ হওয়ার ব্যাপারেও
একই পর্যায়ভুক্ত। পার্থক্য শুধু এতোটুকু যে, দুধ পাক এবং রক্ত নাপাক। সুতরাং হারাম হওয়ার প্রথম কারণ
অর্থাৎ মানব দেহের অংশ হওয়ার ক্ষেত্রে তো নিষিদ্ব হওয়ার ধারণা যুক্তিতে টেকে না। অবশিষ্ট থাকে দ্বিতীয় কারণ অর্থাৎ নাপাক হওয়া।
এক্ষেত্রে চিকিৎসার বেলায় অনেক ফিকাহবিদ রক্ত ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। এমতাবস্তায় মানুষের রক্ত অন্যের দেহে স্থানান্তর করার প্রশ্নে
শরিয়তের নির্দেশ হলো এই যে, সাধারণ অবস্থায় এটা জায়েয নয়। তবে চিকিৎসার্থে, নিরূপায় অবস্থায় ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে জায়েয।
“নিরূপায় অবস্থা” এর অর্থ হলো, রোগীর যদি জীবন সংশয় দেখা দেয় এবং অন্য কোনো ঔষধ তার জীবন রক্ষার জন্য কার্যকর বলে বিবেচিত না হয়,
আর রক্ত দেওয়ার ফলে তার জীবন রক্ষার সম্ভাবনা যদি প্রবল থাকে, তবে সে অবস্থায় তার দেহে অন্যের রক্ত দেওয়া কুরআন শরীফের সে আয়াতের
মর্মানুযায়ীও জায়েয হবে, যে আয়াতে অনন্যোপায় অবস্থায় মৃত জন্তর গোশত খেয়ে জীবন বাঁচানোর সরাসরি অনুমতি দেওয়া হয়েছে। (৬/১৪৫)
আর যদি অনন্যোপায় না হয় এবং অন্য ঔষধ ব্যবহারে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়, তবে সে অবস্থায় রক্ত ব্যবহার করা না জায়েয। (আলমগীরি)
আরও পড়ুন:-
রক্তদান Donation of blood ব্লাড ব্যাংক Blood Bank
চিকিৎসা করার সুন্নাত তরীকা
ভুল চিকিৎসায় রুগি মারা গেলে তার হুকুম কী