(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রা.) যখন বলখের রাজত্ব ত্যাগ করিয়া নিশাপুরের জঙ্গলে ইবাদত ও মােজাহাদা শুরু করিলেন,
তখন ঐ জঙ্গলের মধ্যে তাহার জন্য ‘জান্নাতি খানা' আসিতে লাগিল, যাহার খুশবুতে সমস্ত জঙ্গল মোহিত হইয়া যাইত।
ঘাস কাটিয়া আনিয়া বিক্রয়কারী এক ব্যক্তিও নিজের পেশা ত্যাগ করিয়া ফকীরী গ্রহণ করত: ঐ জঙ্গলে থাকিতেছিল।
আরো দেখুন সময়ের হেফাজতে বুযুর্গদের ঘটনা
বার বৎসর যাবত তাহার জন্য প্রত্যহ আল্লাহর পক্ষ হইতে দুই রুটি ও চাটনী আসিতেছিল। খােশবুদার এই খাবারের ফলে তাহার মনে কষ্ট হইল।
শয়তান তাহাকে ধোকা দিল যে, দেখ! তােমার কি কদর, আর এই নূতন ফকিরের কি কদর?
ফলে, তাহার মনে খেয়াল আসিতে লাগিল যে, আল্লাহ পাক যেন আমার সহিত ভাল ব্যবহার করিলেন না।
মনের মধ্যে এইরূপ অসমীচীন কল্পনা-জল্পনা চলিতেছিল।
হঠাৎ আসমান হইতে আওয়াজ আসিল, হে বেআদব! হে অকৃতজ্ঞ! যাও, তােমার খুরপি উঠাও,
আরো জানুন এক বুযুর্গের কারামত
যাহা দ্বারা তুমি ঘাস কাটা-চাছার কাজ করিতে এবং সেই টুকরি হাতে লও, যাহাতে তুমি ঘাস ভরিতে।
আগে যেভাবে খাইতে কামাইতে, যাও আবার সেভাবেই খাও এবং কামাও। আমার জন্য তুমি একটা খুরপি আর একটা টুকরিই বিসর্জন দিয়াছ।
অথচ, এই লােকটিত আমার জন্য বলখের রাজ-সিংহাসন, মখমলের নরম বিছানা এবং রাজকীয় মান-মর্যাদা সবকিছুই কোরবান করিয়া দিয়াছে।
যার যত বড় ত্যাগ ও কোরবানী, তার সাথে কি আমি সেইরূপ আচরণ করিব না? ইহাই কি ন্যায়সঙ্গত না?
মােদ্দাকথা, হযরত সুলতান ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রহ.) উচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে উচ্চ মর্তবা পাইয়াছেন। মসনবীয়ে-আখতারের ভাষায়….
বাদশাহী আজ মাওলাপ্রেমে উৎসর্গীত। সমস্ত দৌলত প্রেমের এই পথে নিবেদিত। রাজদেহ আজ ফকীরের পােশাকে আবৃত।
শাহী-মর্যাদা ‘মাওলার কি' হওয়ার পথে বিসর্জিত। শাহী-আত্মা আজ মাওলার রাস্তার ফকীর হওয়ার কি মজা, সেই সন্ধান পাইয়া গিয়াছে।
সুলতানের প্রাণ এইবার আৱেফ ও ওলীর প্রাণে পরিণত হইয়াছে।
তারে নবম পুরস্কার যাহা দৃষ্টি সংযত রাখার এবং সুশ্রী-সুদর্শনদের ভালবাসা হইতে সাচ্চা তওবার বদৌলতে নসীব হয়,
তাহা হইল উপরে বর্ণিত এই রাজত্ব ত্যাগী বাদশার মর্তবা।'
অর্থাৎ সহায়-সম্বলহীন গরীব মিসকীন মুসলমানও ইনশাআল্লাহ কিয়ামতের দিন দৃষ্টি হেফাযতের মােজাহাদার বরকতে
হযরত সুলতান ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রহ.)-এর মত আওলিয়াদের কাতারে স্থান লাভ করিবে।
অর্থাৎ কোন কোন প্রেমাসক্ত মানুষ এমনও হয় যে, কোন সুশ্রীজনের রূপ-লাবণ্য দ্বারা তাহার মন এতটা প্রভাবান্বিত হইয়া যায় যে,
বলখের রাজত্ব কিংবা আরও বড় কোন রাজত্বও যদি তাহার হাতে থাকিত,
প্রিয়তমের জন্য বিশাল সেই রাজত্ব উৎসর্গ করিয়া হইলেও সে তাহাকে লাভ করিতে আগ্রহান্বিত।
(এরূপ প্রেমিক-মন কোন প্রিয়জনের প্রেম-ভালবাসা যদি আল্লাহর জন্য বিসর্জন দেয়,
আরো জানুন দুনিয়া ত্যাগি সাহাবির ঘটনা
তাহার জন্য রাজত্বত্যাগী সুলতানের সারিতে স্থান লাভ করার মধ্যে বিস্ময়ের কি আছে?)।
যেমন বৃটেনের এক রাজার কথা শুনিয়াছি। স্বীয় প্রিয়তমাকে পাওয়ার জন্য রাজ-সিংহাসনকেই বিসর্জন দিয়াছে।
বৃটেনের এসেম্বলী যখন এই শর্ত উত্থাপন করিল যে, হয় ঐ সুন্দরী-নারীর সম্পর্ক ত্যাগ কর অথবা রাজ আসন।
রাজ-আসনের বদলে সে ঐ প্রিয়তমাকেই গ্রহণ করিয়াছে। অতএব, মুমেন যখন এমন কোন সুশ্রীমুখের ভালবাসা হইতে খাটি মনে তওবা করে
যাহাকে পাওয়ার জন্য হাতে থাকিলে রাজত্ব উৎসর্গ করিতেও প্রস্তুত।
কিন্তু একমাত্র আল্লাহর ভয়ে, আল্লাহর সন্তুষ্টির খাতিরে চাঁদ-সুরুজের মত ঐ সুন্দর ও লাবণ্যময় হইতে দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাহার ভালবাসা পরিহার করে।
তবে শুধু একটি রাজত্ব নয়, বরং কত অসংখ্য রাজত্বই যেন সে আল্লাহর জন্য কোরবান করিয়া দিল।
প্রেমানুরাগী লােকেরা এই মােজাহাদার বরকতে হাশর-ময়দানে এইরূপ উচ্চ মর্তবার অধিকারী হইবে! ইনশাআল্লাহু তা‘আলা।
উৎসঃ আত্মার ব্যাধী ও প্রতিকার | পৃষ্ঠা-১০২