(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
জামে কারামাতিল আউলিয়া' নামক গ্রন্থের মিসরী সংস্করণে হযরত কারশী মাজযুব (রহঃ) এর একটি আশ্চর্য ঘটনার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
ঘটনাটি হলাে হযরত কারশী (রহঃ) উচ্চস্তরের বুযুর্গ ও আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি ছিলেন।
কিন্তু তিনি ছিলেন কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত। এ কারণে অপরের কষ্ট হবে ভেবে তিনি বিবাহ থেকে বিরত ছিলেন।
তবে তিনি যেহেতু নওজোয়ান ছিলেন, তাই তাঁর মাঝে বিবাহের মানসিক চাহিদা বিদ্যমান ছিলাে।
সে চাহিদা অনুভব করে একবার তিনি আপন মুরীদদের সামনে বললেন, এবার আমি বিবাহ করার ইচ্ছা করেছি।
সুতরাং তোমরা আমার পক্ষ থেকে বিবাহের পয়গাম পাঠাতে পারো।
তবে যেখানেই বিবাহের পয়গাম পাঠাবে সেখানে আমার পূর্ণ অবস্থা বর্ণনা করবে।
আমার সার্বিক অবস্থা জেনে যদি কোন মহিলা আমার সাথে বিবাহে সম্মত হয়ে যায় তবে তো ভালো,
আর তা না হলে আমি সবর করব। এ কথা শুনে একজন মুরিদ তৎক্ষণাৎ উঠে নিজের বাড়ি গেলে।
তার এক মেয়ে ছিল প্রাপ্তবয়স্কা। সে তার মেয়েকে ঐ বুজুর্গ পীর সাহেবের সকল অবস্থা বর্ণনা করে জিজ্ঞেস করলে,
সে তার কাছে বিবাহ বসতে রাজি আছে কিনা? জবাবে ঐ মেয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্টচিত্তে জবাব দিলাে, আমি রাজি আছি।
এ উত্তর শুনে ঐ মুরীদ খুশী হয়ে পুনরায় ঐ বুযুর্গ পীর সাহেবের দরবারে ফিরে এসে জানালাে,
আমার কন্যা আপনার সাথে বিবাহে সম্মতি প্রকাশ করেছে।
বুযুর্গ পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তার কাছে আমার পূর্ণ অবস্থার কথা বর্ণনা করেছে?
মুরীদ উত্তর দিলাে, আমি আপনার সকল অবস্থা তার কাছে পরিষ্কার ভাষায় খুলে বলেছি।
সব শুনে আমার মেয়ে উত্তর দিয়েছে, আমি ঐ বুযুর্গের খেদমত করতে পারাটা আমার দ্বীনি সৌভাগ্যের বিষয় মনে করি।
বিধায় আমি তাকে গ্রহণ করতে রাজি আছি। সেমতে ঐ বুযুর্গের সাথে ঐ মেয়ের বিবাহ সম্পাদিত হয়ে গেল।
হযরত কারশী (রহঃ) ছিলেন কারামত অধিকারী অলৌকিকতা সম্পন্ন বুযুর্গ।
ঐ মেয়ের উন্নত ধ্যান-ধারণা ও প্রশস্ত চিন্তা-চেতনার কথা শুনতে পেয়ে তিনি আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ করলেন—‘ইয়া আল্লাহ!
আমি যখন আমার স্ত্রীর কাছে যাই তখন যেন আমার সুরত সুন্দর ও সুদর্শন হয়ে যায়।
আল্লাহ পাক তাঁর ফরিয়াদ কবুল করলেন। তিনি যখন নিজের ঘরে স্ত্রীর কাছে গেলেন তখন তার শরীরে কুষ্ঠ রোগের কোন চিহ্ন থাকলাে না।
তিনি একজন সুস্থ, সুঠাম, সুদর্শন যুবকে পরিণত হলেন।
ঐ মেয়ে (বর্তমানে যে তাঁর স্ত্রী) তাকে দেখেই পর্দায় লুকিয়ে গেলাে এবং বললাে, আপনি কে? এখানে কেন এসেছেন?
বুযুর্গ উত্তর দিলেন, আমি কারশী, তােমার স্বামী। মেয়েটি উত্তর দিলাে, আপনি আমার স্বামী নন।
কারণ আমার স্বামী কুষ্ঠ রােগী। একথা শুনে হযরত কারশী মাজযুব (রহঃ) নিজের কারামতের কথা বিস্তারিতভাবে তাকে শুনিয়ে বললেন,
এখন থেকে আমি যখনই তোমার কাছে আসব তখন আমার এ সুন্দর সুদর্শন আকৃতি তৈরি হয়ে যাবে, প্রতিবার এ আকৃতিতে আমি তোমার কাছে আসবো।
সম্মানিত পাঠক!
মেয়েটির উন্নত ধ্যান-ধারণা ও উচ্চাঙ্গের হিম্মতের বিষয়টি লক্ষ্য করুন।
মেয়েটি জবাব দিলাে, আফসুস ও পরিতাপের বিষয় এই যে, আপনি আমার খালেস নিয়ত এবং তার সওয়াব নষ্ট করে দিলেন।
আমি শুধু আপনার সাথে বিবাহে এজন্য সম্মত হয়েছি যে, আপনাকে মাযূর (অপারগ) মনে করে আপনার খেদমত করার সওয়াব হাসিল করব।
দুনিয়ার ভোগ-বিলাস কিংবা প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করার জন্য নয়।
সুতরাং আপনি যদি আপনার আসল সূরত এবং প্রকৃত অবস্থায় আমার সাথে মিলতে চান তবে আমি আপনার খেদমত করার জন্য প্রস্তুত আছি।
আর তা না হলে আপনি আমাকে তালাক দিয়ে দিন। হযরত কারশী (রহঃ) এ কথা শুনে নিজের আসল সূরতে চলে এলেন,
কুষ্ঠ রােগ তার শরীরে এসে গেলাে এবং মেয়েটি এ অবস্থাতেই ঐ বুযুর্গের সাথে ঘর-সংসার করতে থাকলো।
তথ্য সূত্রঃ মাজালিসে হাকীমুল উম্মত – পৃষ্ঠা-১৪১
──────⊱◈◈◈⊰──────
আরো পড়ুন👉হযরত মাওলানা ইয়াকুব (রাহঃ)-এর কারামত,
ইস্তেগফারের উপকারিতা, আমরা জীবনের সহজ বিষয়গুলো বুঝি না কেন ,
তওবা করার শর্ত কী?