কবরে পুষ্পস্তবক ও চাদর দেয়া বিদআত
হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত সাহাবায়ে কেরাম রাঃ তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন এর যুগে কবরে পুষ্পস্তবক দেয়া
এবং চাদর দেয়ার প্রথা ছিল না। অথচ বর্তমান যামানায় কোন নামী-দামী ব্যক্তি ইন্তেকাল করলে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে হয়।
অথচ তা যে শরীয়ত বিরোধী তা কি কেউ কোনদিন চিন্তা করেছে? আজ যারা এ বিদআত কাজে লিপ্ত হবে না তাদেরকে বিভিন্ন রকমের ধিক্কার ও তিরস্কার করা হচ্ছে।
বর্তমানে আউলিয়ায়ে কেরামদের কবরে ফুল এমনকি চাদর ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এতে করে তাদের প্রতি মহব্বত ও ভালবাসার উচ্চ জযবা দেখানোর চেষ্টা করা হয়।
কবরে চাদর বা গিলাফ ঝুলিয়ে দেওয়া বিদআত
অথচ সাহাবায়ে কেরামদের,তাবেঈন, তাবে তাবেঈনদের ও ভালোবাসা ছিল, মহব্বত ছিল, কিন্তু তারা তো কোনদিন দুজাহানের বাদশা
সমস্ত আউলিয়াদের পথের দিশারী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে ফুল দেননি বা তার কবরে চাদর বা গিলাফ দেননি।
অথচ তারা আমাদের চেয়ে বেশি ভালবাসতেন রাসুল সাঃ কে।মৃতের কবরে চাদর বা ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জানালে মৃতের কোন লাভ হয় না,
এ ভ্রান্ত প্রথা পরিহার করে দোয়া কালাম ইস্তেগফার পড়লে মৃতদের লাভ হয়।
ভ্রান্ত ধারণা
মৌলভী নাঈম উদ্দিন মোরাদাবাদী ও মুফতি আহমদ ইয়ার খান এর মতো কিছু লোভী মৌলভী যারা ইংরেজ বেনিয়াদের কৃত দালাল ছিল,
তারা তাদের বাবুদের মন খুশি করার লক্ষ্যে মিথ্যা ও মনগড়া কথার আশ্রয় নিয়ে এ ঘৃণ্য ও গর্হিত কাজটি পূন্যময় ও সুন্নাত বলে প্রমাণের অপচেষ্টা চালিয়েছে।
তারা মনে করে তা সুন্নাত,ও সওয়াবের কাজ, ইসলামের আলামত।তারা তাদের কথার দলিল হিসেবে পেশ করে হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর হাদিস যে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ব্যক্তির কবরের উপর দুটি খেজুরের ডাল রোপন করেন।এক ব্যক্তি প্রস্রাবের ছিটা হতে না বাচার কারণে কবরে আজাব হচ্ছিল,
যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডাল রোপন করলেন, তখন আজাব বন্ধ হয়ে যায়। আর দ্বিতীয় জন ছিল ছোগলখোর,
তাতেও ডাল রোপনের কারণে আজাব বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর নবী সাঃ বলেছেন, যতক্ষণ এই খেজুরের ডালটা তরতাজা থাকবে,
রাসুল সাঃ এর সুপারিশ
হতে পারে তাদের কবরের আজাব লাঘব হয়ে যাবে। এর প্রত্যুত্তরে আমরা বলব, এই দুই কবরে বিশেষ কারণবশত ডাল বসানোর উপর কিয়াস করে ফুল দেয়া,
চাদর দেয়া জায়েজ বলা আদৌ যুক্তিসম্মত নয়।প্রথমত এখানে আজাব লাঘব হওয়াটা মূলত নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর সুপারিশ ছিল।
আর ডালটা ছিল তার আলামত বা নিদর্শনস্বরূপ। তাইতো হযরত জাবির রাঃ এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে নবী সাঃ বলেছেন আমি দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম,
ওই দুটো কবরে আজাব হচ্ছিল।আমি আমার সুপারিশ দ্বারা এটা পছন্দ করলাম যে,এ ডাল যতদিন তরতাজা থাকবে ততদিন তাদের আযাব লাগব হোক।
এ সহিহ ও সঠিক হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, আযাব লাঘব হওয়ার মূল কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ।
গাছের ডাল শুধু আলামত স্বরুপ দেওয়া হয়েছিল। মৌলভী আহমদ ইয়ার খান এভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে ভুল করেছেন যে,কবরের আজাব লাঘব হয়
তরতাজা ডালের তাসবীহ পাঠের কারণে। শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ এর কারণে নয়। তিনি বলেন যদি শুধু দোয়ার মাধ্যমেই হত,
তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তাজা থাকার কথা বললেন?তাই আজও যদি আমরা ফুল কবরে রাখি তাহলেও আজাব কম হবে।
মৌলভী সাহেবের নিকট প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়,যে যদি ডালটা তাসবিহ পড়ার কারণে আজাব কম হয় তাহলে তরতাজার শর্ত কেন নবী সাঃ লাগালেন,
প্রত্যেকটি জিনিসই তো আল্লাহ তায়ালার তাসবিহ পাঠ করে চাই তা শুকনা হোক,বা তরতাজা হোক যেমন কোরআনে বলা হয়েছে,
পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে
পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছুই আল্লাহ তাআলার তাসবীহ পাঠ করে কিন্তু তারা তাসবীহ বুঝে না।