Breaking News
Home / ইসলাম ধর্ম / স্ত্রীর লাশ সামনে রেখে স্বামীর হৃদয় নিংড়ানো কথা

স্ত্রীর লাশ সামনে রেখে স্বামীর হৃদয় নিংড়ানো কথা

()

স্ত্রীর লাশ সামনে রেখে স্বামীর বক্তব্য

স্ত্রীর লাশ সামনে রেখে, স্বামীর কথাগুলো

 

মোহাম্মদপুরের একটা ছোট মসজিদে আসরের নামায শেষ পর পরই ইমাম সাহেব জানালেন একটা জানাজার নামাজ আছে। সবাই যেন একটু অপেক্ষা করি।

 

একটু ে পড়ে গেলাম। গাড়িটা খুব ভালো জায়গায় পার্ক করে আসিনি।

আশেপাশে কয়েকটা বখাটে টাইপ আড্ডা দিতে দেখে এসেছি।

সাইড মিরর দুইটা খুলে নিয়ে গেলে অনেকগুলো টাকা নেমে যাবে।

 

হাদিসে আবার জানাজার নামাজ পড়তে াহিত করা হয়েছে।

 

জানাজার নামাজ মানে নিজের জন্য একটা সেলফ রিমাইন্ডার। তাই হঠাৎ মনে হল জানাজাটা পরেই যাই, আল্লাহ ভরসা।

 

ইমাম সাহেব জানালেন, একজন মহিলা মারা গিয়েছেন। ভদ্রমহিলার স্বামী আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলবেন।

স্ত্রীর লাশ সামনে রেখে স্বামীর বক্তব্য

একজন সত্তরোর্ধ্ব বয়স্ক লোক। সাদা পাঞ্জাবি পরা, দাঁড়িগুলোও ধবধবে সাদা।

 

ভদ্র লোক শুরু করলেন……..

আসসালামু-আলাইকুম,

আপনারা হয়ত আমাকে চিনবেন না। আমি এলাকাতে নতুন এসেছি।

আমার স্ত্রী আজ সকালে ফজরের নামাজের পর আল্লাহর কাছে চলে গেছেন।

আরো পড়ুন আদর্শ পরিবার গঠনে স্বামী ও স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

আমরা একসাথে গত ৪৫ বছর ধরে করছি। একটা ছোট সরকারী চাকরী দিয়ে আমি সংসার জীবন শুরু করেছিলাম।

 

সারাজীবন চেষ্টা করেছি সৎ থাকার জন্য। আল্লাহর খেয়ে বলতে পারি জীবনে কোনদিন এক টাকা অসৎ ভাবে আয় করিনি।

 

সৎ থাকার কারণে আয়ও ছিল খুব সামান্য। আমাদের তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে ছিল।

 

গ্রামের বাড়িতে বাবা-মাকেও কিছু টাকা পাঠাতে হতো। কখনো কখনো মাস শেষ হওয়ার আগে আমার বেতনের টাকা ফুরিয়ে যেত।

 

আমার সহকর্মীদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে গরীব ছিলাম। কিন্তু আমার স্ত্রীর কারণে আমি এটা কখনোই উপলব্ধি করতে পারিনি।

 

উনি যে কিভাবে সবকিছু ম্যানেজ করতেন একমাত্র উনিই জানেন।

আমার সাধ্যের বাইরে জীবনে কখনো কোনদিন উনি কিছু দাবি করেননি।

 

জীবনে কখনো আমাকে এটা বলেন নি যে, আপনি আমাকে এটা দিলেন না, ওটা দিলেন না।

 

কখনো আমাকে আমার নিয়ে কষ্ট দিয়ে উনি কোনো কথা বলেননি। আজীবন ওনাকে শুধু সন্তুষ্টই দেখেছি।

 

আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার আগের শেষের ৪-৫ বছর আমার সাথেই থাকতেন।

 

আমার স্ত্রী আমার মা-বাবারও যথেষ্ট খেদমত করেছেন।

 

কখনো আমাকে এটা বলেন নি যে, আপনার মা-বাবার খেদমত করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।

 

সত্যি কথা বলতে পেনশনের টাকা পাওয়ার পর হজে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আমি উনাকে তেমন কিছুই দিতে পারিনি।

তারপরও উনি কোনদিন আমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেননি।

 

আমার স্ত্রী একজন নেককার মানুষ ছিলেন। উনি উত্তম ের অধিকারী ছিলেন। আত্মীয়তার হক রক্ষা করেছেন।

 

পরোপকারী ছিলেন, স্বামী-সন্তানদের হক আদায় করেছেন।

 

উনাকে আমি কখনো কোন নামায কাযা করতে দেখিনি, আজীবন পর্দা রক্ষা করে চলেছেন। উনি ধৈর্যশীল ছিলেন এবং অল্পে সন্তুষ্ট ছিলেন।

 

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে ভদ্রলোক একটু দম নেওয়ার জন্য থামলেন।

 

এরপর আবার বলতে শুরু করলেন, আমি আসলে আমার স্ত্রীর হয়ে আপনাদের কাছে মাফ চাওয়ার জন্য এখানে কথা বলছি না।

 

যে নারী ৪৫ বছর ধরে তার স্বামী-সন্তান এবং আত্মীয়দের হক রক্ষা করে চলেছেন তিনি অন্য কারো হক নষ্ট করতে পারেন না।

 

একজন জান্নাতি নারীর মধ্যে যা যা বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তার সবই আমার স্ত্রীর মাঝে ছিল। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসিব করবেন।

 

আমি নিজে জান্নাতে যেতে পারবো কিনা আমি জানি না। আপনারা শুধু এই দোয়া করবেন আমি যেন আমার স্ত্রীর সাথে জান্নাতে একত্রিত হতে পারি।

 

আর আপনারা সাক্ষী থাকেন আমি আমার স্ত্রীর উপর পুরোপুরি সন্তুষ্ট। আল্লাহ যেন উনাকে মাফ করে দেন।

 

পুরো মসজিদ ভর্তি মুসল্লী একসাথে বলে উঠল আমিন,আমিন, আমিন।

সাধারণত জানাজার নামাজের আগে মৃতের লোকজন সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের বক্তব্য দেন।

 

এই ভদ্রলোক টানা চার-পাঁচ মিনিট তার স্ত্রী সম্পর্কে বললেন।

 

কোন মুসল্লী এতোটুকু বিরক্তি প্রকাশ করলেন না। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো একজন জান্নাতি নারীর কথা শুনলেন।

 

হাদিসে এসেছে, একজন মুমিন-মুমিনার জীবনে তার রবের তরফ থেকে সর্বোত্তম রিযিক হচ্ছে একজন নেককার স্বামী এবং স্ত্রী।

আরো পড়ুন তারাই হলেন সৌভাগ্যবান পুরুষ

এই ভদ্রলোকের কথা থেকে যেন সরাসরি এই হাদীসের প্রমাণ পেলাম।

 

মসজিদ থেকে বের হলাম একটা অপূর্ব ভালো লাগা নিয়ে। সুখী মানুষদের কথা শোনার মধ্যেও একটা সুখ আছে।

 

চাচা আর চাচি অত্যন্ত সুখী মানুষ ছিলেন। এই সুখ স্রষ্টা সরাসরি তাদের অন্তরে ঢেলে দিয়েছিলেন ❤️©️

আরো পড়ুন স্বামী স্ত্রীর যদি মনোমালিন্য হয় তার সমাধান কিভাবে করবেন

About আবদুল্লাহ আফজাল

হাফিজ মাওঃ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আফজাল। ২০১২ সনে হিফজ সম্পন্ন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন২০১৬ সনে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন ২০২০ সনে। ঠিকানা: বালাগঞ্জ, সিলেট। মোবাইল নাম্বার: 9696521460 ইমেইল:hafijafjal601@gmail.com সকল আপডেট পেতে এবং ওয়েবসাইটে লিখা পাঠাতে ফেসবুক পেজ👉MD AFJALツ ফলো করুন।

Check Also

অধিক হারে ইস্তেগফারের ফজিলত

ইস্তেগফারের ফজিলত

হামদ ও সালাতের পর… রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যত ভালো কাজ শিক্ষা দিয়েছেন, তাতে …

Powered by

Hosted By ShareWebHost