(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
সৌভাগ্যবান স্বামী যারা
পৃথিবীতে সুখ-শান্তির অধ্যায়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে পারিবারিক অধ্যায়।
যেখানে স্বামী-স্ত্রী সন্তান নিয়ে একটি সংসার জীবনের অনেকটা সময় কাটাতে হয়।
সে অধ্যায়ের মধ্যে স্ত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেই স্বামী সৌভাগ্যবান হয় যার স্ত্রীর মধ্যে এই গুণগুলো থাকে।
এক.ধার্মিক / নেককার স্ত্রী
যার ঘরে ধার্মিক স্ত্রী থাকে সে ঘরে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হয়।
পরিবারকে একটি স্বর্গসুখের উদ্যান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন নেককার স্ত্রী।
ইহ ও পরলৌকিক সফলতা অর্জনে নেককার স্ত্রীর ভূমিকা অপরিসীম।
একজন সৎ ও নেক স্ত্রী স্বামীর জন্য অনেক বড় নেয়ামত।
আল্লাহ তা'আলা বলেন: আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে।
অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে।(আল বাকারা – ২২১)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ
তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী।
সুতরাং তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
( সহীহ বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৭/১৫, হাঃ ১৪৬৬, আহমাদ ৯৫২৬)
দুই.সতি স্ত্রী
সতী স্ত্রী স্বামীর জন্য পৃথিবীতে অতি মূল্যবান একটি সম্পদ।
যে তার সতীত্বকে একমাত্র একজন পুরুষের জন্য নিরাপদ ও হেফাজতে রেখেছেন সে হচ্ছে তার স্বামী।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-
দুনিয়ার সব জিনিসই ভোগ সামগ্রী আর সবচেয়ে উত্তম সামগ্রী হচ্ছে নেক চরিত্রের স্ত্রী- (মুসনাদে আহমাদ)।
তিন.আনুগত্য স্ত্রী
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যেই স্ত্রীর স্বামীকে নেতা হিসেবে মেনে তার আনুগত্য করবে।
সংসারের প্রতিটি কাজেই নেতৃত্ব দিবে স্বামী, আর স্ত্রী তার আনুগত্য করবে।
সব কাজের জন্য স্বামীর আনুগত্য করবে। শুধু ইসলামবিরোধী কাজের আনুগত্য করবেনা।
স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।'(বাকারা : ২২৭)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী।
কারণ আল্লাহ তাআলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন।
দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে।' (নিসা : ৩৪)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর আনুগত্যকে এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেন
— ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে,
সে,নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে।‘( আহমাদ : ১৫৭৩ )
চার.পর্দাশীল স্ত্রী
যে জিনিসের যত বেশি মূল্য সে জিনিস তত বেশি নিরাপদে রাখে।
নারী পৃথিবীতে স্বামীর জন্য মূল্যবান সম্পদ, তাই পর্দা করার জন্য আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল নির্দেশ দিয়েছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (তিরমিযী: ১১৭৩)
পাঁঁচ.বেশি সন্তানদানকারিনী স্ত্রী
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,তোমরা অধিক সন্তানদানকারী স্বামীভক্ত নারীদের বিয়ে কর।
কেননা কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের ( সংখ্যা ) নিয়ে নবীদের সামনে গর্ব করবো। ( মুসনাদ আহমাদ: ১২৬৩৪ )
ছয়.স্বামী তাকালেই খুশি করে দেন যে স্ত্রী
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- বিয়ের জন্য কোন্ ধরনের মেয়ে উত্তম?
জবাবে তিনি বলেছিলেন- যে স্ত্রীকে দেখলে সে তার স্বামীকে আনন্দ দেয়, তাকে যে কাজের আদেশ করা হয় তা সে যথাযথ পালন করে
এবং তার নিজের স্বামীর ধন মালের ব্যাপারে স্বামীর পছন্দের বিপরীত কোন কাজই করে না- (মুসনাদে আহমাদ)।
সাত.লজ্জাশীল স্ত্রী
ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লজ্জা মঙ্গলই বয়ে আনে।''
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, “লজ্জা মঙ্গলই সবটুকু” অথবা বলেছেন, ‘‘লজ্জার সবটুকু মঙ্গলই মঙ্গল”।
(সহীহুল বুখারী ৬১১৭, মুসলিম ৩৭, আবূ দাউদ ৪৭৯৬, আহমাদ ১৯৩১৬, ১৯৩২৯, ১৯৪০৪, ১৯৪৫৫, ১৯৪৭০, ১৯৪৯৭, ১৯৫০৬)
আট.আমানতকারী স্ত্রী
প্রতিটা স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য তার স্বামীর সম্পদের আমানত রক্ষা করা
এবং স্বামীর গোপনীয় বিষয় কে আমানত হিসেবে রাখা, যার তার কাছে প্রকাশ না করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:এবং যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে(আল মাআরিজ – ৩২)
তিনি আরো বলেন:নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও।(আন নিসা – ৫৮)
নয়.সত্যবাদী স্ত্রী
সত্যবাদী মানুষকে আল্লাহ দুনিয়াতে সবসময় সম্মানিত করে এবং আখেরাতে করবেন।দুনিয়ার মানুষের কাছেও তারা প্রিয় ব্যক্তি হয়ে থাকে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:এটা এজন্য যাতে আল্লাহ, সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন;(আল আহ্যাব – ২৪)
দশ.স্বামীর জন্য স্ত্রীর ভালবাসা
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যত উত্তম ও মধুর হবে, দাম্পত্য জীবনে সুখ ও শান্তি তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।
কুরআন এবং হাদিসের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, উত্তম স্ত্রী হলো তারা,
যারা স্বামীকে যথাযথ সম্মান করে কারণ পরস্পরের প্রতি যথাযথ সম্মানই দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের উপায়।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কতটা গাঢ় তার প্রমাণ কুরআনে কারিমে আল্লাহ তা'আলা তা ঘোষণা করেন-
‘তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোশাকস্বরূপ।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)
এগারো.স্বামীর সম্পদ ও সন্তানের হেফাজত করা
স্ত্রী স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করবে। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা।
যা পূরণ করা স্বামীর জন্য কস্টকর হবে। আর সন্তানদের কে আদব ও ইসলামিক শিক্ষা দিবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার।
এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।' (বুখারী: ২৫৪৬)
আরো পড়ুন 👉👉 স্বামী স্ত্রীর যদি মনোমালিন্য হয় তার সমাধান কিভাবে করবেন, যে বিষয়গুলো আপনার দাম্পত্যজীবনকে অশান্তিময় করে তুলবে