Breaking News
Home / স্বামী/স্ত্রী / কোরআন ও হাদিসের আলোকে নেককার রমণীর ৭ গুন

কোরআন ও হাদিসের আলোকে নেককার রমণীর ৭ গুন

()

নেককার রমনীর ৭গুন

 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজ) পুরুষ নারীদের অভিভাবক, কারণ আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন

 

এবং এ কারণে যে, পুরুষগণ নিজেদের অর্থসম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে।

 

পুরুষের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হিফাজতে (তার অধিকারসমূহ) হেফাযত করে।-সূরা নিসা : ৩৪

 

উক্ত আয়াতের ভিত্তিতে কুরআনের অন্যান্য আয়াত ও হাদীসের আলোকে সংক্ষেপে নেককার স্ত্রীর কিছু গুণাবলি পেশ করছি।

 

প্রথম গুন

উক্ত আয়াতে নেককার নারীর প্রথম গুণ বলা হয়েছে, সতী-সাধ্বী ও দ্বীনদার হওয়া।

 

“সালিহাত” শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. বলেছেন, দ্বীনের সঠিক অনুসারিনী, সৎকর্মশীল নারীগণ।

 

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পার্থিব জগতটাই হল ক্ষণিক উপভোগের বস্ত্ত।

 

আর পার্থিব জগতের সর্বোত্তম সম্পদ (উপভোগের বস্ত্ত) সাধ্বী নারী।

 

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৬৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৬৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪০৩১

 

হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

 

কোনো মুমিনের জন্য আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের পর নেককার স্ত্রীর চেয়ে কল্যাণকর কিছু নেই।

 

কারণ স্বামী তাকে আদেশ করলে সে আনুগত্য করে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে সে (স্বামী) মুগ্ধ হয়।

 

তাকে নিয়ে শপথ করলে সে তা (শপথকৃত কর্ম) পূরণ করে।

 

স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে (অন্যায়-অপকর্ম থেকে) এবং স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করে।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৫৭

 

 

হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সোনা-রূপা িত আয়াত নাযিল হলে,

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ!

 

আমরা কোন ধরনের সম্পদ সঞ্চয় করব?

 

তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন সঞ্চয় করে কৃতজ্ঞ অন্তর, যিকিরকারী মুখ এবং পরকালীন কর্মকান্ডে সহায়তাকারিনী মুমিনা নারী।

 

 

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩১০১; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩০৯৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৫৬

 

 

দ্বিতীয় গুন

 

স্বামীর অনুগত ও স্ত হওয়াকে উক্ত আয়াতে নেককার নারীর দ্বিতীয় গুণ বলা হয়েছে।

 

“কানিতাত” শব্দের ব্যাখ্যায় হযরত কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা ও স্বামীর অনুগত নারীগণ।

 

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

 

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে,

 

 

রমযান মাসের রোযা রাখবে, নিজ লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে,

 

তখন তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ কর।

 

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬৬১; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪১৬৩

 

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, নারীদের মধ্যে কোন নারী উত্তম।

 

তিনি বললেন, স্বামী যাকে দেখলে আনন্দবোধ করে, যাকে আদেশ করলে আনুগত্য করে,

 

স্ত্রীর বিষয়ে এবং সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যা অপছন্দ করে তা থেকে বিরত থাকে।

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৪২১; সুনানে নাসায়ী, কুবরা, হাদীস : ৮৯৬১

 

তৃতীয়গুন

উক্ত আয়াতে নেককার নারীর তৃতীয় গুণ বলা হয়েছে,

 

স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার ধন-সম্পদ হেফাযত করবে এবং নিজের সতীত্বের হেফাযত করবে।

 

আয়াতের এই অংশের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী (রহঃ) বলেন,

 

নারীগণ তাদের স্বামীর অবর্তমানে নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাযত করবে এবং এক্ষেত্রে কোনো ধরনের খেয়ানত করবে না।

 

স্বামীর ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করবে। তাদের উপর এ দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকেই আরোপিত।

 

এ সম্পর্কিত হাদীস শরীফের বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসসমূহে উল্লেখ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করছি।

 

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 

উত্তম স্ত্রী সে, যার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে তোমাকে আনন্দিত করে, আদেশ করলে আনুগত্য করে,

 

তুমি দূরে থাকলে তার নিজের ব্যাপারে এবং তোমার সম্পদের ব্যাপারে তোমার অধিকার রক্ষা করে।

 

তারপর তিনি কুরআনের উক্ত আয়াত (পুরুষ নারীদের অভিভাবক) তেলাওয়াত করেন।

 

 

-তাফসীরে তবারী, হাদীস : ৯৩২৯; মুসনাদে ত্বয়ালিসী, হাদীস : ২৩২৫

 

চতুর্থ গুন

পবিত্র ও বান হওয়া। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,

 

(তরজমা) পবিত্র নারীগন পবিত্র পুরুষদের উপযুক্ত এবং পবিত্র পুরুষগণ পবিত্র নারীদের উপযুক্ত।

 

এখানে মুমিন নর-নারীর জন্য মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে যে,

 

আল্লাহ তাআলা মানবচরিত্রে স্বাভাবিকভাবে পরস্পরের মাঝে যোগসূত্র রেখেছেন।

 

পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের প্রতি হয়ে থাকে।

 

অনুরূপভাবে পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের প্রতি হয়ে থাকে।

 

স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ আগ্রহ অনুযায়ী সঙ্গী খোঁজ করে নেয় এবংপ্রাকৃতিক বিধান অনুযায়ী সেটাই বাস্তবরূপ লাভ করে।

 

এ জন্য জীবনসঙ্গী ও সঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিতে জোর তাকিদ দিয়েছে।

 

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

 

তিন গুণের যেকোনো একটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয় :

 

ধন-সম্পদের কারণে, রূপ-সৌন্দর্যের কারণে ও দ্বীনদারির কারণে। তুমি দ্বীনদার ও চরিত্রবানকেই গ্রহণ কর।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৭৪৩৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১৭৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪০৩৪

 

পঞ্চমগুন

বিবাহের মাধ্যমে চারিত্রিক পবিত্রতা সম্পন্ন হওয়া, গোপনে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে লিপ্ত না হওয়া।

 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চারিত্রিক পবিত্রতাসম্পন্ন হবে,

 

ব্যভিচারিনী হবে না এবং গোপনে কোনো অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারিনী হবে না।-সূরা নিসা : ২৫

 

 

 

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আববাস রা. বলেন, চারিত্রিক নিষ্কলুষতার অধিকারিনী নারীগণ,

 

যারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ব্যভিচারিনী হবে না এবং সঙ্গোপনে অবৈধ বন্ধু গ্রহণকারিনী হবে না।

 

তিনি বলেন, জাহেলী যুগে লোকেরা প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হারাম মনে করত,

 

কিন্তু গোপনে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হালাল মনে করত। এই প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন,

 

তোমরা প্রকাশ্যে হোক, অপ্রকাশ্যে হোক কোনো রকম অশ্লীল কাজের নিকটেও যেও না।

 

-সূরা আনআম : ১৫১; তাফসীরে তবারী, হাদীস : ৯০৯৫, ৯০৭৬, ৪/২২

 

বর্তমান সমাজে অবৈধ সম্পর্কের ব্যাধি মহামারিতে পরিণত হয়েছে।

পর্দাহীনতা, সহ এবং অশ্লীল ফিল্ম ও ছবির বদৌলতে একদিকে অবিবাহিত উঠতি নর-নারী

 

তথাকথিত প্রেমের নামে ভয়ঙ্কররূপে প্রকাশ্য অশ্লীলতায় মেতে উঠছে, অন্যদিকে পরকীয়া প্রেমের কারণে ঘর ভাঙছে অসংখ্য নারীর।

 

তাই মুসলমান নর-নারীরা যতক্ষণ আল্লাহর ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলবে ততক্ষণপারিবারিক শান্তি ও দাম্পত্য জীবনের সুখ খুঁজে পাবে না।

 

ষষ্টগুন

দ্বীনদার ও চরিত্রবান হওয়ার সাথে সাথে সরলমতী ও সাদাদিলের অধিকারিনী হওয়া।

 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) চরিত্রবান, সরলমতী ঈমানদার নারীগণ।-সূরা নূর : ২৩

 

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী (রহঃ) বলেন,

 

যারা অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অসচেতন (বহু দূরত্বে অবস্থানকারী)।

 

আল্লামা আলুসী (রহঃ) বলেন, পবিত্রতার সার্বিক উপা নিয়ে বেড়ে উঠা এবং উত্তম চরিত্রের উপর লালিত-পালিত হওয়ার কারণে অন্য কোনো

 

চিন্তা ও মানসিকতা যাদের কল্পনায় আসে না। এই গুণ পূর্ণ নিষ্কলুষতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার প্রমাণ বহন করে,

 

যা শুধু মুহাসানাত (সতী নারী) শব্দের মধ্যে পাওয়া যায় না।

-রূহুল মাআনী ৬/১২৬

 

অন্য কিতাবে বলা হয়েছে, আত্মার ব্যাধিমুক্ত, স্বচ্ছ অন্তরের নারীগণ,

 

যাদের মধ্যে প্রবঞ্চনামূলক চাতুর্য নেই। যাদের স্বভাব-প্রকৃতিতে অসৎ কোনো মনোবাসনা নেই।

 

শৈশবকাল থেকেই এই স্বভাব-সুচরিত্র গড়ে উঠতে সহায়ক হয়।-গারায়েবুল কুরআন ৫/১৭৩

 

আল্লাহ তাআলা এ ধরনের গুণের অধিকারিনী নারীকে ঈমানদার পরিচয়ে ভূষিত করেছেন।

 

এই বৈশিষ্ট্যের নারীদের বাইরের জগত সম্পর্কে ধারণা থাকে না, অবৈধ সম্পর্কের কল্পনাও তাদের অন্তরে থাকে না।

 

তারা প্রবঞ্চনা কি জিনিস বুঝেই না। ছল-ছাতুরি জানে না। প্রতারণা ও মিথ্যা বলে না। পর্দাহীনতা ও ফ্যাশন সম্পর্কে চিন্তাও করে না।

 

ে তাদের চরিত্র কলুষিত হওয়া ও দ্বীনদারী বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না।

 

সপ্তমগুন

গৃহে অবস্থান করা। অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো।

 

(পর পুরুষকে) সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না। যেমন প্রাচীন জাহেলী যুগে প্রদর্শন করা হত।-সূরা আহযাব : ৩৩

 

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন,

 

তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থানকে অবধারিত করে নাও। প্রয়োজন ব্যতীত ঘর হতে বের হয়ো না।

 

এ আয়াতে স্পষ্ট করে মূলনীতি বলা হয়েছে যে, নারীর আসল কাজ তার গৃহে অবস্থান।

 

ঘরোয়া কর্তব্য পালন করা এবং খান্দানকে গড়ে তোলাই তার মূল দায়িত্ব।

 

যেসব তৎপরতা এ দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটায় তা নারীজীবনের মৌল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।

 

এবং তা দ্বারা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর অর্থ এমন নয় যে, ঘর থেকে বের হওয়া তার জন্য একদম জায়েয নয়;

 

বরং প্রয়োজনে সে পর্দার সাথে বাইরে যেতে পারবে। তবে বাইরে গমন ও অবস্থান শুধু প্রয়োজনবশত ও প্রয়োজন পরিমাণ হতে হবে।

আরো পড়ুন  বিবাহের পূর্বে যে সাতটি প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি, কিভাবে চুরি করবেন প্রিয়তমের হৃদয়, সন্তানের প্রতি আদর্শ বাবার উপদেশ

About আবদুল্লাহ আফজাল

হাফিজ মাওঃ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আফজাল। ২০১২ সনে হিফজ সম্পন্ন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন২০১৬ সনে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন ২০২০ সনে। ঠিকানা: বালাগঞ্জ, সিলেট। মোবাইল নাম্বার: 9696521460 ইমেইল:hafijafjal601@gmail.com সকল আপডেট পেতে এবং ওয়েবসাইটে লিখা পাঠাতে ফেসবুক পেজ👉MD AFJALツ ফলো করুন।

Check Also

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বিষয়ে কিছু হাদিস

স্বামী স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক বিষয়ে কিছু হাদিস

(মুসলিমবিডি২৪ডটকম) স্ত্রী গ্লাসের যে স্থানে ঠোঁট রেখে পানি পান করে সেই স্থানে ঠোঁট রেখে পানি …

Powered by

Hosted By ShareWebHost