(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
(এক)
ট্রেন, বাস নৌকা, জাহাজ ইত্যাদিতে নামাজ পড়ার সময় তিনটি বিষয় খুবই প্রয়োজনীয়:
(১) দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া। ট্রেন, বাস, নৌকা, লঞ্চ, ষ্টীমার কিংবা জাহাজ ইত্যাদিতে
বিনা উজরে বসে বসে নামাজ পড়লে তা আদায় হবে না।
কেননা, নামাজে ক্বিয়াম অর্থাৎ, দাঁড়ানো ফরজ। গ্রহণযোগ্য কোন উজর ব্যতীত বসে বসে পড়লে ফরজ নামাজ আদায় হবে না।
দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে হঠাৎ পড়ে যাবার আশংকা যদি থাকে,
তবে কোন কিছুর উপর ঠেক লাগিয়ে কিংবা হাত দ্বারা কোন কিছু ধরে হলেও দাঁড়াতে হবে।
কেননা, দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বাধা সুন্নাত; কিন্তু দাঁড়ানো ফরজ।
তাই ফরজ আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজন সাক্ষেপ সুন্নাত ত্যাগ করে হলেও ফরজ আদায় করতে হবে।
অর্থাৎ, প্রয়োজন হলে হাত বাধা ছেড়ে দিয়েও দাঁড়াতে হবে।
(২) ক্বিবলাহমূখী হয়ে নামাজ আদায় করা।
ক্বিবলাহমূখী হয়ে নামাজ আরম্ভ করার পর বাস, কিংবা নৌকা, লঞ্চ ইত্যাদি অন্য দিকে ফিরে গেলে
মুসল্লীকেও ফিরতে হবে এবং ক্বিবলাহমূখী থাকতে হবে।
(৩) সঠিকভাবে রুকু, সিজদাহ করা। তবে হ্যা, শারীরিক দুর্বলতা কিংবা অসুস্থতার দরুন চলন্ত ট্রেন কিংবা নৌকা,
লঞ্চ ইত্যাদিতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা যদি কোন ক্রমেই সম্ভব পর না হয় তাহলে তার জন্য বসে বসে নামাজ পড়া অবৈধ নয়।
কেননা, শারীরিক দুর্বলতা ও অসুস্থতা শরীয়তের দৃষ্টিতে এক গ্রহণযোগ্য উজর।
আর এই উজরের কারণে তো বাড়ীতে কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায়ও বসে বসে নামাজ পড়া বৈধ।
কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, অনেক লোককে এ ধরণের উজর ছাড়াই ট্রেন, নৌকা, লঞ্চ, বাস ইত্যাদিতে বসে বসে নামাজ পড়তে দেখা যায়।
জেনে রাখা দরকার, তাদের এ নামাজ আদায় হবে না। সঠিক নিয়মে পুনরায় তা পড়ে নিতে হবে।
উপরন্তু, ট্রেন, বাস, নৌকা, লঞ্চ ইত্যাদিতে যদি এমন ভিড় হয় যে, ক্বিবলাহ রুখ হয়ে নামাজ শুরু করার পর তা অন্য দিকে ফিরে গেলে,
মুসল্লীর পক্ষে ক্বিবলাহর দিকে ফিরা আদৌ সম্ভব নয় অথবা ভিড়ের দরুন রুকু, সিজদাহ করার মত কোন সুযোগ নেই,
অপর দিকে নীচে নেমে নামাজ আদায় করারও কোন উপায় নেই,
তাহলে এই সংকটময় মূহুর্তে ক্বিবলাহমূখী হওয়া এবং দাঁড়ানো ছাড়াই বসে বসে সম্ভাব্য পন্থায় নামাজ পড়ে নিবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী-২/৯৫, ১০১, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম-২/১৪৬)
(দুই)
যানবাহনে যে পরিমাণ আসবাব-পত্র ফ্রি নেয়ার অনুমতি রয়েছে বিনা ভাড়ায় এর অধিক নেয়া জায়েয নয়।
(তিন)
ঘুষ দিয়ে আসবাব-পত্রের ওজন কম লেখানো জায়েয নয়। এতে এক সাথে দুইটি গোনাহ হবে। একটি ঘুষ দেয়ার দরুন, অপরটি বিনা ভাড়ায় মাল নেয়ার দরুন।
(চার)
যদি কোন দিন বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন কিংবা ভাড়া ছাড়াই অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে থাকেন
আর এখন লজ্জিত-অনুতপ্ত হয়ে তাদের ঐ হক্ব আদায়ের কথা ভাবেন,
তাহলে সহজ পন্থা হচ্ছে এই যে- আপনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেটুকু ক্ষতি করেছেন তাদের কাছ থেকে এর সমমূল্যের টিকেট ক্রয় করত: তা ছিড়ে ফেলে দিন।
তবেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হক্ব তাদের নিকট পৌছে যাবে।
আর তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করত: তাদের প্রাপ্য তাদের কাছে পৌঁছাবেন।
(পাচ)
নৌকা, লঞ্চ, ষ্টীমার কিংবা জাহাজ ইত্যাদি তীরে বাধা থাকা অবস্থায় যদি শান্ত থাকে,
নড়াচড়া না করে এবং যদি এতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা সম্ভবপর হয়, তাহলে নৌকা, লঞ্চ ইত্যাদিতে নামাজ পড়া জায়েয আছে।
তবে যথাসম্ভব মাটিতে নামাজ পড়া উত্তম।
(ছয়)
নৌকা, জাহাজ ইত্যাদি তীরে বাধা থাকা অবস্থায় যদি শান্ত না থাকে, বরং নড়াচড়া করতে থাকে আর বাইরে অন্যত্র কোথাও গিয়ে
নামাজ আদায় করা যদি অসম্ভব না হয়, তাহলে নৌকা ইত্যাদিতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা সম্ভবপর হলেও এতে নামাজ পড়া দুরস্ত হবে না।
বরং নৌকা জাহাজ ইত্যাদি থেকে নেমে বাইরে গিয়েই নামাজ আদায় করতে হবে। অন্যথায় নামাজ হবে না।
(সাত)
নৌকা, জাহাজ ইত্যাদি চলা অবস্থায় ঝড়-তুফান, ঢেউ ইত্যাদি দরুন যদি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া সম্ভব না হয়, তবে বসে বসে নামাজ আদায় করা অবৈধ নয়।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী-১/১৪৩-১৪৪, জাদীদ মাসাঈল-১০)