(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
কোরআনুল কারীম আল্লাহ রাব্বুলের ইজ্জতের কালাম, যা আল্লাহর দরবারে থেকে অবতীর্ণ হওয়া শব্দ সমূহের সমষ্টির নাম।
সুতরাং কোরআন তিলাওয়াতের জন্য ঐ নিয়মের অনুসরণ করা উচিৎ, যা কোরআন ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের উপযোগী হয়।
এই জন্য এ স্থানে গুরুত্বপূর্ণ কোরআন তিলাওয়াতের আদব উল্লেখ করা হল। প্রথমে মিসওয়াকের সাথে অজু করা,
তারপর কোন পবিত্র স্থানে বসে কেবলার দিকে মুখ করে নিজেকে ছোট মনে করে বিনয়ের সাথে বসতে হবে, যেমন যেন আল্লাহর সামনে বসেছি, তিনি আমার তিলাওয়াত শুনছেন।
তিলাওয়াতের সময় একাগ্রচিত্তে, সওয়াবের নিয়্যাতে তিলাওয়াত করতে হবে এবং প্রত্যেক হরফের তিলাওয়াতে ১০ নেকী পাওয়ার এক্বীন করা।
তিলাওয়াতের শুরুতে “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজিম” অতঃপর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পড়া।
প্রত্যেকটা আয়াত ধীরে ধীরে এবং বিশুদ্ধরূপে পড়া। যখন মানুষের অধিকার, আল্লাহর ওয়াদা ও আল্লাহর রহমতের আয়াত আসবে,
তখন রূহের আনন্দের সাথে আল্লাহর নিকট দোয়া করা এবং নিজের জন্য আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
এরপর যখন আল্লাহর ধমকি-ওয়ায়িদ এবং আজাবের আয়াত আসবে, তখন আল্লাহর কাছে তা থেকে আশ্রয় চাওয়া এবং যখন আল্লাহর পবিত্রতা ও বড়ত্বের আয়াত আসবে,
তখন সুবহানআল্লাহ পড়া। কোরআন তিলাওয়াতের সময় বিনয়াবনতা অবলম্বন করা এবং কোরআন খতম করতে তাড়াহুড়া না করা দরকার।
গভীরভাবে চিন্তা ফিকির করে ও বিশুদ্ধরূপে কোরআন পড়া কোরআনের আদব। তাড়াহুড়া করে কোরআন পড়া শরীয়ত পরিপন্থী।
সুতরাং বর্তমান যে রেওয়াজ চালু হয়েছে, একদিনে পুরো কোরআন খতম করা ও বেশী তাড়াতাড়ি,
কোরআন পড়াকে বুজুর্গী ও সফলতা মনে করা সবই উদাসীনতা ও স্বল্পজ্ঞানীদের কাজ।
যেমন কবি বলেছেন:
“অনেক বুজুর্গলোক কোরআন বেশী পড়ে। এই বেশী কোরআন পড়াটা তাদের কারামত। তাই কেউ যেন কোরআন বেশী পড়ার বিষয়ে ঐ বুজুর্গদের অনুসরণ না করে।
মোটকথা: গভীরভাবে চিন্তা করে একাগ্রতার সাথে বিশুদ্ধরূপে যতটুকু কোরআন তিলাওয়াত করবে ততটুকু কোরআন তিলাওয়াতকে গণিমত মনে করা।
সাধারণত: যে স্থানে লোকজন অন্যকোনো কর্মে লিপ্ত আছে ঐ স্থানে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিৎ নয়।
যদি তিলাওয়াতের জন্য ঐ জায়গা ব্যতীত অন্যকোন স্থান না পাওয়া যায়, তখন ঐ স্থানে নিরবে তিলাওয়াত করবে।
তবে যদি মানুষ তিলাওয়াত শুনতে আগ্রহী হয় এবং সমস্ত লোক নিশ্চুপ হয়ে যায় তখন কোরআন উচ্চস্বরে পড়া উত্তম।
কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে এবং যে কান লাগিয়ে শুনে উভয় ব্যক্তির নেকী সমান সমান হবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে কোরআন দেখে পড়াকে মুখস্ত পড়ার থেকে উত্তম বলা হয়েছে। কেননা দেখে পড়ার মধ্যে বাহ্যত চোখ ও অন্যান্য অঙ্গ ইবাদাতে অংশীদার হয়।
এছাড়া দেখে পড়ার দ্বারা একাগ্রতাও অনেকাংশ বেশী হয়।
সর্বপ্রথম কালামুল্লাহর আজমত (শ্রেষ্ঠত্ব) দিলের মধ্যে রেখে কোরআনকে রেহাল বা অন্য কোন উচু জিনিসের উপর রাখতে হবে যাতে কোরআনের এহতেরাম (আদব) দৃশ্যমান হয়।
কোরআন তিলাওয়াতের সময় দুনিয়াবি কথোপকথন, খাওয়া-দাওয়া এবং অন্য সকল কর্ম থেকে বিরত থাকা।
যদি কোন কাজকর্ম সামনে এসে যায়, তখন কোরআন বন্ধ করে প্রয়োজন মিটাবে। অত:পর পুনরায় “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম”
এবং “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে তিলাওয়াত শুরু করবে। খুব খিয়াল করে কোরআন পাঠ করবে এবং ভুল পড়া থেকে বিরত থাকবে।
বিশুদ্ধরূপে মাখরাজ ও সিফাত আদায় করে স্বাভাবিকভাবে পড়তে হবে তথা ভুল পদ্ধতিতে কণ্ঠস্বর বানাতে নিষেধ করা হয়েছে।
তিলাওয়াতের সময় কোন ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করবে না। হ্যা, যদি বুজুর্গ উস্তাদ বা পিতা-মাতা হয়, তখন তাদের সম্মানার্থে দণ্ডায়মান হওয়া জায়েজ আছে।
যদি কোন ব্যক্তি কোরআন খতম করার সময় তার নিকটবর্তী লোক ও বন্ধুদেরকে নিয়ে দোয়ার এন্তেজাম করে, তাহলে এটা জায়েজ আছে।
কারণ ঐ দোয়া কবুল হয়। কোরআন খতম করার পরে পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়ে সূরা বাকারার “মুফলিহুন” পর্যন্ত পড়া উত্তম।
হেলান দেওয়া বা শায়িত অবস্থায় কোরআন পড়া যদিও জায়েজ কিন্তু ভদ্রভাবে বসে কোরআন পড়া উত্তম।
অনুরূপভাবে রাস্তায় কোরআন পড়া জায়েজ আছে। যদি জঙ্গল হয় তাহলে উচ্চস্বরে পড়া জায়েজ আছে। অন্যথায় কোরআন আস্তে আস্তে পড়া উত্তম।
অপবিত্র জায়গায় কোরআন পড়া মাকরূহ। যেমন- বাথরুম, কসাইখানা ইত্যাদি। কোরআনকে ছোট ছোট খন্ড করলে কোরআনের এহতেরাম কমে যায়।
হ্যা, যদি প্রয়োজন হয় (যেমন ছোট ছোট ছেলেদের পড়ার জন্য) জায়েজ হবে। কোরআনকে সিপাহীদের কাছে নিয়ে যাবেনা, যে সিপাহীদের নিকট কোরআন নিরাপদ নয়।
অনুরূপ কোরআনকে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যাবে না।
কেননা, কোরআন যদি যুদ্ধের ময়দানে কাফেরদের নিকট নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে কাফেররা কোরআনকে বেএহতেরামী করতে পারে।
প্রত্যেক মুসলমানের উপর কোরআনের আয়াত মুখস্ত রাখা এতটুকু ফরজে আইন, যতটুকু দ্বারা নামাজ হয়ে যাবে।
এছাড়া সমস্ত কোরআন মুখস্ত করা ফরজে কিফায়াহ।
যদি কোন মুসলমান ব্যক্তি কোরআন মুখস্ত রাখে, তাহলে সমস্ত মুসলমানের পক্ষ থেকে কোরআন মুখস্ত করার জিম্মাদারি আদায় হয়ে যাবে।
ফকীহানে ইসলামরা লিখেছেন, সূরা ফাতেহা ও অন্য এক সূরা মুখস্ত করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব।
সমস্ত কোরআন মুখস্ত করা ও কোরআনের হুকুম আহকাম শিক্ষা করা নফল নামাজ থেকে উত্তম।
কোরআনের দিকে পা প্রসারিত করা মাকরূহ নয় যদি পায়ের সামনে কোরআন না থাকে বরং তাকের উপর থাকে।
সফরে কোরআন হেফাজতের জন্য ব্যাগের ভিতর রেখে তার উপর আরোহণ করতে পারবে অথবা বালিশের নিচে রেখে তার উপর মাথা রেখে নিদ্রা যেতে পারবে।
এমন করার দ্বারা কোন দোষ নেই। যে ঘর বা কক্ষে কোরআন রাখা হয় ঐ ঘরে স্ত্রী সহবাস করলে কোন সমস্যা হয় না।
আল্লাহ তায়ালা আমরা সবাইকে উপরোক্ত লিখার উপর আমল করার তাওফিক দান করুক, আমিন।
(সূত্র: কোরআনের মহিমা- ১৭,১৮,১৯,২০)