(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, নবী কারীম (সা.) এক ব্যক্তিকে “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ” পড়তে শুনে বললেন, অবধারিত হয়ে গেছে।
আমি বললাম, হুজুর! কি অবধারিত হয়ে গেছে? তিনি বললেন, বেহেশত।
(মালেক, তিরমিযী ও নাসাঈ)
ব্যাখ্যা:-
জান্নাত ওয়াজিব হয় শুধু আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানির কারণে এবং নবীর ওয়াদার কারণে। আল্লাহ নেক বান্দা এবং অনুগত বান্দাদের উপর।
হযরত আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) একদা বললেন, তোমাদের কেউ কী প্রতি রাতে এক তৃতীয়াংশ কোরআন পড়তে অক্ষম।
সাহাবীগণ উত্তর করলেন, হুজুর! কি করে প্রতি রাতে এক তৃতীয়াংশ কোরআন পড়বে? তিনি বললেন, সূরা “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ” কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।
(মুসলিম, কিন্তু বুখারী আবু সাঈদ হতে)
ব্যাখ্যা:-
সূরায়ে ইখলাস কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। এই বাক্যের উদ্দেশ্য সমপর্কে কেউ বলেন, কোরআনে প্রধানত: তিনটি বিষয় রয়েছে,
এক. আহকাম অর্থাৎ আদেশ-নিষেধ বা বিধানাবলী। দুই. ঘটনাবলী এবং তিন. তাওহীদ। আর এই সূরাতে তাওহীদের বিবরণ রয়েছে।
সুতরাং এই সূরাটি কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। অপর কারো মতে অন্য কারণে এটি এক তৃতীয়াংশের সমান।
হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একবার নবী কারীম (সা.) এক ব্যক্তিকে এক সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন।
সে তার সঙ্গীদের নামাজ পড়াতো এবং সূরায়ে ইখলাস দ্বারা ক্বেরাত শেষ করত। যখন তারা মদিনায় ফিরলেন, নবী কারীম (সা.) এর নিকট ঘটনা উল্লেখ করলেন।
তিনি বললেন- তাকে জিজ্ঞাসা কর। সে কী কারণে এরূপ করে? তারা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- সে বললো, কেননা সূরা ইখলাসে আল্লাহর গুণাবলী রয়েছে।
আর আমি আল্লাহর গুণাবলী পাঠ করতে ভালবাসি। তখন নবী কারীম (সা.) বললেন- তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাকে ভালবাসেন।
(মোত্তা:)
ব্যাখ্যা:-
হাদীসের মধ্যে (সে সূরায়ে ইখলাস দ্বারা ক্বেরাত শেষ করত) দ্বারা উদ্দেশ্য, সে প্রত্যেক নামাজের শেষ রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা ইখলাস মিলিয়ে পড়ত।
কিন্তু ইবনে হজর আসক্বালানী (রহ.) এর বর্ণনা মতে ঐ ব্যক্তি প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা ইখলাস মিলিয়ে পড়ত।
অথবা সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর পরে সূরা ইখলাস মিলাতো। এই বিষয়ে প্রথম রায়টাই উত্তম।
কেননা, প্রথম রায়ে সমস্ত ধর্মজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের নিকটে নামাজ মাকরূহ ছাড়া আদায় হবে। কিন্তু দ্বিতীয় রায় তার বিপরীত।
হযরত আনাস (রা.) বলেন, একদা এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! আমি এই সূরা ইখলাসকে ভালবাসি।
হুজুর বললেন, তোমার উহাকে ভালবাসা তোমাকে বেহেশতে পৌছে দিবে।
(তিরমিযী, আর বুখারী ইহার সমার্থ একটি হাদীস বর্ণনা করেছে)
সূরা ইখলাস এর প্রভাব
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব মুরসালরূপে নবী কারীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, যে তিনি বলেছেন: যে দশবার “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ” পড়বে,
তার জন্য বেহেশতে একটি বালাখানা তৈরি করা হবে। যে বিশবার পড়বে তার জন্য বেহেশতে দুইটি বালাখানা তৈরি করা হবে।
আর যে ত্রিশবার পড়বে তার জন্য বেহেশতে তিনটি বালাখানা তৈরি করা হবে। এ কথা শুনে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন খোদার কসম ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)!
তবে তো আমরা বহু বালাখানা লাভ করব। হুজুর (সা.) বললেন, আল্লাহর রহমত এটা অপেক্ষাও অধিক প্রশস্ত।
(দারেমী)
ব্যাখ্যা:-
হযরত উমর (রা.) এ জন্য বিস্ময় প্রকাশ করেননি যে, আল্লাহ এত বেহেশত কোথা হতে দেবেন।
বরং এজন্য বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন যে, আল্লাহ আমাদের এত অল্প কাজে এত অধিক পরিমাণ সওয়াব দিবেন!
হুজুর (সা.) বললেন, তোমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত ইহা অপেক্ষাও অধিক।
প্রতিদিন দুইশতবার সূরা ইখলাস পড়ার হাদীস
হযরত আনাস (রা.) নবী কারীম (সা.) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন দুইশত বার সূরা ইখলাস পড়বে।
তার পঞ্চাশ বছরের গোনাহ মুছে দেওয়া হবে, যদি তার উপর ঋণের বোঝা না থাকে।
(তিরমিযী ও দারেমী। কিন্তু দারেমীর বর্ণনায় দুইশত বারের স্থলে পঞ্চাশ বারের কথা রয়েছে এবং তিনি ঋণের কথা উল্লেখ করেননি।)
ব্যাখ্যা:-
(যদি তার উপর ঋণের বোঝা না থাকে) উহার দুইটা ব্যাখ্যা রয়েছে, প্রথমত: ঋণের গোনাহ মাফ করা হবে না।
দ্বিতীয়ত: ঋণ আদায় না করার কারণে অন্য গোনাহ গোনাহ মাফ করা হবে না।
(সূত্র: কোরআনের মহিমা-১২১,১২২,১২৩,১২৪)