হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার পিতা,সন্তান ও যাবতীয় লোকজন থেকে,
আমাকে অধিক ভালবাসতে না পারবে সে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না।”
(বুখারী, মুসলিম)
ব্যাখ্যা
একজন ঈমানদার ব্যক্তির পক্ষে রাসূলের প্রতি সাধারণভাবে ঈমান আনাই যথেষ্ট হবে না।
বরং প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার জন্য রাসূলকে নিজের পিতা-মাতা, সন্তান -সন্ততি এবং সকল প্রিয়জন হতে অধিক মহব্বত করতে হবে।
মহব্বত বা ভালবাসা সাধারণত: দুই প্রকারের। এক প্রকার হচ্ছে-
১) স্বেচ্ছাকৃত ভালবাসা।
২) প্রকৃতগত ভালবাসা।
প্রথমটি মানুষের ইচ্ছাধীন, আর দ্বিতীয়টি মানুষের আয়ত্বের বাইরে। মনে করুন একজন ঈমানদার ব্যক্তি তার পিতাকেও ভালবাসেন এবং রাসূলকেও ভালবাসেন।
এমতাবস্থায় তার পিতা তাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিলেন যা রাসূলের (সা:) নির্দেশের বিপরীত।
সে যদি তখন পিতার ভালবাসার উপর রাসূলের ভালবাসাকে প্রাধান্য দিয়ে নির্দেশ লংঘন করে, তাহলেই তার রাসূলের ভালবাসা পিতার ভালবাসার উপর,
প্রাধান্য লাভ করেছে বলে ধরে নিতে হবে।
হাদীসে উল্লেখিত ভালবাসা দ্বারা প্রথম প্রকারের (স্বেচ্ছাকৃত) ভালবাসাই বুঝানো হয়েছে। তবে কারও অন্তরে যদি রাসুলের,
প্রকৃতগত ভালবাসার আধিক্য ঘটে তাহলে সেটা আরও উত্তম।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার কামনা – বাসনাকে আমার উপস্থিত,
দ্বীনের অধীন করতে না পারবে সে ঈনানদার হতে পারবে না।
(মিশকাত)
ব্যাখ্যা:
রাসূলের প্রতি ঈমানের প্রকৃত মর্ম হচ্ছে যে, আল্লাহর তরফ থেকে রাসূল যে শরীয়ত মানব জাতির জন্য বহন করে এনেছেন,
নিজের ইচ্ছা প্রেরণা ও কামনা-বাসনাকে সম্পূর্ণরূপে সে জীবন বিধানের অধীন করে দেয়া।
হযরত আবু উমামাহ (রা:) হতে বর্ণিত, হুজুর (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তির ভালবাসা ও শত্রুতা, দান করা ও না করা নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্যেই হয়ে থাকে।
সে ব্যক্তিই পূর্ণ ঈমানদার।
(বুখারী)
ব্যাখ্যা :
একজন ঈমানদার ব্যক্তি ঈমানের পথে চলতে চলতে যখন এমন এক স্তরে গিয়ে উপনীত হয়,
যেখানে পৌছে তার যাবতীয় কাজ কর্ম একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছানুসারেই সমাধা হতে শুরু করে তখনই বুঝতে হবে ঈমানের ক্ষেত্রে সে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
হযরত আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল কারীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে রব, হিসেবে কবুল করেছে।
সেই ব্যক্তি ঈমানের প্রকৃত স্বাদ লাভ করেছে।
(বুখারী মুসলিম)