Breaking News
Home / ইসলাম ধর্ম / উদ্ভিবিদ সংরক্ষণে ইসলাম

উদ্ভিবিদ সংরক্ষণে ইসলাম

(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)

উদ্ভিদ সংরক্ষণে ইসলাম

উদ্ভিদ সংরক্ষণে ইসলাম

-হাতিম আল-ফেরদৌসী

_________________________

উদ্ভিদ পৃথিবীবাসীর জন্য মহান এক বিশাল নিয়ামাত।

পৃথিবীকে জীবজন্তুর বসবাসোপযোগী করে গড়ে তুলতে উদ্ভিদ প্রধান কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

বলা চলে, উদ্ভিদ না হলে দুনিয়াটা মরুভূমি থেকে যেতো।

 

উদ্ভিদ কী ?

জবাবে উদ্ভিদবিজ্ঞানীগণ বলেন_ যা মাটি ভেদ করে অঙ্কুরিত হয়,

তবে এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারে না,তা-ই হচ্ছে উদ্ভিদ।তারা আরো বলেন_

উদ্ভিদ প্রধানত দুই প্রকার।

(১) অপুষ্পক: অর্থাৎ যেগুলোর ফুল, ফল ও বীজ গঠিত হয় না। যেমন, শৈবাল, ছত্রাক ইত্যাদি।

 

(২) সপুষ্পক: অর্থাৎ যেগুলোর ফল, ফুল ও বীজ গঠিত হয়।

যেমন, লিচু, আপেল, আম, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি।

 

সুতরাং দেখা যায়, ছোট্ট শৈবাল থেকে নিয়ে বৃহদ বটবৃক্ষ প্রর্যন্ত উদ্ভিদের সঙ্গায় পড়ে।

সূর্যের আলো ও পানি ব্যবহার করে উদ্ভিদ নিজেদের খাদ্য তৈরি করে।

সূর্যের আলো ও পানি ছাড়া উদ্ভিদ বাঁচতে পারে না।

উদ্ভিদের এই জীবনোপকরণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন_

” আর আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশে সুদৃঢ় সপ্ত আকাশ,

এবং সৃষ্টি করেছি একটি প্রদীপ্ত প্রদীপ।

আর বর্ষণ করেছি মেঘ হতে প্রচুর বৃষ্টি,

যেন আমি উদগত করি শস্য ও উদ্ভিদ এবং বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ উদ্যানসমূহ। ” [সূরা: আন-নাবা]

 

মানব ও জীবজন্তুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কল্যাণের নিমিত্তে,

মহান আল্লাহ এই দুনিয়াকে উদ্ভিদ দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন।

এব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আছে_” আমি প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করি।

তারপর ভূমিকে প্রকৃষ্ট রূপে বিদীর্ণ করি।

আর তাতে উৎপন্ন করি শস্য, দ্রাক্ষা, শাক-সবজি, যাইতুন,

খেজুর, বহু বৃক্ষ বিশিষ্ট উদ্যান, ফল ও গবাদির খাদ্য।

এসব তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলির ভোগের জন্য।” [ সূরা: আবাসা_ ২৫-৩২]

 

যেহেতু উদ্ভিদ সৃষ্টির রহস্যে আল্লাহ পাক বলেছেন,

এগুলো আমাদের ও আমাদের পশুগুলির খাদ্য,

তাই দেখা যায় বনাঞ্চলকে ঘিরে অসংখ্য জীবজন্তুর বাসস্থান।

উদ্ভিদ বা বনাঞ্চল না হলে জীবজন্তুর ধংস অনিবার্য,এমনকি মানুষেরও।

আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশীরভাগ সম্পদই বনজ সম্পদ থেকে প্রাপ্ত।

বৃক্ষরাজি বনজ সম্পদের অন্যতম।

গাছপালা আমাদের নানান কাজে আসে। বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি,

রেল লাইনের স্লিপার, নৌকা, লঞ্চ, প্রভৃতি যানবাহন তৈরিতে কাঠ ব্যবহার হয়।

দিয়াশলাই, কাঠপেন্সিল, নিউজপ্রিন্ট ইত্যাদি তৈরিতে কাঠ কাঁচামাল হিসেবে আমরা ব্যবহার করে থাকি।

বিভিন্ন আসবাবপত্র, ঘর নির্মাণ ও জ্বালানি হিসেবেও গাছ ব্যবহৃত হয়।

বনজসম্পদ থেকে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য বৃক্ষরাজি হচ্ছে_

গর্জন, জারুল, সেগুন, কড়ই, গামাইর, শাল, ছাতিম, নিম,

সুন্দরী, গরান, গেওয়া, চাপালিশ, তেলসুর, মেহগনি, শিরিশ, বাবলা,, বট ইত্যাদি।

গোলপাতা, বাঁশ, বেত, নলখাগড়া আর নানান জাতের ঘাসও বনজসম্পদের

এগুলো বাড়ি-ঘরের বেড়া, ছাউনি এবং আসবাবপত্র নির্মানের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

বন থেকে প্রাপ্ত পশুপাখিও বনজসম্পদের অন্তর্ভুক্ত।

 

পশুপাখির মধ্যে বাঘ, হরিণ, হাতি, গয়াল, , গুঁইসাপ, ময়না,

টিয়া, বনমোরগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কোনো কোনো পশুপাখির গোশত আমাদের প্রিয় খাদ্য।

পশুর চামড়া ও হাড় দিয়ে মূল্যবান জুতা, ব্যাগ, চিরুনি, লাঠি ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

 

মৌমাছিও আমাদের বনজসম্পদ। মৌচাক থেকে আমরা মধু পেয়ে থাকি।

আবার মৌচাক দিয়ে মোমও তৈরি করা হয়।

বনভূমি প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গাছপালা বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বাড়তি কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে

 

জগতকে বাঁচাতে সাহায্য করে। মাটির আদ্রতা রক্ষা করা ও ক্ষয়রোধ করা,

বায়ুমণ্ডলকে ঠান্ডা রাখা ও বৃষ্টিপাত ঘটানোর কাজে গাছপালা বিশেষ ভূমিকা রাখে।

 

এছাড়াও তরু-গুল্ম-লতা থেকে তৈরি করা হয় নানান রোগের প্রতিষেধক।

 

পৃথিবীবাসীর কল্যাণের জন্য আল্লাহ পাক আপন ক্ষমতাবলে

 

এসব উদ্ভিদ উৎপন্ন করেন। দুনিয়ার দিক-দিগন্তে সবুজের যে সমারোহ আমাদেরকে আকর্ষণ করে তা কারোর চাষ নয়;

এগুলো মহান আল্লাহ কর্তৃক উৎপাদিত। আল্লাহ তাআলা বলেন_

 

” তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তা অঙ্কুরিত কর,

না আমি অঙ্কুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে একে খড়-কুটোয় পরিণত করতে পারি।

তখন তোমার হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। বলবে_আমাদের তো সর্বনাশ হয়ে গেছে।

আমরা হৃত সর্বস্ব হয়ে পড়েছি।” [সূরা: ওয়াকিয়াহ_৬৩-৬৭]

 

অন্ততপক্ষে বেচেঁ থাকার তাগিদে উদ্ভিদজগৎ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।

উদ্ভিদ ধ্বংস হতে থাকলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে,

আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটবে, জীবজন্তুর বিনাশ সাধন হবে,

খাদ্যের ঘাটতি অনিবার্য হয়ে আসবে।

পৃথিবীতে বর্তমানে বনাঞ্চল হ্রাস পাচ্ছে।

যেকোনো অযুহাত সামনে রেখে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে প্রকৃতির এই লাবণ্যকে।

এ যেন আমরা নিজেই নিজের বিনাশ ডেকে আনতে শুরু করছি।

অনর্থক কোনো উদ্ভিদের ক্ষতি করার বৈধতা ইসলাম দেয় না ,

বরং বিপরীতে উদ্ভিদ উৎপন্ন করার উৎসাহ জাগায়।

কারণ ছাড়া কোনো উদ্ভিদের উপর আঘাত হানলে ইসলামে এটা জুলুম বলে বিবেচিত হয়।

পবিত্র মক্কা নগরীর নির্দিষ্ট এরিয়ায় কোনো উদ্ভিদের ক্ষতি করা,

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হারাম ঘোষণা করেছে।

উদ্ভিদ আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি বা মাখলুক।

এই মাখলুকের উপর অনুগ্রহ করার কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন_

“অনুগ্রহকারীর উপর দয়াময় আল্লাহ অনুগ্রহ করেন।

তোমরা জমিনবাসীর উপর অনুগ্রহ করো আসমানওয়ালা তোমাদের উপর অনুগ্রহ করবেন।

” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন_

” সমুদয় সৃষ্টি আল্লাহ পাকের পরিজন,

সৃষ্টির মধ্যে সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়,

যে তাঁর পরিজনের সাথে উত্তম আচরণ করে।”

নানাভাবে উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উৎপাদনের প্রতি ইসলামে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

ের বিখ্যাত গ্রন্থ, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে হযরত আনাস (রা.)-র বর্ণনায় আছে,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন_

“যে কোন বৃক্ষ রোপণ করলো অথবা কোনো চাষাবাদ করলো

আর এখান থেকে পশুপাখি কোনো কিছু খেয়ে ফেললো, তবে তা মালিকের জন্য সাদকা স্বরূপ গণ্য হবে।”

যেহেতু উদ্ভিদ আমাদের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নেয়ামাত,

আর নেয়ামাত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন_

” তোমরা খাও, পান করো, তবে অপচয় করো না। “[ সূরা: আরাফ_৩১]

 

তাই উদ্ভিদের ক্ষতি তো আমাদের কখনই করা চলে না,

প্রয়োজন হলে কেবল পরিমাণ মতো আমরা কাজে লাগাবো।

 

উদ্ভিদজগতকে আমরা নানান ভাবে রক্ষা করতে পারি।

বৃক্ষরোপণ বা বনায়নের মাধ্যমে, কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে,

মাত্রাতিরিক্ত উদ্ভিদ ব্যবহার বন্ধকরণের মাধ্যমে এবং নানান

ধ্বংসের কবল থেকে উদ্ভিদকে বাচিয়ে রাখার মাধ্যমে।

আসুন উদ্ভিদ সংরক্ষণের মাধ্যমে পূণ্য অর্জন করি এবং প্রকৃতির

ভারসাম্যতা রক্ষায় সহযোগিতা করি।

আরো পড়ুন

শারীরিক দুর্বলতা ও তারুণ্য ধরে রাখতে যে ভিটামিন ট্যাবলেট বেশি কার্যকরী, যে তাসবীহ একবার পাঠ করিলে জান্নাতে একটি গাছ লাগানো হয়

About আবদুল্লাহ আফজাল

হাফিজ মাওঃ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আফজাল। ২০১২ সনে হিফজ সম্পন্ন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন২০১৬ সনে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন ২০২০ সনে। ঠিকানা: বালাগঞ্জ, সিলেট। মোবাইল নাম্বার: 9696521460 ইমেইল:hafijafjal601@gmail.com সকল আপডেট পেতে এবং ওয়েবসাইটে লিখা পাঠাতে ফেসবুক পেজ👉MD AFJALツ ফলো করুন।

Check Also

অধিক হারে ইস্তেগফারের ফজিলত

ইস্তেগফারের ফজিলত

হামদ ও সালাতের পর… রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যত ভালো কাজ শিক্ষা দিয়েছেন, তাতে …

Powered by

Hosted By ShareWebHost