(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
উপমহাদেশে শিরক বিদআতের সয়লাব
উপমহাদেশে ইসলামের আলো বিকশিত হওয়ার পূর্বে পৌত্তলিক ধর্ম ও রাজনীতি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।
এদেশের লোকজন ধর্মীয়ভাবে মূর্তিপূজা, কবরপূজা, মানুষকে সিজদা করা, মূর্তি বা কবরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা,
হাজত সমস্যা দূরীকরণার্থে গাইরুল্লাহর সাহায্য কামনা করা ইত্যাদি শিরকি কাজে লিপ্ত ছিল। কালক্রমে মুসলিম মনিষীগণ
নির্ভেজাল তাওহীদের দাওয়াত পেশ করলে তারা ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু ইসলামের পাশাপাশি এলমে নববীর ব্যাপক সম্প্রসারণ না থাকার কারণে
লোকজন সহজেই নানা প্রকার বিদআত ও রুসুম রেওয়াজের শিকারে পরিণত হয়। এমনকি যেসব মনীষী দেশবাসীকে শিরকের অন্ধকার থেকে মুক্ত করে
হেদায়েতের পথ দেখিয়েছিলেন তাদের ইন্তেকালের পর তাদেরই কবরকে কেন্দ্র করে লোকজন পুনরায় শিরকে লিপ্ত হয়।
আর সমাজে নেমে আসে শিরক বিদআতের ভয়াবহ সয়লাব। সাধারণ মানুষ থেকে নিয়ে রাজদরবার পর্যন্ত এ বিদআতের বহু প্রথা প্রচলন সম্প্রসারিত হয়।
কথিত আছে, মোঘল সম্রাটদের আমলে রাজদরবারে তাজীমি সিজদা, সম্রাটের সম্মানার্থে মাটিতে চুম্বন করা, তাহার তাসলিম ইত্যাদি ও কুপ্রথা চালু ছিল।
দ্বীনে ইলাহী প্রবর্তন
সম্রাট আকবর তো হিন্দু ধর্মের পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে রীতিমতো এক নতুন মিশ্র ধর্ম তথা দ্বীনে ইলাহী প্রবর্তন করেন।
সম্রাট জাহাঙ্গীর একবার আজমির গিয়ে পাঁচ হাজার মানুষ একত্রে তৃপ্তি সহ খেতে পারে এমন প্রকাণ্ড ডেগ নজরানা করে আসেন।
খাজা সাহেবের একান্ত ভক্তি প্রকাশ করার জন্য সম্রাট নিজেও ভন্ড ফকিরদের ন্যায় কান ছিদ্র করে অলংকার পরিধান করতেন।
হযরত মোজাদ্দিদে আলফে সানির ভাষ্যমতে, গোটা সাম্রাজ্য তখন বিদয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেছিল।
বিদআতের বিরুদ্ধে কথা বলার মত তখন কোন সাহসী পুরুষ ছিল না। অনেক আলেম তখন বিদ্যমান ছিলেন,
কিন্তু তাদের অধিক সংখ্যকই ছিল এ সকল বিদআতের প্রবর্তক অথবা সমর্থক কিংবা প্রচারক। তাছাড়া সেকালে সাধারণ মানুষের মধ্যে হিন্দুয়ানি রীতিনীতি ছিল ব্যাপক।
হিন্দুদের পূজা পার্বণে মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে ভ্রাতৃত্বের পরাকাষ্ঠা মনে করা হত। নামাজ, রোজা,
বাংলা অঞ্চলে জৌনপুরী রঃ এর উচ্চস্বরে আজান দেওয়া
হজ ইত্যাদির মত গুরুত্বপূর্ণ বিধানে ছিল তাদের পরম উদাসীনতা। কথিত আছে,বাংলা অঞ্চলে হযরত জৌনপুরী (রঃ) এর উচ্চস্বরে আযান দেওয়ার কারণে
লোকজন হাসাহাসি করেছিল। নতুন এক জিনিসের আমদানি দেখে লোকজন তাকে তিরস্কার করেছিল। কবর পূজা, মাজার পূজা,
ওরশ, কাওয়ালী, শ্যামা সংগীত ইত্যাদিকেই ইসলামের আদর্শ মনে করা হত।
এভাবে উপমহাদেশের গোটা মুসলিম সমাজ নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত শিরক ও বিদআতের সর্বগ্রাসী সয়লাবে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল।