(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
সাধারণ অর্থে পরিপাক তন্ত্রের কোন স্থানের ক্ষতকে পেপটিক আলসার বলে।
মূলত: পাকস্থলীর ক্ষত (Gastric ulcer) ও ডিওডেনামের ক্ষতকেই (Duodenal ulcer) এক সাথে পেপটিক আলসার (Peptic ulcer) বলে।
পাকস্থলী অথবা ইলিয়াম অপারেশন এর পর মিকেলস ডাইভার্টিকুলাম সংযোগস্থলে আলসার হয়।
কোন কারণে গ্যাষ্ট্রোডিওডেনাল ব্যারিয়ার মিউকোসাল রেসিস্ট্যান্স অক্ষমতা কমে গেলে পেপটিক আলসার হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় সুচিকিৎসা হলে পেপটিক আলসার অল্প সময়েই সেরে উঠে। কিন্তু চিকিৎসা না করালে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করে।
ক্ষতের স্থান ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে পরিপাক তন্ত্রের যে কোন ক্ষতকে পেপটিক আলসার বলে। যেমন –
- খাদ্যনালীর নিম্নাংশে ক্ষত (Lower Oesophageal ulcer)
- পাকস্থলীর ক্ষত (Gastric ulcer)
- ডিওডেনামের ক্ষত (Duodenal ulcer)
- জেজুনামের ক্ষত (Jejunal ulcer)
কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হল
গ্যাস্ট্রোডিওডেনাল ব্যারিয়ার-এর প্রতিরক্ষা (স্বাভাবিক লাইনিং মিউকোসা ইনট্যাক্ট থাকা) এবং ক্ষতিকারক পদার্থের মধ্যে অসামঞ্জস্য।
বেশী পরিমাণে গ্যাস্ট্রিক এসিড ও পেপসিন নি:সরণ, কারণ হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও পেপসিন নিজেরাই আলসার সৃষ্টি কারক।
হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক জীবাণু পাকস্থলী ও ডিওডেনামের ভিতরের আবরণে ক্ষত সৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এ জীবাণু বিভিন্ন ভাবে পেপটিক আলসার সৃষ্টি করে। ডিওডেনাল আলসারের ৯০% এবং গ্যাস্ট্রিক আলসারের ৭০% ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত লক্ষ্য করা গেছে।
প্রচুর পরিমাণ ব্যথানাশক ঔষধ যেমন- ইনডোমেথাসিন, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, রফিকক্সিব, স্টেরয়েড, প্যারাসিটামল, এসপিরিন,
বা এ জাতীয় ঔষধ দীর্ঘদিন সেবন করলে তা প্রত্যক্ষভাবে পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করে।
এ সকল ঔষধ প্রোস্টাগ্লান্ডিন নামক ক্যামিকেল মেডিয়েটর তৈরি কমিয়ে দেয় ফলে প্রদাহ হয় এবং আলসার হয়।
দীর্ঘদিন ধরে দৈহিক ও মানসিক চাপগ্রস্থ অবস্থায় থাকা। মানসিক অশান্তি, দু:শ্চিন্তা, হতাশা, অস্থিরতা থাকলে পাকস্থলীর পাচক রস,
বেশী নি:সৃত হয় এবং আলসার হয়। একে ট্রেস আলসার বা একিউট আলসারও বলা হয়।পাকস্থলীর কার্ভেচার অংশে ৯০% ক্ষেত্রে আলসার হয়ে থাকে।
বেশিরভাগ সময় খালি পেটে থাকা কিংবা খালি পেটে দৈহিক পরিশ্রম করলে পাকস্থালীতে পেপসিন ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড বেশী পরিমাণে নি:সরন হয়।
পরে একত্রে একটিভ পেপসিন তৈরি হয়ে পাকস্থলীর নরম কোষ কলার সংস্পর্শে এসে ক্ষত সৃষ্টি করে।
বংশগত: যে পরিবারে এ রোগ আছে সেখানে প্রাদুর্ভাবের হার হচ্ছে সাধারণ তুলনায় ৩ গুণ বেশী।
শক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ, বেশী ঠাণ্ডা বা গরম খাদ্য গ্রহণ।
ধূমপানজনিত কারণেও পেপটিক আলসার হয়ে থাকে।
পেপটিক আলসারের লক্ষণ সমূহ
বেশিরভাগ পেপটিক আলসারের রোগীর মধ্যে নিম্নবর্ণিত লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়:
উপরের মধ্য পেটে (ইপিগ্যাস্ট্রিয়াম অঞ্চলে) তীব্র ব্যথা হয়, বুকে জ্বালাপোড়া হয়, টক-ঝাল জাতীয় তরল রস পেট থেকে গলার মধ্যে বা মুখের মধ্যে আসে।
এ ব্যথা রাতে বেশী হয় এবং সাধারণত: খাওয়ার ১-৩ ঘণ্টা পর শুরু হয়। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে কিছু খাবার খেলে, এলকালি, এন্টারসিড খেলে,
এই ব্যথা নিরাময় হয়। এর সঙ্গে বমি বা বমিভাব, পেট ফাঁপা, হেচকি ওঠা এবং ওজন কমা সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
যাদের খুব গভীর ঘা আছে তাদের ব্যথা পিটের পেছনের দিকে অনুভূত হয়। বিশেষত: পিটের উপরের বাঁ দিকে অথবা বুকে।
এজন্য অনেক সময় আলসার এর ব্যথা হার্টের ব্যথার সঙ্গে ভুল হতে পারে। কিছু কিছু রোগীর বেলায় ক্ষতস্থান হতে রক্তপাতের কারণে,
রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া, রক্ত বমি বা রক্ত মল দেখা দেয়। তাছাড়া ডিওডেনাম বা পাকস্থলী (স্টোমাক) ফুটে হয়ে একুইট পারফোরেশন এর মতো ইমার্জেন্সি অবস্থান সৃষ্টি হতে পারে।
সেক্ষেত্রে জরুরীভাবে সার্জিক্যাল চিকিৎসা জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা প্রয়োজন।