Breaking News
Home / সীরাতুন্নবী (সাঃ) / রাসূল সা: কে অনুসরণ করার সঠিক পদ্ধতি

রাসূল সা: কে অনুসরণ করার সঠিক পদ্ধতি

হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন একদা রাসূলের (সা:) ে অনুসন্ধান করার জন্যে,

তিন ব্যক্তি তার বিবিদের কাছে উপস্থিত হলো।

অত:পর রাসূলের (সা:) ইবাদত সম্পর্কে যখন তাদেরকে জানাজ হলো, তখন যেন তারা তা অপ্রতুল মনে করল এবং বলল,

আমাদের সাথে হুজুরের (সা:) কি তুলনা হতে পারে? স্বয়ং তার অগ্র-পশ্চাতের অপরাধ মাফ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

অত:পর তাদের একজন বলল, আমি কিন্তু সারা রাত নামাজে কাটাব। দ্বিতীয় জন বলল, আমি সারা বছরই রোজা রাখব এবং কোন দিন রোজা ত্যাগ করব না।

তৃতীয় জন বলল, আমি মেয়েদের সম্পর্কে হতে দূরে থাকব এবং কখনও বিয়ে-শাদী করব না।

হঠাৎ হুজুর (সা:) সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ওহে, তোমরা কি এসব কথা বলেছ,

সাবধান আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাে ভয় করি এবং তার উদ্দেশ্যে সবচেয়ে বেশী পরহেজ করি।

এতদসত্বেও আমি কোন দিন রোজা রাখি, আবার কোন দিন (নফল নানাজ) ছেড়েও দেই। কখনও নামাজ পড়ি, আবার কখনও ঘুমাই।

আর আমি বিয়ে-শাদীও করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার এ অনুসরণ করবে না সে আমার উম্মত নয়।

(বুখারী,মুসলিম)

উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা নিম্নে করা হল:

পরম করুণাময় আল্লাহ নবীদের মাধ্যমে যে দ্বীন বা জীবন -বিধান মানবজাতির জন্য নাজিল করেছেন,

তা যথাযথ মেনে চলার মধ্যেই ইহকাল পরকালের কল্যাণ নিহিত।

নবীরা জীবনভর উক্ত দ্বীন মোতাবেক করে দ্বীনের একটি বাস্তবরূপ উম্মতের জনে রেখে যান।শরীয়তের পরিভাষায় তাকে বলা হয় সুন্নতে রাসূল।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)

তার সারা জিন্দেগীর ক্রিয়াকর্ম দ্বারা দ্বীনের যে নিখুত আকৃতি  আমাদের জন্য রেখে গেছেন, ত-ই তার সুন্নত বা তরীকা।

তা হতে যেমন কোন কিছু বাদ দেয়ার কোন অধিকার কারো নেই, তেমনি অধিকার নেই তাতে নতুন কিছু যোগ করার।

কাজেই নামাজ-রোজা ও হালাল হারামের বন্ধনমুক্ত উচ্ছৃঙ্খল জীবন যেমন আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়,

তেমনি অপছন্দনীয় সংসার-ধর্ম ও দুনিয়ার যাবতীয় দায়- ত্যাগ করে দিন রাত নফল ইবাদতে মশগুল হওয়া।

এ উভয় পথের মাঝখানে হলো নবীর পথ। আর এ পথে চলেই মানুষ পেতে অয়ারে দুনিয়া-আখেরাতের চিরন্তন কল্যাণ।

আলোচ্য হাদীসে হুজুর (সা:) এ পথের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন যে এটাই হলো আমার সুন্নত। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নত অনুসরণ করবে না সে আর যা-ই হোক আমার উম্মত নয়।

 

হযরত ঈসা (আ:) এর উম্মতের ভেতর একদল খোদাভীরু লোক দুনিয়ার যাবতীয় কাজ-কারবার ছেড়ে হুজরা, জঙ্গল, পর্বত ও গুহা,

ইত্যাদিতে আশ্রয় নিয়ে দিন-রাত আল্লাহর ধ্যানে মশগুল ছিল। তাদের বিষয় উল্লেখ কিরে আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীকে সাবধান করে বলছেন:

“এ দরবেশী জীবন তাদের মনগড়া। আমি তাদের জন্যে তা ফরজ করিনি।  তারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যেওই এ পথ অবলম্বন করেছিল।

কিন্তু সীমা লংঘন করে ফেলেছে।”

হযরত েশা (রা:) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূল (সা:) একটি কাজ করে অন্যকেও তা করার অনুমতি দিলেন।

এতদসত্ত্বেও কিছু লোক তা করা হতে বিরত থাকল। একথা হুজুরের (সা:) কানে পৌছালে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে একটি খোতবা দিলেন।

প্রথমে হুজুর (সা:) আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অত:পর বললেন, যে কাজটি আমি স্বয়ং করেছি, তা হতে বিরত থাকাটা তারা কি করে পছন্দ করতে পারল?

আল্লাহর শপথ, তাদের চেয়ে আমি আল্লাহকে অধিক জানি ও অধিক ভয় করি।

(বুখারী,মুসলিম)

 

 

উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা নিম্নে করা হয়েছে:

শরীয়তের কোন কোন অনুষ্ঠান বা আমল অবস্থা ভেদে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ আছে। যেমন রোগী কিংবা মোসাফিরেএ জন্যে রমজান মাসের রোজা বাধ্যতামূলক নয়।

ইচ্ছা করলে রাখতেও পারে অথবা কাযাও করতে অয়ারে। কিন্তু রোগী ব্যক্তি কিংবা মোসাফিরের রোজা রাখার কারণে যদি,

জীবন নাশের সম্ভাবনা থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই রোজা ত্যাগ করতে । কেননা ইবাদত হলো আল্লাহ-রাসূলের মর্জি মোতাবেক কাজ করা।

শরীয়তের বিধি-নিষেধের পরওয়া না করে নিজের খোয়াল খুশী মত কাজ করা ইবাদত নয়।

হযরত আবু ছায়ালাবাহ খোসানী (রা:) বলেন, নবী কারীম (সা:) বলেছেন, আল্লাহ কতকগুলি বিষয় ফরজ করেছেন, তা তরক করবে না।

আর কতকগুলি বিষয় হারাম করেছেন, তোমরস তাতে লিপ্ত হবে না। আর ইচ্ছাকৃত ভাবেই তিনি কতক বিষয় সম্পর্কে কিছু বলেননি,

তা নিয়ে তোমরা তর্ক করবে না।

(দার কতুনী)

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, শরীয়তের যাবতীয় বিষয়সমূহ তিন ধরনের।

এক ধরনের বিষয় হলো যার সঠিক হওয়া একেবারেই স্পষ্ট, সুতরাং তা মেনে চলবে।

আর এক ধরনের বিষয় হলো যার ভ্রান্ত একেবারেই সন্দেহাতীত, সুতরাং তা পরিহার করবে।

আবার কতক বিষয় এমনও আছে যা সন্দেহপূর্ণ,সেগুলি আল্লাহর উপর সোপার্দ করবে।

(সন্দেহ নিরসন না হওয়া তাতে লিপ্ত হবে না।

(আহমদ)

হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী কারীম (সা:) বলেছেন, কোরআনে পাচ প্রকারের বিধান নাজিল হয়েছে।

(অর্থাৎ কোরআনের যাবতীয় আয়াতসমূহ পাচ ভাগে বিভক্ত)  হালাল, হারাম, মোহকাম, মোতাশাবেহ ও আমছাল।

সুতরাং হালালকে হালাল বলে গ্রহণ করবে, হারামকে হারাম হিসেবে প্রত্যাখ্যান করবে,

মোহকাম অনুসারে আমল করবে, মোতাশাবেহের উপর ঈমান আনবে এবং আমছাল হতে উপদেশ গ্রহণ করবে।

(আহমদ)

শুধু উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা নিম্নে করা হয়েছে:

উপরোক্ত হাদীসে হুজুর (সা:) পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ পাচভাগে বিভক্ত বলে উল্লেখ করেছেন।

প্রথম আয়াতে হালাল। অর্থাৎ, যাতে কোন বস্তু হালাল হওয়া সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় আয়াতে হারাম। অর্থাৎ, যাতে কোন বিষয়ে হারাম হওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে। তৃতীয় হলো আয়াতে মোহকাম।

মোহকাম ঐ সমস্ত আয়াতকে বলা হয় যার বিবরণসমূহ শব্দ ও অর্থসমূহ সাধারণভাবে বোধগম্য।

চতুর্থ হলো মোতাশাবেহ। মোতাশাবেহ কোরআনের সেইসব আয়াত বা শব্দসমূহকে বলা হয় যার অর্থ ও ব্যাখ্যা দুর্বোধ্য ও অস্পষ্ট।

পঞ্চম হলো আয়াতে আমছাল, যার মাধ্যমে আল্লাহ বিভিন্ন দৃষ্টান্ত পেশ করে মানব জাতিকে উপদেশ দিয়েছন।

বর্ণিত হাদীসটিতে হ্যজুর (সা:) উপরোক্ত পাচ প্রকারের আয়াত সম্পর্কে আমাদের কি করণীয় তার-ই উল্লেখ করেছন।

হুজুর (সা:) বলেছেন যে, তোমরা কোরআনের হালালকে হালাল বলে গ্রহণ করবে, আর হারামকে হারাম হিসেবে প্রত্যাখ্যান করবে,

মোহকাম অনুসারে কাজ করবে, মোতাশাবেহের উপর এই মর্মে ঈমান আনবে যে, এ সবের অর্থ মহাজ্ঞানী আল্লাহ বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে আমাদের জ্ঞান বহির্ভূত রেখেছেন।

আর কোরআনের আমছাল (দৃষ্টান্তসমূহ) হতে উপদেশ গ্রহণ করবে।

উপরোক্ত তিনটি হাদীসে একটি বিশেষ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাহলো এই যে, শরীয়তের যাবতীয় করণীয় বিষয়সমূহ স্পষ্ট এবং সন্দেহাতীত।

সুতরাং বিনা দ্বিধায় সগুলি মেনে চলবে। পক্ষান্তরে অস্পষ্ট দুর্বোধ্য ও অপ্রযোজনীয় বিষয়ের অবতারণা করে অহেতুক সন্দেহে লিপ্ত হবে না।

সমাজে এক ধরনের লোক দেখা যায় যারা শরীয়তের করণীয় স্পষ্ট নির্দেশাবলীর বিশেষ কোন ধার ধারব না।

কিন্তু অপেক্ষাকৃত জটিল,দুর্বোধ্য ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের অবতারণা করে মানুষের ভেতর একটা গোলক ধাধার সৃষ্টি করতে চায়।

সত্য সন্ধান আদৌ তাদের উদ্দেশ্যে থাকে না।  বরং নিজেদের পাণ্ডিত্য প্রকাশ, কিংবা মানব মনে দ্বীন-শরীয়ত সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টিই থাকে তাদের আসল উদ্দেশ্য।

এ ধরনের কাজ যে শরীয়তের দৃষ্টিতে দোষিণীয়,হাদীসে তারই উল্লেখ করা হয়েছে।

About Admin

আমার নাম: এইচ.এম.জামাদিউল ইসলাম ঠিকানা: সিলেট, বাংলাদেশ। আমি কোরাআনের খেদমতে আছি এবং MuslimBD24.Com সাইটের ডিজাইনার (Editor) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায়, তাই সময় পেলে দ্বীন ইসলাম প্রচারের সার্থে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখালেখি করি। যাতে করে অনলাইনেও ইসলামিক জ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানহীন মানুষ, ইসলামিক জ্ঞান সহজে অর্জন করতে পারে। একজন মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিজের জীবনকে ইসলামের পথে চালাতে গেলে ইসলাম সম্পর্কে যে জ্ঞান অর্জন করার দরকার, ইনশা-আল্লাহ! এই ওয়েব সাইটে মোটামুটি সেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। যদি সব সময় সাইটের সাথে থাকে। আর এই সাইটটি হল একটি ইসলামিক ওয়েব সাইট । এ সাইটে শুধু দ্বীন ইসলাম নিয়ে লেখালেখি হবে। আল্লাহ তায়ালার কাছে এই কামনা করি যে, আমরা সবাইকে বেশী বেশী করে ইসলামিক জ্ঞান শিখার ও শিখানোর তাওফিক দান করুন, আমিন। তাজবীদ বিষয়ে কিছু বুঝতে চাইলে যোগাযোগঃ 01741696909

Check Also

শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ সা: এর সংক্ষিপ্ত পরচিতি

শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ সা: এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম) প্রশ্ন:- আমরা কোন নবীর উম্মত? উত্তর:- শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর উম্মত। …

Powered by

Hosted By ShareWebHost