আল্লাহ তায়ালা নিম্নে বলেছেন:
“যদি তোমরা নিজেদেরকে নিষিদ্ধ কবীরা গুনাহসমূহ হতে বাচিয়ে রাখ, তাহলে তোমাদের (ছোট-খাট) অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিব।
আর তোমাদেরকে সম্মানজনক অবস্থানে প্রবেশ করাব।”
(সূরা নিসা-৩১)
তবে কেউ যদি বিনা দ্বিধায় হরহামেশা সগীরা গুনাহ করতে থাকে, তাহলে তার এই সগীরাহ শেষ পর্যন্ত কবীরা গুনায় পরিণত হবে।
তাছাড়া কেহ যদি সারা জীবন পাপের কাজে লিপ্ত থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহর্তে (মৃত্যুর লক্ষণ অনুভব করে) তওবা করে, তার তওবা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না।
এ সম্পর্কে আল্লাহ কোরআনে ঘোষণা করেন, নিম্নেরুপ:
“প্রকৃতপক্ষে তাদের তওবাই গ্রহণীয় যারা অজ্ঞাতে পাপের কাজ করে, অত:পর কালবিলম্ব না করে তওবা করে।
এ ধরণের লোকের তওবাই আল্লাহ কবুল করে থাকেন। আর আল্লাহ হলেন মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞ।
পক্ষান্তরে যারা,অবিরাম পাপের কাজে লিপ্ত থাকে, অত:পর যখন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়, তখন বলে এবারে এবারে আমি তওবা করলাম।
আল্লাহর কাছে এদের তওবা একেবারে-ই মূল্যহীন ; যেমন মূল্যহীন কাফের অবস্থায় মৃত্যু বরণকারীর তওবা।”
(সুরা নিসা-১৭,১৮)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী কারীম (সা:) বলেছেন, কবীরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা,
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা ও মিত্যা শপথ করা।
(বুখারী)
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা নিম্নে করা হয়েছে:
আল্লাহ ও তার রাসূলের অপছন্দনীয় কাজকে বলা হয় গুনাহ। গুনাহ ফারসী শব্দ। এর আরবী হলো ‘মাসীয়াত'।
গুনাহ সাধারণত: দু'প্রকার। সগীরা ও কবীরা। যে সমস্ত অপরাধ সম্পর্কে কোরআন হাদীসে শাস্তির বিধান আছে, তাহলো কবীরা।
আর যে সব গুনাহ সম্পর্কে কোরআন হাদীসে কোন শাস্তির বিধান নেই তাহলো সগীরা।
শিরক ব্যতীত অন্যান্য কবীরা গুনাহ দ্বারা মুমিন কাফির হয় না বটে, তবে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
মানুষের ঋণ ব্যতীত অন্যান্য কবীরা গুনাহ হতে যদি ঈমানদার ব্যক্তি খালেছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিবেন।
তওবা শব্দটি আরবী। এর আভিধানিক অর্থ হলো ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা।
আর শরীয়তের পরিভাষায় তওবা বলা হয় অনুতপ্ত মনে শরীয়ত বিরোধী কাজ হতে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ কাজে লিপ্ত না হওয়ার,
দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করত, আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। সুতরাং কেউ যদি মুখে হাজার বারও তওবা উচ্চারণ করে, আর গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে,
তাহলে তার এ মৌখিক তওবা প্রকৃতপক্ষে তওবা-ই নয়। আল্লাহর প্রিয় নবী রাসূলগণ ব্যতীত অন্যান্য মুসলমানদের পক্ষে সমস্ত সগীরা গুনাহ হতে বেচে থাকা অসম্ভব।
কবিরা গুনাহ একমত্র খালেস তওবা দ্বারাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাফ করে থাকেন। তবে আল্লাহর দরবারে তওবা কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত আছে,
১ নং শর্ত হলো যে পাপ করেছে সে ঐ পাপের জন্য চরমভাবে অনুতপ্ত হবে। ২য় শর্ত হলো আল্লাহর কাছে ওয়াদা করবে সে জিন্দেগীতে ঐ পাপ কাজ করবে না।
এটা হলো ঐ কাজের ব্যাপারে যেটা শুধু আল্লাহর হকের সাথে সংশ্লিষ্ট। তবে ঐ পাপ কাজ যদি বান্দার হক সংশ্লিষ্ট হয়,
তাহলে ৩য় আর একটি শর্ত উপরোক্ত দুটির সাথে যোগ হবে। তাহলো যে বান্দাহ বা লোকের হক সে নষ্ট করেছে ঐ হক তাকে আদায় করে দিবে,
অথবা তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিবে।
হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক পাপ হতে বিরত থাকবে।
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, সে সাতটি পাপ কি কি? তিনি বললেন, এগুলো হলো আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যাদু করা,
শরীয়তের অনুমোদন ব্যতীরেকে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের মাল আত্নসাৎ করা, জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা,
এবং অচেতন পবিত্র ঈমানদার মহিলাদের বিরূদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ আনা।
(বুখারী, মুসলিম)
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা নিম্নে করা হয়েছে:
উপররের হাদীসটিতে নবী কারীম (সা:) কবীরা গুনাহ হতে কয়েকটি গুনাহের কথা উল্লেখ করেছেন মাত্র।
কবীরা গুনাহ সম্পর্কীয় যাবতীয় জাজের উল্লেখ করেননি।
হযরত মুয়ায (রা:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, রাসূল (সা:) আমাকে দশটি বিষয় সম্পর্কে উপদেশ দিতে বলেছেন,
হে মুয়ায, যদি তোমাকে হত্যা করা কিংবা পুড়িয়ে ফেলা হয়, তবু তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না।
আর সম্পদ হতে তাড়িয়েও দেয়, তবু তাদের অবাধ্য হবেনা। ইচ্ছাকৃতভাবে কিছুতেই তুমি ফরজ নামাজ ত্যাগ করেবে না।
কেননা স্বেচ্ছায় সে যে ফরজ নামাজ ত্যাগ করে তার ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের কোন দায়িত্ব থাকে না।
কিছুতেই তুমি শরাব পান করবে না, কেননা শরাব হলো সমস্ত অশ্লীল কাজের মূল। আর তুমি সব রকমের পাপকার্য হতে নিজেকে দূর রাখবে।
কেননা পাপ কার্যের কারণে আল্লাহর গযব অবতীর্ণ হয়। চরম কাটাকাটির মুহুর্তেও তুমি জিহাদের ময়দান পরিত্যাগ করবে না।
আর তুমি যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে যদি মহামারী (সংক্রামক ব্যাধি) দেখা দেয়, তাহলে তুমি সেখানে অবস্থান করবে।
তুমি তোমার সাধ্যমতো পরিবার পরিজনের প্রয়োজনে খরচ করবে। তাদেরকে আদব শিখাতে তাদের উপর থেকে শাসনের ডাণ্ডা সরাবে না,
এবং তাদের অন্তরে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করবে।
(আহমদ)
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা নিম্নে করা হয়েছে:
হাদীসে রাবী (বর্ণনাকারী) হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা:) ছিলেন নবী কারীমের (সা:) বিশিষ্ট সাহাবীদের অন্যতম।
হুজুর (সা:) তাকে ইয়ামেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশের শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। বর্ণিত হাদীসটি দ্বারা হুজুরের সাথে তার গভীর সম্পর্কের সন্ধান মেলে।
নবী কারীম (সা:) হযরত মুয়াযকে প্রাণ নাশের সংকটময় মুহুর্তেও শিরক হতে পবিত্র থাকার উপদেশ দিয়েছন।
কেননা তাওহীদের উপর অটল অচল থাকার কারণে যদি বিধর্মী কর্তৃক নিহতও হয়, তাহলে সে শাহাদতের মর্যাদা প্রাপ্ত হবে।
আর হযরত মুয়াযের মতো বিশিষ্ট সাহাবীর পক্ষে আযীমতের উপর আমল করাই শোভনীয়।
পক্ষান্তরে সাধারণ কোন মুসলমান যদি কাফির দুশমন হতে জান বাচাবার উদ্দেশ্যে অন্তরে তাওহীদের বিশ্বাস স্থির রেখে,
মুখে কালেমায়ে শিরক উচ্চারণ করে, তাহলে তাকে এ ব্যাপারে অবকাশ দেয়া হয়েছে।
অবশ্য সেও যদি আযীমতের উপর আমল করে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে শাহাদতের মর্যাদা প্রাপ্ত হবে।
হুজুরের (সা:) উপদেশ হতে আরও জানা গেল যে, কোন এলাকায় যদি ওবায়ী ব্যাধি (মহামারী) দেখা দেয়, তাহলে সেখানকার লোকেরা সে স্থান ত্যাগ করবে না।
কেননা সেখানকার লোক যদি অন্যত্র চলে যায়, তাহলে রোগীর সেবা-শুশ্রষাও হবে না এবং রোগ প্রতিরোধেরও কোন প্রচেষ্টা হবে না।
অবশ্য কোন এলাকায় মহামারী দেখা দিলে বাইরের লোককেও সেখানে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।।