(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
কুরআন হাদিস সঠিকভাবে অধ্যায়ন করলে দুনিয়া সম্পর্কে যে চিত্রটি ভেসে উঠে তা হলো: আল্লাহ এবং তার
রাসুল সা. মোটেও চান না যে, মানুষ দুনিয়াকে একেবারে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকুক। এটি খৃষ্টধর্মের মূলনীতি যে,
মানুষ প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করতে হলে অবশ্যই ধন-সম্পদ, স্ত্রী-সন্তান, ঘরবাড়ী সবকিছু ত্যাগ করতে হবে। তবেই
লাভ করা যাবে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য। অন্যথায় নয়। পক্ষান্তরে আমাদের রাসুল সা. আমাদেরকে যে জীবনের
শিক্ষা দিয়েছেন, তার কোথাও বৈরাগ্যবাদ তথা দুনিয়া বর্জনের উল্লেখ নেই। কোথাও এই সবক নেই যে, তোমরা
পার্থিব সম্পদ উপার্জন করতে পারবে না। ঘরবাড়ী বানাতে পারবে না। স্ত্রী-পরিজনের সাথে রসালাপ করতে
পারবে না। একসঙ্গে আহার করতে পারবে না। এসব খবরদারি ইসলামে নেই। হাঁ, ইসলাম অবশ্যই একথা বলেছে,
এই দুনিয়া তোমাদের আখেরি মনজিল নয়। মূল লক্ষ্যও নয়। তাই দুনিয়াকে কেন্দ্র করে সকল কার্যক্রম হওয়াটা
ভুল। দুনিয়াকে ঘিরেই সবকিছু-এ মানসিকতা ভ্রান্ত। ইসলামের বক্তব্য হলো, পৃথিবীটা তৈরি করা হয়েছে এই জন্য
যে, যেন এখানে বসবাস করেই মানুষ আখেরাতের জন্য তৈরি হতে পারে। আর আখেরাতের জীবনকে মাথায়
রেখে দুনিয়াকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারে, যাতে দুনিয়ার প্রয়োজন মিটে যায় এবং আখেরাতের জীবনও
কল্যাণময় হয়ে যায়।
মাওলানা রুমি রহ. বলেছেন: যতক্ষণ পর্যন্ত পার্থিব ধন-সম্পদ মানুষের আশেপাশে থাকবে এবং মানুষের
প্রয়োজনের সময় তার কাজে আসবে তথা পানাহারের কাজে আসবে, উপার্জনের কাজে আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ
দুনিয়া জীবনের জন্য ফলপ্রসূ ও কল্যাণকর এবং আল্লাহর অনুগ্রহ বলে বিবেচিত হবে। কিন্ত এ পার্থিব ধন-সম্পদ
যদি সব কিছু ভেদ করে হৃদয়ের কিশতিতে প্রবেশ করে আর মানুষ যদি সম্পদের মোহে এমনভাবে উঠে পড়ে লাগে
যে, অস্থিমজ্জায় শুধু সম্পদের ভাবনা ছাড়া আর কিছুই নেই, তাহলে বুঝতে হবে কিশতির অন্ধরে পানি ঢুকে
পড়েছে। এ পানি তার জীবন তরিকে ধ্বংশ করে তবেই ক্লান্ত হবে। তখন এ দুনিয়া তার জন্য বিবেচিত হবে
“মাতাউন গুরুর” তথা ধোঁকার উপকরণরূপে। অবস্থার এ চিত্রকেই বলা হয়েছে, দুনিয়াটা মৃত লাশ আর তার
প্রার্থী হলো কুকুরের ন্যায়। যারা দুনিয়াকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেই এমন কথা প্রযোজ্য। সুতরাং
দুনিয়ায় থেকেই, দুনিয়ার কাজ-কর্মের মধ্য দিয়েই আখেরাতের প্রস্তুতি নিতে হবে। দুনিয়াকে ছেড়ে বা বৈরাগ্য হয়ে
নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।।
আরও পড়ুন:-
দুনিয়া সব পাপের মুল
দ্বীনের মাঝেই দুনিয়ার শান্তি
দুনিয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করা জায়েয নয়