(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
আগামীকাল কি হবে তা নিয়ে চিন্তা করে নিজের বোঝা বাড়ানো নিতান্তই একটি বোকামী।
কারণ, আগামীকাল সম্পর্কে দুঃশ্চিন্তা মানুষের আজকের দিনটাকে নষ্ট করে দেয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামও আজকের দিন নিয়েই চিন্তা করতে বলেছেন। এক হাদিসে তিনি বলেছেন,
“যদি ঘুম থেকে উঠে দেখ তোমার শরীর সুস্থ আছে, তোমার পরিবার নিরাপদে আছে এবং তোমার কাছে আজকের দিনের মত রুজির সন্ধান আছে তবে এটা বুঝে নিও যে,
গোটা দুনিয়ার নিয়ামত তোমার কাছে এসে জড়ো হয়েছে।” (তিরমিযী)
যেকোনো দিনে যার কাছে এই নিয়ামত সমূহ থাকে তাঁর কাছে পুরো বিশ্ব জড় হয়েছে।
সুস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য এক দিনের পর্যাপ্ত রুজি হল এমন উপহার যার কোনো শিরোনাম হয় না।
যে উদ্বেগ এখনও উদ্ভূত হয়নি তা নিয়ে চিন্তা করা বোকামি।
এগুলির কারণে প্রায়শই হতাশার জন্ম নেয়। অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তা করে বর্তমানকে নষ্ট করা নিতান্তই ভুল।
তবে এর মানে এই নয় যে ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী হওয়া যাবে না।
বরং ভবিষ্যত সম্পর্কে তো আশাবাদী অবশ্যই হতে হবে; কিন্তু দুশ্চিন্তা করে বর্তমানকে নষ্ট করা যাবে না।
ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী হওয়া
আল্লাহ বলেন, “হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজের উপর জুলুম করেছ, তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।
নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে থাকেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।” (আল কুরআন-৩৯:৫৩)
এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে হতাশ হতে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং এটাকে পথভ্রষ্টদের বৈশিষ্ট্য বলে অভিহিত করেছেন।
আর এভাবেই কুরআন মানুষকে আশাবাদী জীবনের দিকে আহ্বান জানায় এবং নেক কর্মের অনুপ্রেরণা দেয়।
কুরআন আশাবাদিতার ক্ষেত্রে অসংখ্য উদাহরণ বা নমুনা উপস্থাপন করেছে। ধৈর্য্যধারণ করা ও সত্যের ওপর অটল থাকার মাধ্যমেই কেবল সুন্দর এবং আশাবাদী ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা রয়েছে।
মানুষ যেমন তার ভবিষ্যত সম্পর্কে জানে না, তেমনি আশা কিংবা নিরাশার ব্যাপারেও না।
কিন্তু ইসলাম মানুষকে ঈমান, পরহেজগারি, শান্তি ও নিরাপত্তার ছায়ায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশার সুসংবাদ শোনায়।
মনোবিজ্ঞানীরাও আশাবাদী হওয়াকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক বলে মনে করেন।
মানুষের মাঝে যদি আশা না থাকত, তাহলে মানুষ দ্বারা কোনো কাজই হত না।
মানুষ যদি নিশ্চিত করে জানত যে, সে কবে মারা যাবে, তবে তার জীবনযাপনের শৃঙ্খলাই নষ্ট হয়ে যেত।
আল্লাহর চিরাচরিত বিধান হলো, যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে তারা বিজয়ী হবে
এবং প্রকৃত মুক্তি লাভ করার ব্যাপারে তারাই আশাবাদী হতে পারে।
কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার উপায় হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রণীত বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।
দুনিয়া হচ্ছে মানুষের জন্য পরীক্ষার ক্ষেত্র ও আখিরাতের জগতের জন্য পাথেয় সংগ্রহের স্থান।
পবিত্র কুরআন মুমিন ও সৎ কর্মশীলদের জন্য সুসংবাদ ও আশা উদ্রেকের এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। কুরআনে বলা হয়েছে,
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ব্যাপারে কেবলমাত্র তারাই আশাবাদী হতে পারে। কেননা আল্লাহ নিজেই এ সুসংবাদ মুমিনদেরকে শুনিয়েছেন।
সুতরাং, মানুষ হিসেবে ভবিষ্যতের ব্যাপারে আমাদেরকে আশাহত হলে চলবে না। হতাশা হলো শয়তানের প্ররোচনা।
শয়তান মানুষের মনে হতাশা ঢুকিয়ে দিয়ে তার কর্মতৎপরতা কেড়ে নিতে চায়। পরিণতিতে মানুষের জীবনে নেমে আসে ব্যর্থতা।
তাই মন থেকে সব রকমের হতাশা মুছে ফেলে আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলাই প্রতিটি মুমিনের একান্ত কতর্ব্য।
বর্তমানকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিন
বর্তমানকে ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারলে ভবিষ্যত নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। সফল মানুষেরা বর্তমানের প্রতিটি সেকেন্ড কে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে ব্যবহার করেন।
অতীত নিয়ে দুঃখ করে সময় নষ্ট করলে বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যতও নষ্ট হবে।
এ কথা অবশ্য সত্য যে, বর্তমানে কোনো কাজ ভালো করে করতে গেলে অতীতের শিক্ষা কাজে লাগাতে হয়।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনি অতীত নিয়ে সর্বদা আফসোস করবেন।
অতীতের প্রতিটি ব্যর্থতাকে হিহ্নিত করুন। বর্তমানে একই রকম পরিস্থিতিতে পড়লে, অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষাগ্রহণ করুন।
কিন্তু অকারণে সেই ঘটনার কথা ভেবে বর্তমানের মূল্যবান সময়গুলিকে নষ্ট করবেন না।
নিজের বুদ্ধি আর শক্তির সবটুকু খাটিয়ে বর্তমানকে সফল করার চেষতা করুন। আর বর্তমান সফল মানেই হল ভবিষ্যত উজ্জ্বল।
অতীত নিয়ে একটি বিখ্যাত উক্তি সর্বদা মনে রাখবেন, “অতীত হল ইতিহাস, ভবিষ্যত হল রহস্য, বর্তমান হলো আল্লাহর দেওয়া উপহার”