(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
জুমুআর খুৎবা আরবি ভাষায় দিতে হবে নাকি আপনাপন মাতৃভাষায় দিতে হবে, এ বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দরভাবে সমাধান কৃত একটি বিষয়।
যুগ যুগ ধরে পুরো পৃথিবীর মানুষ আরবীতে খুৎবা দিয়ে আসছে।
এটা নিয়ে কিছুদিন আগেও ছিলনা কোন বিতর্ক বা লিফলেট বাজি।
তবে বর্তমানে হাদিসের দোহাই দিয়ে কিছু মানুষ আত্মপ্রকাশ করেছেন,এবং তারা খুব জোর দিয়ে প্রচার করেছেন যে,
জুমুআর খুৎবা আরবিতে দেওয়া মারাত্মক ভুল,বরং যুক্তির দাবি হল তা নিজ নিজ মাতৃভাষায় দিতে হবে।
এই ফিৎনাবাজ গুষ্টি সবার পরিচিত লা-মাযহাবি। এই লা-মাযহাবিদের অন্যযত শায়েখ খলিলুর রহমান বিন ফজলুর রহমান
উনার লিখিত ” চার মাযহাবের অন্তরালে ” বইয়ের ২৬ ও ২৭ নং পৃষ্ঠায় তিনি শরিয়তের অন্যতম বিষয় ইজমা ও কিয়াস কে অস্বীকার করেছেন।
উনার মতে কোরআন ও সহিহ হাদিস ছাড়া অন্য কিছু যেমন আমলযোগ্য নয় তেমনি গ্রহণযোগ্য ও নয়।
অথচ এই লা- মাযহাবি ভাইদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে অনেক অনারবি জুমুআর নামাজ পড়েছেন,
এমনকি সাহাবায়ে কেরাম বিশ্বের আনাচে কানাচে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছেন।
এবং তারা যেখানেই গেছেন, সেখানে জুমুআর খুৎবা স্থানিয় ভাষায় না দিয়ে আরবীতেই দিছেন।
এখন আপনারা কোরআন,হাদিস,বা ইতিহাস থেকে একটি প্রমাণ দেখান যে নবীজী সাঃ বা সাহাবা আজমাঈন জুমুআর খুৎবা আরবিতে না দিয়ে অন্য ভাষায় দিয়েছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে তারা কোরআন হাদিস রেখে বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাইবে যে,জুমুআর খুৎবা মানুষে বুঝার সুবিধার্তে মাতৃভাষায় দিতে হবে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা!
এপর্যায়ে দেখে নিন শায়খ মুজাফফর বিন মুহসিন এর ইজতিহাদ।তিনি “জাল হাদীসের কবলে রাসুল সাঃ এর সালাত “
এই বইয়ের ৩৪৭ নং পৃষ্ঠায় লিখেন,” বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সামনে আরবি ভাষায় জুমুআর খুৎবা দেওয়া অর্থহীন এবং সুন্নাতের বর খেলাফ।
রাসুল সাঃ মানুষের সামনে আরবি ভাষায় খুৎবা দিতেন না; বরং তিনি তার মাতৃভাষায় খুৎবা দিতেন,যা ছিল আরবি।
বাহ্!চমৎকার ইজতিহাদ
আচ্ছা এখন প্রশ্ন হল -তবে সাহাবায়ে কেরাম অনারবে কি ঐ এলাকার ভাষায় খুৎবা দিয়েছেন?
তাদের কারো কি এই কিয়াস করার যোগ্যতা ছিল না?
আর তারা কেনইবা বল্লেন বল্লেন যে, আরবি ভাষায় খুৎবা দেওয়া হল আমলে মুতাওয়ারাস,তথা সর্বযুগ থেকে চলে আসা আমল।
জুমআর খুৎবা আরবীতে দিতে হবেই।
এসম্পর্কে ইমাম নববী রহঃ বলেন – অর্থাৎ “জুমুআর খুৎবা ও অন্যান্য খুৎবার রুকন হলো আল্লাহর হামদ,
আল্লাহর হামদ ছাড়া জুমুআর খুৎবা সহিহ হবে না।ওয়াজিবের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো আলহামদুলিল্লাহ বলা।
এ বিষয়ে বিস্তারিত রয়েছে ফিকহের কিতাব সমূহে। খুৎবার জন্য শর্ত হলো তা আরবি ভাষায় হতে হবে (১)
শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহঃ বলেন
অর্থাৎ “জুমুআর খুৎবা আরবি ভাষায় হতে হবে,পূর্ব ও পশ্চিমের মুসলমানদের ধারবাহিক আমল হওয়ার কারণে।এখন জানার বিষয় হল,
খুৎবা কি ভাষন? নাকি শরিয়তে তার ভিন্ন কোন হুকুম রয়েছে
যদি অন্যান্য নসিহতের ন্যায় খুৎবা হয়,তাহলে খুৎবা মাতৃভাষায় দেওয়া উচিত।কেননা মানুষকে আপনি নসিহত করছেন।
অথচ অধিকাংশ মানুষ তা বুঝতে পারছে না।শরিয়তের অধিকাংশ আহকাম এমন রয়েছে,অধিকাংশ অনারবী মানুষ বুঝে না।
তা সত্ত্বেও সেগুলো আরবি ভাষায় দেওয়া হচ্ছে। যেমন আজানের কথাই ধরুন। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ আরবি বুঝে না।
আজানে কি বলা হচ্ছে সেটা তার পুরো জীবনে হয়তো জানা হয়নি।যদি আজান বাংলাতে দেওয়া হয়,তাহলে সকলেই বুঝতে পারে।
খুৎবা যে যুক্তিতে বাংলাতে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সে যুক্তি আজানে ও প্রয়োগ হয়।
কিন্তু যুগ যুগ ধরে আজান আরবীতে প্রধান করা হচ্ছে।
আজান মাতৃভাষায় দেওয়ার জন্য কেউ ফতোয়া জারি করেন নি,বা লিফলেটবাজি করেন নি।
হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে ,খুৎবা হলো যিকির
আর যিকিরের ক্ষেত্রে শরয়ী উসুল হলো -শরী ত প্রণেতা যে ভাষায় তা আদায় করেছেন,সে ভাষায় তা আদায় করতে হবে।
উদাহারণতঃ প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩বার সুবহানাল্লাহ,৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ,৩৪বার আল্লাহু আকবার বলার ফজিলত রয়েছে।
এখন কেউ যদি ৩৩বার আল্লাহ পবিত্র,৩৩বার সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর,৩৪বার আল্লাহ মহান পড়ে,তাহলে নিশ্চিত যে, সে হাদিসে বর্ণিত সাওয়াব পাবে না।
খুৎবা যে যিকির এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস দেখুন
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিতঃ রাসুল সাঃ বলেন,অর্থাৎ “যে ব্যক্তি জুমুআর দিনে ফরজ গোসল করল,
তারপর সর্বপ্রথম মসজিদে আসলো,সে একটি উঠ আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার সাওয়াব পেল।
তারপর যে আসবে সে একটি গরু কোরবানি করার সাওয়াব পেল,তারপর যে আসলো সে একটি ছাগল কোরবানি করার সাওয়াব পেল,
তারপর যে আসলো সে একটি মোরগ সদকার সওয়াব পেল,তারপর যে আসলো সে একটি ডিম সদকার সওয়াব পেল।
এরপর যখন ইমাম সাহেব খুৎবা দেওয়ার জন্য বের হন, তখন ফিরিশতাগন মসজিদে উপস্থিত হয়ে যিকির তথা খুৎবা শুনেন।(৩)
এই হাদিস থেকে বুঝা গেল খুৎবা হলো যিকির এ জন্য ফিরিশতাগন খাতাপত্র গুটিয়ে গভীর মনযোগের সহিত খুৎবা শুনেন।
যিকির শরিয়ত প্রণেতার ভাষায় করতে হবে, এজন্য যুগ যুগ ধরে আরবী আজমী সবাই আরবি ভাষায় খুৎবা দিয়ে আসছেন।
শ্রোতাদের বোধগম্য নয় এ যুক্তি দিয়ে মাতৃভাষায় প্রধানের বিষয়ে লিফলেট চালাচালি করেন নি।