(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
بسم الله الرحمن الرحيم
আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে , প্রতি সপ্তাহে একদিন মসজিদে মাইকে চাঁদা উঠানো।
আছরের পর ইমাম সাহেব চাঁদা দানের প্রতি উৎসাহমূলক ওয়াজ-নসীহাত মাইকে করবেন,
কেউ দান করলে মাইকেই তারজন্য দোয়া করা হয়। একদিন বিকেলে যখন দারুল ক্বিরাত ছুটি হলো,
ইমাম সাহেব আছরের পর আমাকে মসজিদের মাইক হাতে দিয়ে বললেন ওয়াজ করার জন্য।
পাঁচ বছরের শিশু আমি মাইকে আর কি ওয়াজ করব।
কিন্তু বাড়িতে বা দারুল ক্বিরাতে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ওয়াজ করতে যেহেতু ইমাম সাহেব শোনেছেন উনার এ আত্মবিশ্বাস ছিলো যে আমি পারব।
দারুল ক্বিরাতে যুহরের পর খতমে খাযেগান শেষে উস্তাদগণ ছাত্রদেরে সামনে রেখে চাঁদা উঠানোর উদ্দেশ্যে ওয়াজ করতেন,
আমি তা খুদেওয়ার পর ওইসব মুখস্ত কাহিনী দিয়ে ওয়াজ করতে শুরু করি।
আমিই এ এলাকার এমন সন্তান যে এত অল্প বয়সে মাইকে ওয়াজ করেছি।
তাই এলাকার ছোট-বড় , পুরুষ-নারী নির্বিশেষে একটি নজর দেখার জন্য প্রবল আগ্রহভরে ছুটে আসতে লাগলো।
তাই এদিনের চাঁদা অন্যদিনের তুলনায় অনেক গুণে বেশি।
মাগরিবের পূর্ব মূহুর্তে যখন চাঁদা তুলা শেষ হলো,
ইমাম সাহেব তখন আমার পরিচয় আমার পিতার নাম সহ মাইকে উল্লেখ করে বললেন যে, আজ অমুখ ওয়াজ করেছেন।
এলাকায় সাড়া পড়ে গেল। গ্রামের অনেক মহিলারা আমাকে দেখতে বাড়ি আসতে শুরু করলো।
লোকেরা ইমাম সাহেব বা হুজুরদের যেভাবে দাওয়াত দিয়ে দুআ-দুরূদ পড়িয়ে হাদিয়া দিত, আমাকেও এরূপ করতে লাগলো।
নাম ধরে আমাকে লোকেরা ডাকত না, সম্মান সূচক শব্দ, মেয়াছাব বলে ডাকত।
এসময় আমার প্রতি অনেকের অন্ধ ভক্তি শুরু হয়ে গেলো।
এক ব্যক্তি আমাকে তার বাড়ি নিয়ে তার স্ত্রীকে আমার সামনে এনে বললো,
“মেয়াছাব, ফুঁ দিয়া দেউকা যেন একটা ছেলে হয়।” আমি দিলাম।
অবশেষে ছেলে হলো। আমার প্রতি তাদের বিশ্বাস আরো প্রগাঢ় হলো।
এই বাড়িই তাদের আত্মীয় এক মহিলা এসেছিলেন।
তাদের মুখ থেকে আমার কাহিনী শোনে আমাকে এসে বললো,
আমাকে এ সংবাদটা দেন না, আমি বেহেস্তে যাব নাকি দোযখে।
আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবানীতে আমি তখন সঠিক একটি যবাব দিয়ে ছিলাম।
আমি বললাম, যদি ভালো আ'মাল করেন তবে জান্নাতে যাবেন অন্যতায় জাহান্নামে।
মহিলা বললো আমি এমন যবাব চাইনি, আমি চেয়েছি শিওর করে একটি বলতে।
আমি মহিলাকে আগের যবাবই শোনিয়ে দিলাম।
মহিলাটি তখন অসন্তুষ্টের মতো নিরব হয়ে গেলো। এরূপ গাইবী খবর আরো অনেকে জিজ্ঞেস করত।
বড় ভাই মাওলানা আব্দুন নূর শমশের নগর দারুসসুন্নায় পড়তেন।
যখনই মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে এসে কয়েকদিন পর আবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেন,
তখনি ভাইয়ার সাথে মাদরাসায় যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিতাম।
১৯৯৯ সনের এমনি একদিন বয়স তখনো পাঁচ রানিঙ্গে। ভাইয়ার সাথে মাদরাসায় যেতে কান্না জুড়ে দিলাম।
আব্বু তখন বললেন, ঠিক আছে তাকে নিয়ে যাও। তখন মনের ভেতর দিয়ে এক অবর্ণনীয় আনন্দের স্রোত বয়ে চলছিলো।
অতি দ্রুত পুকুরের দিকে ছুটে চলি। করো অপেক্ষা না করে নিজে নিজেই পরিষ্কার হয়ে প্রস্তুত হয়ে যাই। চলবে….