(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
মনে রাখতে হবে যে, কবীরা গোনাহের তিনটি স্তর রয়েছে।
যথা- ১) সবচেয়ে জঘন্য কবীরা গোনাহ হল কুফরী করা এবং তার কাছাকাছি হলো ভ্রান্ত আকীদা পোষণ করা।
২) হক্বকুল ইবাদ বা বান্দার হক নষ্ট করা অর্থাৎ মুসলমানের জানমাল ও ইজ্জতের উপর অবিচার করা।
আল্লাহ তায়ালা নিজের হক ক্ষমা করে দেবেন ; কিন্তু বান্দার হক ক্ষমা করবেন না।
ইমাম বাগূবী (রহ.) হযরত আনাস (রাযি.)-এর থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
কিয়ামতের দিন আরশ থেকে এক ঘোষক আহবান করে বলবে, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতগণ !
আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সকল মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
এখন তোমরা পরস্পরের হক ক্ষমা কর এবং বেহেস্তে প্রবেশ কর। হাফেজ সিরাজী বলেন-
“কাউকে কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করোনা, এছাড়া যা ইচ্ছা করে যাও। কেননা আমাদের শরীয়তে এর চেয়ে মারাত্মক কোন গোনাহ নেই”।
৩) হক্কুল্লাহ বা আল্লাহ তায়ালার হক নষ্ট করা। যেমন: নামাজ, রোজা ইত্যাদি।
হাদীসে বর্ণিত কবীরা গুনাহগুলোর বিবরণ নিম্নে
হাদীস শরীফে যেসব কবীরা গোনাহের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো হলো,
(১) আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে শরীক করা।
(২) মাতা পিতার অবাধ্য হওয়া।
(৩) কাউকে হত্যা অর্থাৎ জানে মেরে ফেলা।
(৪) মিথ্যা কসম করা।
(৫) মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।
(৬) সতী-সাধবী মহিলাকে যিনার অপবাদ দেওয়া।
(৭) এতিমের মাল খাওয়া।
(৮) সুদ দেওয়া-নেওয়া।
(৯) যুদ্ধে কাফেরদের মুকাবেলা করা থেকে পলায়ন করা।
(১০) জাদু করা।
(১১) কাফেরদের ন্যায় নিজের মেয়েকে হত্যা করা।
(১২) যিনা করা (বিশেষ করে প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে)।
(১৩) চুরি করা।
(১৪) ডাকাতি ও ছিনতাই করা, যা আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করার শামিল।
(১৫) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা।
হাদীস শরীফে আছে : প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা, সাধারণ দশজন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করা অপেক্ষা মারাত্মক।
হাদীস শরীফে আছে, মাতা-পিতাকে গালি দেয়া মহাপাপ। সাহাবাগণ বললেন, মানুষ মিজের মাতা-পিতাকে গালি দেয় কি করে?
রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, মানুষ যখন অন্যের মাতা-পিতাকে গালি দেয়, তখন তারা যেন নিজেদের মাতা-পিতাকেই গালি দিল।
ফাসেকের প্রশংসা করা কিরূপ?
ফাসেকের প্রশংসা করা হারাম। হাদীস শরীফে আছে, আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তির (ফাসেকের) প্রশংসাকারীকে উপর রাগান্বিত হন।
যার ফলে আরশ কেপে ওঠে।
কাউকে অভিশাপ দেয়া কেমন?
যদি কেউ অন্যকে লানত করে আর সে ব্যক্তি লানতের উপযুক্ত না হয়, তবে লানতকারীর উপর সে লানত ফিরে আসে।
হাদীসে বর্ণিত মুনাফিকের আলামতগুলো কি কি?
হাদীসের ভাষ্যমতে, মুনাফেকের আলামত হলো ৫টি:
(১) মিথ্যা বলা। (২) ওয়াদা ভঙ্গ করা। (৩) আমানতের খিয়ানত করা। (৪) অঙ্গীকার পুরো না করা। (৫) ঝগড়া-বিবাদের সময় গালাগালি করা।
শিরক ও মাতা-পিতার অবাধ্যতা কি মারাত্মক গোনাহ?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় কিংবা পুড়িয়ে ফেলা হয়।
মাতা-পিতার অবাধ্য হবে না। যদিও তারা তোমাকে স্ত্রী-পুত্র, মাল-সম্পদ সব কিছু ছেড়ে দিতে আদেশ করে।
স্ত্রীর উপর স্বামীর হক কিরূপ?
স্ত্রীর উপর স্বামীর হক এত বেশী যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যদি আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীদেরকে বলতাম তারা যেন তাদের স্বামীকে সেজদা করে।
যদি স্বামী স্ত্রীকে বলে যে, হলদে পাহাড়ের পাথরগুলো কালো পাহাড়ে আর কালো পাহাড়ের পাথরগুলো সাদা পাহাড়ে নিয়ে যাও স্ত্রীর তাই করতে হবে।
স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কিরূপ?
হাদীস শরীফে আছে, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীদের নিকট উত্তম।
মহিলাদেরকে বাম পাজরের হাড় থেকে বানানো হয়েছে, তা সোজা করা সম্ভব নয়।
মহিলাদের বক্র আচরণে ধৈর্যধারণ করে তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করা উচিৎ। তাদের শত্রু বানিয়ে রাখতে নেই।
(অর্থাৎ তাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত)।
যদি তুমি নিজ স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট হও (আর সংশোধনের উপযুক্ত মনে না কর) তাহলে তাকে তালাক দিয়ে দাও।
সগীরা গোনাহকে হালকা মনে করা ও তা করতে থাকা এবং এটাকে বৈধ মনে করা কিরূপ?
সগীরা গোনাহকে হালকা মনে করা এবং বারংবার তা করতে থাকা কবীরা গোনাহ। ছগীরা গোনাহকে বৈধ মনে করা নির্ঘাত কুফরী।
ইমাম বুখারী (রহ.) হযরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
তোমরা এমন কাজ করে থাক যেগুলোকে তোমরা চুলের ন্যায় হালকা ও সহজ মনে কর;
অথচ সেগুলোকে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ধ্বংসাত্মক কাজ বলে মনে করতাম।
বলাবাহুল্য যে, শরীয়তের হুকুম-আহকামের আলোচনা অতি ব্যাপক। অনেক বড় বড় কিতাব দ্বারা পরিপূর্ণ।
সাধারণ পাঠকদের জন্য আবশ্যকীয় কিছু বিধান এখানে লেখা হল। আরো বেশী জানতে হলে উলামায়ে কেরামের শরণাপন্ন হতে হবে।