আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন:
হে ইমানদারেরা, জুমার দিন যখন নামাজের জন্য ডাকা হবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জন্যে ধাবিত হও, এবং কেনা-বেচা পরিত্যাগ কর।
আর এটা হলো তোমাদের জন্যে সর্বোত্তম যদি তোমরা জানতে।
(সূরা জুমা, আয়াত-৯)
হযরত যাবির (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের ঈমান রাখে, তার অবশ্যই জুমার দিনে জুমার নামাজ আদায় করা কর্তব্য।
তবে রোগী, মুসাফির, মহিলা, শিশু ও কৃতদাস এ কর্তব্য হতে মুক্ত। যদি কোন লোক খেল-তামাশা কিংবা ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত হয়ে,
এ নামাজ হতে গাফেল থাকে, তাহলে আল্লাহ তায়ালাও তার ব্যাপারে বিমুখ থাকবেন। আর আল্লাহ হলেন মুখাপেক্ষীহীন ও প্রশংসিত।
(দারে কুতনী)
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা নিম্নে করা হল
জুমার নামাজ হিজরতের পূর্বক্ষণ ফরজ হয়।
হুজুর (সা:) মক্ষা শরীফে হতে হিজরত করে প্রথমত মদিনার উপকণ্ঠে কোবা নামক স্থানে সোমবার দিন উপস্থিত হন।
আর সেখানে তিনি চার দিন অবস্থান করেন। অত:পর পঞ্চম দিনে মদিনার দিকে রওয়ানা হন। এদিনটি ছিল শুক্রবার।
পথে বনি সালেম ইবনে আওজ গোত্রের বস্তিতে উপস্থিত হলে নামাজের সময় হয়ে যায় এবং হুজুর (সা:) সেখানেই সর্বপ্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন।
জুমার নামাজ যে অবশ্য পালনীয় ফরজ, উল্লেখিত হাদীসে তার উল্লেখ করা হয়েছে।
জাহেলিয়াতের যুগে জুমার দিন বলে কোন দিন ছিল না।
আরবরা এদিনটিকে ইয়াওমূল আরুবা বলতো।
জুমার নামাজের নির্দেশ দানের পরই এ দিনটির নামকরণ করা হয় “ইয়াওমূল জুমুয়া” বা জুমার দিন।
কেননা এ দিনটিতে মুসলমানেরা এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদে (কেন্দ্রীয় জায়গায়) জুমার নামাজ আদায়ের এবং খোতবা শুনার জন্য একত্রিত হয়।
আনুষ্ঠানিক ইবাদতের দৃষ্টিতে জুমার এ সম্মেলনটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিতেও এ সম্মেলনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
জুমার নামাজ অবশ্য পালনীয়। শরীয়ত সম্মত ওজর ব্যতীত কিছুতেই এ নামাজ ত্যাগ করা যাবে না।
তবে নারী, শিশু, রোগী, মুসাফির ও কৃতদাসকে এ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এরা যদি আদায় করে, তাহলে তাদের জুমার নামাজ আদায় হবে, জোহর পড়তে হবে না। মহিলারা জুমার দিন জোহর নামাজ আদায় করবে।
হযরত সামুরা ইবনে জুনদুর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম (সা:) বলেছেন, তোমরা জুমার নামাজে হাজির হও এবং ইমামের নিকট দাড়াও।
কেননা যে ব্যক্তি জুমার নামাজে সকলের পিছনে হাজির হবে, পরিণামে সে জান্নাতে প্রবেশের ব্যাপারেও সকলের পিছনে থাকবে।
অথচ সে অবশ্যই জান্নাতের উপযুক্ত।
(মুসনাদে আহমদ)
হযরত আবু জায়াদ যমরী (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুজুর (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি গাফলতি করে পর পর তিনটি জুমায় অনুপস্থিত থাকবে।
(অর্থাৎ জুমার নামাজ আদায় করবে না) আল্লাহ তার দিলে মোহর লাগিয়ে দিবেন।
(আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, দারেমী, মালেক)
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা নিম্নে উল্লেখ করা হল
জুমার নামাজ যে কত গুরুত্বপূর্ণ এ হাদীসে তার-ই ইঙ্গিত রয়েছে।
বিনা ওজরে পর পর তিনটি জুমায় অনুপস্থিত থাকলে আল্লাহ তার দিলকে গাফেল ও মোহরাঙ্কিত করে দেয়, ফলে তার দিল কঠোর হয়ে যায়।
জুমার দিনের ফজীলত ও তাৎপর্য
হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, সূর্যোদয় হওয়া দিন সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন।
জামায় দিনেই হযরত আদম (আ:) কে তৈরী করা হয়েছে। এ দিনেই তাকে বেহেশতে প্রবেশ করান হয়েছে।
আর এ দিনেই তাকে বেহেশত হতে বের করে দুনিয়াতে পাঠান হয়েছে। আর কিয়ামত জুমার দিনই অনুষ্টিত হবে।
(মুসলিম)
হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলতেছেন অবশ্য অবশ্য জুমার দিনে এমন একটা সময় আছে,
যখন কোন মুসলিম বান্দাহ আল্লাহর কাছে কল্যাণকর কিছু কামনা করলে অবশ্যই তাকে তা দেওয়া হয়।
(বুখারী, মুসলিম)