পঞ্চম পর্ব পড়তে নিচে লেখাতে ক্লিক করুন
ঈমানের পরিচয় ও তাঁর প্রকার ৫ম পর্ব
ঈমানের পরিচয় ও তাঁর প্রকার
৬ষ্ঠ
১৪. ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধি পাওয়া বিষয়ে ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন,
ঈমান বাড়েও না, কমেও না। কেননা ঈমান কমে যাওয়ার মানে যেমন কুফর বৃদ্ধি পাওয়া, তেমনি ঈমান বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো কুফর হ্রাস পাওয়া।
সুতরাং একই ব্যক্তি একসাথে মুমিন আবার কাফের, এটা কিভাবে বৈধ হতে পারে।(আল-ওয়আসইয়্যআহ-৪৯)
ব্যাখ্যা: ঈমানের দুটি দিক রয়েছে–
ক. ঈমানের সত্তাগত দিক ।
খ. ঈমানের গুণগত দিক।
ক. ঈমানের সত্তাগত দিক: সত্তাগত দিক থেকে ঈমান এমন কোন জিনিস নয়, যা ভাগ ও খন্ড খন্ড হতে পারে।
এ কারণেই সত্তাগত দিক থেকে সকল মুমিনের ঈমান যেমন এক ও সমান, তেমনি সেই একই কারণে সত্তাগত দিক থেকে ঈমান বাড়েও না কমেও না।
কেননা ঈমান কমে যাওয়ার অর্থ হলো কুফর বৃদ্ধি পাওয়া আর ঈমান বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হলো কুফর কমে যাওয়া।
এটা তো স্পষ্ট যে ঈমান ও কুফর পরস্পর বিপরীতমুখী দুটি জিনিস। সুতরাং একসাথে হওয়া অসম্ভব।
খ. ঈমানের গুণগত দিক: ঈমানের গুণগত দিক হলো ঈমানের নূর ও পূর্ণতা। আমলের মাধ্যমে ঈমানের নূর যেমন বৃদ্ধি পায়,
তেমনি গুণগত দিক থেকে তা পূর্ণতা লাভ করে।কিন্তু সত্তাগতভাবে ঈমান বৃদ্ধিও পায় না, এবং হ্রাসও হয় না।
কাজে আমলের সাথে ঈমানের সত্যাগত দিকের কোন সম্পর্ক নেই বরং এর সম্পর্ক হল ঈমানের গুণগত দিকের সাথে।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য)
নবি-রাসুল, সিদ্দিকিন ও সাধারণ মানুষের ঈমান সত্তাগত দিক থেকে সমান হলেও শক্তি ও মজবুতে দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে।
নবিদের ঈমান বিলুপ্ত হওয়া অসম্ভব, কেননা তা বাস্তব দেখার মাধ্যমে অর্জিত।
সিদ্দিকিনদের ঈমান মজবুত দলিলের মাধ্যমে অর্জিত হওয়ার কারণে বিভিন্ন সন্দেহ- সংশয় টলাতে পারে না।
পক্ষান্তরে অন্যান্য সকল মানুষের ঈমান সর্বদা একটা ঝুঁকিতে থাকে কেননা তা নবি ও সিদ্দিকিদের মত মজবুত দলিলের মাধ্যমে অর্জিত নয়।
এইজন্যেই সাধারণ মানুষ সর্বদা দোয়ায় বলবে,
{ربنا لا تزغ قلوبنا بعد إذ هديتنا}
হে আমাদের রব ! আপনি আমাদের হেদায়েত দান করার পর আমাদের অন্তরকে বিচ্যুত করবেন না।( সূরা আলে ইমরান-৮)
১৫. ঈমানে তাহকিকি ও ঈমানে তকলিদি:
ঈমানে তাহকিকি হচ্ছে, যে সকল বিষয়ে ঈমান রাখা জরুরি, তার প্রতিটি বিষয়ের উপর দলিলসহ ঈমান রাখা।
আর ঈমানে তাকলিদি হচ্ছে, দলিল না জেনে ঈমান রাখা। উভয় প্রকার ঈমানের গ্রহণযোগ্য। দলিল সহ ঈমান রাখা ঈমানের মূল শর্ত নয়, বরং ঈমান পূর্ণতার শর্ত।
সূত্রঃ বুনিয়াদি আকাইদ
লেখকঃ মাওলানা বেলাল বিন আলী