(muslimbd24.com)
খতনা অনুষ্ঠান
বর্তমান সমাজে খতনা অনুষ্ঠান এমন আকার ধারণ করেছে যে, তা বিবাহ অনুষ্ঠান থেকেও অনেক অনেক জমকালো হয়ে থাকে।
এখন আমরা এই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিকের পর্যালোচনা করব।
(১) এই উপলক্ষে কার্ড প্রেরন, লোকের মাধ্যমে বা মোবাইলে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে দাওয়াত প্রদান করা হয়! যা সুস্পষ্টভাবে সুন্নতের পরিপন্থী
কাজ।
মুসনাদে আহমাদে হযরত হাসান রাঃ হতে বর্ণিত আছে, কোন এক ব্যক্তি হযরত উসমান ইবনে
আবিল আছ রা. কে খতনা অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তথায় যেতে অসম্মতি প্রকাশ করেন! ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি
বলেন আমরা রাসুলে মকবুল সা. এর জীবন কালেও এই ধরনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতাম।
(২) কোনো কোনো ক্ষেত্রে বালক প্রাপ্তবয়স্কের নিকটবর্তী হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে একমাত্র খতনাকারী ডাক্তার ছাড়া অন্য কারো পক্ষে তার
গুপ্তাঙ্গ দেখা হারাম!
অথচ বাড়ির প্রায় সকলেই সেই সময় সেখানে উপস্থিত থাকে এবং সমস্ত কর্ম প্রক্রিয়াটি দলবদ্ধ
হয়ে অবলোকন করে অথচ এই দিকে কারো লক্ষ্য থাকে না। সেখানে উপস্থিত সকলের পাপের জন্য আমন্ত্রণকারীকে অবশ্যই তার দায়ভার গ্রহণ করতে হবে।
(৩) এই অনুষ্ঠানে উপহার দানের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। যার অনেক অপকারিতা রয়েছে। যেমন:
( ক) পুরষ্কার দাতার সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় সমাজের চোখে নিন্দিত হওয়ার ভয়ে এই উপহার দিয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে দাতার মনে
আন্তরিকতা থাকে না!
লোকদেখানো ও অহংকার প্রকাশের উদ্দেশ্যে অর্থ ব্যয় করা গুনাহের কাজ।
( খ) দান বা উপহার প্রদান একটি সদাচার। ইহার জন্য কাহাকেও বাধ্য করা শরীয়তে অনুমোদন নাই। উপহার প্রদান না করার কারণে কাহাকেও তিরস্কার
করা বা বংশের সুনাম নষ্টকারী বলে মনে করাও বাধ্য করার শামিল।
দাতা সন্তুষ্ট হয়ে দিলও ইহাতে উপরোক্ত তিরস্কার
হতে আত্মরক্ষা করা বা সুনাম অর্জনের আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই বিদ্যমান থাকে। কুরআন-হাদীসের মর্মানুযায়ী যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
(গ) এই উপলক্ষে হালুয়া-রুটি বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়,যা একটি অযথা ও সম্পূর্ণ অযৌক্তিক কর্ম। তাছাড়া ইহার পিছনে যেহেতু প্রশংসিত হওয়ার
অভিলাষ ও লোক দেখানোর ইচ্ছা বিদ্যমান থাকে সেই কারণেই ইহা সম্পূর্ণ অবৈধ।
(৪) বালকের নানার বাড়ি থেকে এই উপলক্ষে কিছু অর্থকরী দেওয়ার রীতি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনের মধ্যে প্রচলিত আছে।
এমনকি নানার বাড়ীর অসচ্ছলতা সত্ত্বেও সুদে অথবা সম্পত্তি বন্ধক রেখে হলেও টাকা যোগাড় করে এই সময় দিতেই হবে।যা কোনো কোনো
সমাজের রীতি। আর তখন সমাজের প্রতিপত্তিশালী সুদি মহাজনেরা এভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায় সম্পত্তি দখলের সুযোগ পায়।
মোটকথা এই সময় উপহার প্রদানের অনুষ্ঠানটি এতই গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয় যে, সুদের উপর ঋণ গ্রহণ করে হলেও উহা দিতে হইবে!
এই ধরনের একটা অপ্রয়োজনীয় অসঙ্গত কাজ ফরয-ওয়াজিব এর চাইতেও অধিক গুরুত্বের সহিত পালন করা কি শরীয়তের বিধান সুস্পষ্ট লঙ্ঘন নহে?
(৫) অঞ্চল ভেদে কোথাও কোথাও খতনাকৃত বালক আরোগ্য লাভের পর প্রথম গোসল করার দিন নাচ গানের আয়োজন করা হয়।
যার অপকারিতা সুস্পষ্ট এবং নাচ গানের অনুষ্ঠান হারাম ও নিষিদ্ধ।
ইহা সবার জানা বিষয়।
আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন।।