(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
সমাজে অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যারা বাহিরের সবার কাছে ভালো মানুষ,
নিয়মিত নামাজ পড়েন, দ্বীনদার, আল্লাহওয়ালা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।
প্রকাশ্যে তাকে পাপ কাজ করতে দেখা যায় না। কিন্তু গোপনে গোপনে সে নানা ধরনের গুনাহের কাজে লিপ্ত।
অনেকে তো প্রকাশ্যে ভালো মানুষ হলেও গোপনে কবিরা গুনাহ্ করেন। যা তার সব ইবাদতকে নষ্ট করে দেয়।
প্রকাশ্য গুনাহের চেয়ে গোপনে করা গুনাহ্ বেশি ভয়াবহ
কারণ, এটা করা জেনে-বুঝে, আয়োজন করে ইচ্ছাকৃতভাবে।
যখন কেউ গোপনে গুনাহ্ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় বিদায় নিয়ে নেয়।
মোনাজাতে চোখের পানি আসে না। ক্রমান্বয়ে সে ধ্বংস ও অধঃপতনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
অবস্থা কখনও এত ভয়ানক হয় যে, তার ঈমান পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায় এবং ঈমানহীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বর্তমান সময়ে গোপন গুনাহের সরঞ্জাম অনেক বেশি
আর উপকরণগুলোও সহজলভ্য। তাই সমাজের মানুষ দিন দিন গোপন গুনাহে বেশি জড়িয়ে পড়ছে।
সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া দ্বীনদার শ্রেণির মানুষও বাদ পড়ছে না।
আল্লামা ইবনে জাওজি (রহ:) বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত সে,
যে মানুষের সামনে ভালো আমল করে, কিন্তু যে মহান সত্তা তার শাহরগ থেকেও অধিক নিকটবর্তী,
তার সামনে বদ আমল করে। বলা হয় গোপন গুনাহ ও অবাধ্যতার কারণে মানুষের খারাপ মৃত্যু (অপমৃত্যু) হয়।
সব আল্লাহওয়ালা এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, গোপন গুনাহ্ অধঃপতন ও অবনতির প্রধান কারণ।
গোপন গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার উপায়
(১)আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি কান্নাকাটি করে দোয়া।
তিনি যেন তার অবাধ্যতা,নাফরমানি ও সব ধরনের গুনাহ্ থেকে রক্ষা করেন।
(২) নফস তথা আত্মার সঙ্গে মোজাহাদা (লড়াই) করা, মনের কুমন্ত্রণা দূর করা
এবং আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা।
(৩) কিয়ামতের দিন গোপন গুনাহকারীদের আমলসমূহ ধূলিকণার ন্যায় উড়িয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করা।
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘আমি আমার উম্মতের কিছু মানুষ সম্পর্কে জানি, যারা কিয়ামতের দিন
তিহামার (বিখ্যাত পাহাড়) শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে।
কিন্তু আল্লাহ্ তাআ'লা সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন।
হযরত সাওবান (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন।
যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বললেন,
তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত।
তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক,
যারা একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত কর্মে (গোপন গুনাহ্) লিপ্ত হবে। [সুনানে ইবনে মাজাহ: ২/১৪১৮]
(৪)আল্লাহ্ তাআ'লার উপস্থিতির কথা চিন্তা করা। তিনি আমাকে সর্বদা দেখছেন এবং এ ব্যাপারে তাকে ভয় করা।
এ প্রসঙ্গে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক। [সূরা নিসা: ১]
(৫)গুনাহ্ করার সময় এ কথা চিন্তা করা, কেউ কি দেখলে আমি এমন গুনাহ্ করতে পারতাম?
এভাবে নিজের ভেতরের লজ্জাবোধ জাগ্রত করা। এ বিষয়ে হাদীসে ইরশাদ হযেছে,
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘তুমি তোমার পরিবারের কোনো প্রভাবশালী সদস্যকে যেমন লজ্জা পাও,
আল্লাহকে (কমপক্ষে) তেমন লজ্জা করো। [মুসনাদুল বাজ্জার: ৭/৮৯]
৬. এ চিন্তা করা, গুনাহরত অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে কিভাবে আমি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করব?
কারণ হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
প্রত্যেক ব্যক্তিকে (কিয়ামতের দিন) ওই অবস্থায় উঠানো হবে,
যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে। [সহীহ মুসলিম: ৪/২২০৬]
(৭) আল্লাহ্ তাআ'লার নিয়ামত ও জান্নাতের সুখ-শান্তির কথা স্মরণ করা
এবং জাহান্নামের আজাব ও ভয়ানক শাস্তি কল্পনা করা।
গোপন গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকতে একাকি না থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন হযরত উলামায়ে কেরাম গন।
মোবাইল ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে দূরে থাকা
ভালো মানুষের সান্নিধ্যে থাকা, অবসব সময়ে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত,
যিকির-আজকার ও ইসলামি/ইসলাহী বই অধিকহারে অধ্যয়ন করা।
আল্লাহ্ তাআ'লা আমাদের অন্তরে তিনার (মহব্বত ও ভয় জাগ্রত) রেখে
সকল প্রকার গুনাহ্ ত্যাগ করার খুব তাওফীক দান করুন।আমীন..!
আরো পড়ুন 👉আল্লাহ তাআলার ক্ষমা প্রাপ্তি ও গুনাহ মাফির দশটি মাধ্যম, দৃষ্টি সংযত রাখার ১০ টি উপায়, নিষিদ্ধ কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বেচে থাকলে ছোট-খাট গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব