(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, সৌদি আরবে এখনও তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান(রাঃ) এর নামে দলিল করা প্রপার্টি রয়েছে। রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও!
আরও মজার বিষয় হল- মাস ফুরালে এখনও তাঁর নামেই আসে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ওসমান(রাঃ) এর মালিকানাধীন বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণের কাজ!
অবাক করা এ ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য ইতিহাসের পথ ধরে আপনাকে একটু পেছনে নিয়ে যেতে চাই,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৩তম বছর।
মুসলমানরা মাত্র মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসেছেন। অচেনা পরিবেশে দেখা দেয় সুপেয় পানির তীব্র সংকট।
তৎকালীন সময়ে মদিনায় “বিরেরুমা” বা “রুমার কূপ” নামে এক ইহুদির একটি সুপেয় পানির কূপ ছিল।
ইহুদিরা এ সুযোগে কূপের পানি মুসলমানদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করল।
সাহাবা(রাঃ)গণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি সাহাবা (রাঃ)গণকে লক্ষ্য করে বললেনঃ
“তোমাদের মধ্যে কে আছো, যে এই কূপ মুসলমানদের জন্য ক্রয় করে দিবে। মুসলমানদের এই কূপ যে খরিদ করে দেবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে ঝর্ণা দান করবেন।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথায় হযরত ওসমান(রাঃ) ঐ ইহুদির কাছে এই কূপ ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।
ইহুদি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তিনি বললেন, “পুরো কূপ বিক্রি না করলে অর্ধেক বিক্রি করুন। এতে একদিন কূপের মালিক হব আমি। আর আরেক দিন হবেন আপনি।”
ইহুদি ওসমান(রাঃ)'র কথায় রাজী হলে ওসমান (রাঃ) অর্ধেক কূপ ক্রয় করে বিনামূল্যে পানি বিতরণ করতে লাগলেন।
লোকজন ওসমান(রাঃ)'র ক্রয় করা নির্ধারিত দিনে পানি সংগ্রহ করত এবং পরের দিনের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ করে রাখত।
ইহুদির দিনে কেউ পানি সংগ্রহ করতে যেত না। ফলে তার পানির ব্যবসা মন্দা হওয়ায় নিজেই পুরো কূপ বিক্রির জন্য ওসমান(রাঃ)'র কাছে প্রস্তাব পেশ করে।
ওসমান(রাঃ) সাথে সাথে রাজী হয়ে যান এবং ৩৫ হাজার রৌপ্য মুদ্রায় কূপটি কিনে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দেন।
এ সময় এক ধনী লোক ওসমান (রাঃ)'র থেকে কূপটি দ্বিগুণ দামে খরিদ করতে চাইলে তিনি বলেন
“আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি।” লোকটি মূল্য বাড়িয়ে বলতে লাগল। ওসমান(রাঃ)ও জবাবে-“আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও বেশি বলতে লাগলেন!”
শেষে ধনী লোকটি বলল, এমন কেউ আছে যে, আপনাকে কূপটির মূল্য ১০ গুণ বলেছে?
ওসমান(রাঃ) জবাবে বলেন, “আমার আল্লাহ আমাকে প্রতি নেকিতে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন।”
হযরত ওসমান(রাঃ) এর শাসনামলে এই কূপের চারপাশে খেজুর বাগান তৈরি হয়।
সময়ের চাকা ঘুরে বহু উত্থান-পতনের পর বর্তমান সৌদি রাজপরিবার সৌদি আরবের রাজসিংহাসনে বসার সময় এই বাগানে খেজুর গাছের সংখ্যা ১,৫৫০টিতে পৌঁছায়।
সরকার বাগানের চারদিকে দেয়াল তৈরি করে দেয় এবং এই ভূসম্পত্তি ওসমান(রাঃ)'র নামে দলিল করে দেয় এবং তার নামে খুলে দেন একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
সৌদির কৃষি মন্ত্রণালয় এই বাগানের সকল তদারকি করেন এবং বাগানের খেজুর বিক্রি করে অর্জিত অর্থ ওসমান(রাঃ) নামের ঐ অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন।
কিছুদিন পূর্বে ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মদিনায় একটি বড় প্রপার্টি ক্রয় করা হয়েছে।
ক্রয়কৃত উক্ত জায়গায় “হোটেল ওসমান বিন আফফান” নামে একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে।
এই হোটেল থেকে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় হবে বলে আশা করছে সৌদি সরকার।
এই অর্থের অর্ধেক অসহায়-দুস্থদের মানবতার সেবায় ব্যয় করা হবে। আর বাকী অর্ধেক অর্থ হযরত ওসমান(রাঃ)'র উক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
হযরত ওসমান(রাঃ)'র এ দান আল্লাহ এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, কি'আমত পর্যন্ত তা চালু থাকবে। আর তাঁর জন্য আখিরাতের অ্যাকাউন্টে তো সওয়াব জমা হচ্ছেই!
দুনিয়ার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সও ফুরাবার নয়! সুবহানাল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহু আকবার!!!!
আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি করে দান-সদকা এবং নেক আমল করার তাওফীক দান করুন
এবং আমাদের দান-সদকা সমূহ হযরত ওসমান(রাঃ)'র দান-সদকা সমূহের মতো কবুল করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা এবং হিফাযত করুন (আ-মীন)।