(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
আমার এলাকা থেকে শমশেরনগর যদিও বড়দের জন্য বেশি দূর নয়, কিন্তু আমার জন্যে তা হয়ে গেলো এক অসহনীয় লং যার্নিং।
রবির বাজার থেকে বাসে চড়ে রওয়ানা। বাসের উদ্ভট গন্ধ আমার মন-মস্তিষ্ক খারাপ করতে শুরু করে। শুরু হয় বোমি।
অবশেষে মাদরাসায় আধমরার মতো গিয়ে পৌঁছি। এখানে এসে যেই দেখলাম এখানকার মাটি, মানুষ আর প্রকৃতি সবই আমার অপরিচিত,
অমনি মাদরাসায় পড়ার সকল আগ্রহ আমার ধূলোয় মিশে গেলো। মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার কিছুদিন আগে আলীনগর প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছিলাম।
মাদ্রাসার প্রতি আমাদের বংশগত টান থাকায় স্কুলে মন বসত না। এদিকে এখন মাদরাসায় আসলামতে প্রাসঙ্গিক কারণে এখানেও মন বসতে চাইছে না।
এদিকে এখন মাদরাসায় আসলাম তো প্রাসঙ্গিক কারণে এখানেও মন বশতে চাইছে না।
দু'একদিন যখন কোনো মতে কষ্ট করে কেটে গেলো, মোটামুটি স্বাভাবিক হতে শুরু করি।
এখানেও আমাকে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করা হয়। ক্লাসের সবক্ব আলহামদুলিল্লাহ অতি দ্রুত মুখস্ত করে ফেলতাম। এজন্য উস্তাদদের কাছে প্রিয় হতে শুরু হই।
কয়েক ক্লাসের ছাত্রদের একত্র করে রূপসপুরী হুজুর একদিন কোরআন শরীফ পড়াতে বসেন। তিনি সূরা ইয়াসীনের প্রথম অংশ_ ” ইয়াসিন” বলে সুর দেন।
এরপর বাকি অংশ ছাত্রদের কাছ থেকে আদায়ের লক্ষে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, কিন্তু কেউ আর পড়ছে না।
মাদরাসায় আসার আগে আমি মক্তবে যবানী পড়তাম। কিন্তু কোরআন শরীফ পড়ে এমন এক ছাত্র আমাদের লাগা উত্তরের বাড়ির , রহমত আলী ওর নাম।
আমি তার পাশে বসতাম। সূরা ইয়াসীনে যখন তার সবক্ব ছিলো তখন ওর কাছ থেকে শুনে আমার সূরাটির প্রথম কয়েক আয়াত মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল।
এখন যখন হুজুর ছাত্রদের কাছ থেকে বাকি অংশ শোনতে চাচ্ছেন কিন্তু কেউ আর পড়ছে না এদিকে আমার তো তা মুখস্ত, তাই আমিই পড়তে শুরু করি।
অবিরাম যখন কয়েক আয়াত তিলাওয়াত করে থেমে গেলাম তখন সকলেই অবাক হলেন।
এদিকে হুজুর খুশির মৌজে বলে উঠলেন , বাবা এগুলো কি তোমার মায়ের পেঠ থেকে শিখে এসেছো ?
উস্তাদদের সকলে যদিও খুবই আদর করতেন, তারপরও মায়ের প্রতি কচি মনের টান আমাকে ব্যাকূল করে রাখত।
এদিকে বড় ভাইয়েরও অপরিপক্ক বুঝ ছিলো তাই তিনি স্থানে বেস্থানে আমাকে শাসাতে শুরু করতেন। এসব মিলে আমার আর সেখানে থাকা হলো না।
বাড়িতে এসে আবার স্কুলে যাওয়া শুরু। কিন্তু মাদ্রাসা থেকে ফিরে আসায় পরিবারের সদস্যরা মাঝে-মধ্যে আমার সাথে তিরষ্কারচ্ছলে কথা বলতেন।
তা আমার মনে খুবই ধরত। তাই আবারো মাদরাসায় যাওয়ার আগ্রহ জাগলো। এবার গিয়ে কষ্টমষ্ট করে কয়েক মাস থাকা হলো।
সেই সময়ের নমুজার মাওলানা হুসাইন আহমাদ সাহেবের কথা ভুলবার নয়। তিনি আমাকে সীমাহীন আদর করতেন।
উনার কাছেই আমি বাংলা, আরবি অক্ষর শিখি। ভোরে তিনি মক্তবে আমাকে আলিফ, বা, তা, ছা আর অন্য সময় ক, খ, গ, ঘ শিখান।
তিনি আমাকে নিজের ছেলে বলে অন্যের কাছে পরিচয় দিতেন। তাঁকে আব্বু বলে ডাকার জন্য আমাকেও তিনি উৎসাহিত করতেন।
১৯৯৯ সনের দিনগুলো এভাবে কেটে গিয়ে ২০০০ সনেরও কয়েকটি মাস কেটে গেলো। কিন্তু মাদ্রাসাতে এবারও আমার ভালো লাগছে না।
ভালো না লাগার পূর্বের দু'কারণ আমাকে এখনো পিড়া দিচ্ছে। চলে আসি মাদ্রাসা ছেড়ে। পরিবারে জুরেসুরে ঘুষণা দিতে থাকি মাদরাসায় না পড়ার কথা।
আব্বু বললেন, ঠিক আছে সে স্কুলেই পড়ুক। ২০০০ সনের বাকি অংশটুকু গ্রামের প্রাইমারীতে ক্লাস ওয়ানে পড়েই কাটাই।
আর মক্তবে এবার কোরআন শরীফে সবক্ব নিই। ছাত্রদের কেউ কেউ আপত্তি জানায়। বলে, সে সিপারা না পড়ে কোরআন শরীফ কি করে পড়তে যাবে।
কিন্তু কায়দা পড়েই আমার অভিজ্ঞতা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, কোরআন শরীফ পড়ে এমন অনেক ছাত্র থেকেও আমি কোরআন শরীফ ভালো পড়তে পারি।
এজন্য কারোর কথায় কান না পেতে হুজুর আমাকে কোরআন শরীফে সবক্ব দিয়ে দিলেন।
এদিকে ২০০০ সনের মাঝামাঝিতে মাদ্রাসার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে অতপর নতুন বৎসর শুরু হলো।
বড় ভাই এবার শমশেরনগর থেকে চলে আসলেন হাজীপুর ইউনিয়নের পীরের বাজার মাদ্রাসায়।
মেজ ভাই আব্দুল গফূর বাড়িতে থেকে গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে পড়তেন।
বড় ভাই যখন পীরের বাজার মাদ্রাসায় এসে ভর্তি হলেন তখন মেজ ভাইকেও সঙ্গে করে নিয়ে ওখানে ভর্তি করালেন।
এখন ভাইদের মধ্যে বড় কেবল আমিই বাড়িতে থাকি। কেটে গেলো ২০০০ সন।