(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
بسم الله الرحمن الرحيم
আরবী বর্ষপঞ্জীর শেষ মাস হলো জিলহাজ্ব।এ মাসে ইসলামের পঞ্চম স্থম্ভ হজ্জ পালন করা হয়।
মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা পালিত হয় এ মাসেই, ঈদুল আযহার দিনে কোরবানি করা হয়।
অনেকে কোরবানির সঙ্গে আকিকাও আদায় করতে চান,এখন প্রশ্ন হলো
কুরবানির সঙ্গে আকিকা আদায় হবে কি না
সম্প্রতি এ মাসআলা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
আমাদের দেশে অনেকেই বলেছেন যে, কুরবানীর সাথে আকিকা আদায় করার কথা সহিহ হাদিসে নাই। এজন্য কুরবানীর সাথে আকিকা আদায় হবে না।
এখানে প্রথমেই বলে রাখি যে,কুরবানী এবং আকিকা দুটি সতন্ত্র ইবাদত।এজন্য এ দুটি আলাদাভাবে আদায় করা উত্তম।
বাকি কেউ যদি এক সাথে আদায় করে, তাহলেও আদায় হবে।
কেননা উভয় ইবাদতের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। তা হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ।
এজন্য হাদিস শরীফে উভয় ইবাদতকে এক শব্দে نسك কোরবানী বলা হয়েছে।
তাই ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন যে,কোরবানির পশুতে অন্য কেউ আকিকার নিয়তে ও শরিক হতে পারে।
অথবা নিজের এক ভাগ দ্বারা ও আকিকা করতে পারে।
প্রথমে হাদিস টি দেখুন
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাঃ থেকে বর্ণিতঃ “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো,
তিনি বললেন তোমাদের যার সন্তান হয়,সে যদি তার সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি আদায় করতে চায়,
তাহলে যেন কোরবানি করে ফেলে,ছেলে হলে দুটি ছাগল দ্বারা এবং মেয়ে হলে একটি ছাগল দ্বারা”।(১)
এখানে লক্ষনীয় বিষয় হলো,নবীজী সাঃ আকিকাকে কুরবানী বলেছেন।বুঝা গেল উভয়ের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।
সুতরাং উভয়টি একসাথে আদায় করা যাবে। এবিষয়ে ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্য তুলে ধরছি।
ইমাম আবু বকর জাসসাস রহঃ মৃত্যু ৩৭১হিঃ বলেন
অর্থাৎ “যখন প্রত্যেকের উদ্দেশ্য হয়,আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ,যদিও তাদের কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়।
যেমন কেউ হজ্জের হাদি,কেউ হজ্জে কেরানের পশু,কেউ কুরবানীর নিয়ত করল।
তাহলে সকলের নিয়ত অনুযায়ী আদায় হয়ে যাবে।কেননা সকলের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।(২)
আমরা দেখতে পেলাম যে, প্রত্যেকের কুরবানী ভিন্ন ভিন্ন, কেউ ওয়াজিব কুরবানী,
কেউ হজ্জে কেরানের পশু,কেউ হজ্জের হাদি,সবাই মিলে এক পশুতে অংশগ্রহণ করলে সকলের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে।
কারণ ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য এক, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
আর আকিকার উদ্দেশ্যও যেহেতু তাই সেহেতু আকিকা কুরবানীর সাথে আদায় সহিহ হবে।
ইমাম সারাখসি রহঃ বলেন
অর্থাৎ ” এক পশুতে শরিক সকলের উদ্দেশ্য হয়তো কোরবানি হবে অথবা কারোঅন্য কোন ইবাদত উদ্দেশ্য হবে। সকলের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। (৩)
ইমাম মালিকুল উলামা কাসানি রহঃ বলেন
অর্থাৎ “যদি কেউ কুরবানীর সাথে আকিকার নিয়ত করে তাহলে আদায় হয়ে যাবে।কেননা আকিকার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
সন্তান দানের মাধ্যমে আল্লাহ তার উপর যে অনুগ্রহ করেছেন,সেটার শুকরিয়া আদায়ের জন্য আকিকা করা হয়। ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর মত ও এটি।(৪)
ফাতওয়ায়ে আলমগীরিতে আছে
অর্থাৎ ” যদি কেউ কুরবানীর সাথে আকিকার ইচ্ছা করে,তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে।(৫) এবিষয়ে
- ফতোয়ায়ে কাজিখান
- ফতোয়ায়ে বাযযাযিয়া
- আল মুহিতুল বুরহান
ইত্যাদি কিতাব দেখা যেতে পারে।
এখন যদি কেউ এর বিপরীত মত পোষণ করেন,এবং বলেন, কুরবানীর সাথে আকিকা আদায় হবে না,
তাহলে তাকে অবশ্যই হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করতে হবে যে,নবীজী সাঃ কোরবানির সাথে আকিকা আদায় হবে না বলেছেন।
শুধুমাত্র হাদিসে নেই এ অজুহাতে যদি বলা হয়,তাহলে শরীয়তের বহু মাসআলা এমন রয়েছে,যেগুলো হাদিসে নেই।
মুজতাহিদ গন ইজতিহাদ করে যেসব মাসআলার সঠিক সমাধান দিয়েছেন। সেগুলোর ক্ষেত্রে আমার ঐ সমস্ত ভাইয়েরা কি বলবেন?
তাই মিমাংসিত কোন মাসআলা নিয়ে অযথা ফিতনা ছড়িয়ে উম্মতকে বিভ্রান্ত করলে তার পরিণাম খুবই ভয়াবহ হয়।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
তথ্যসুত্রঃ
(১) মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হাঃ নং ২৮৪২ (২) শরহু মুখতাসারিত তাহাবি৭/৩৫২ (৩)মাবসুত ১১/১৫ (৪) বাদায়িউস সানায়ি ৬/২৯১ (৫) ফাতওয়ায়ে আলমগীরি ৫/৩৫১
লেখক পরিচিতিঃ
ক্বারী মাওলানা মিজানুর রহমান সাইফ শিক্ষকঃ দারুল উলুম সোনাপুর রূপাপুর মাদ্রাসা ।
ইমাম ও খতিবঃ সোনাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। মোবাইলঃ +880 1743-259179