(মুসলমবিডি২৪ ডটকম)
নবীর যুগে কোরআন কোন পাণ্ডুলিপির আকারে ছিলনা। বরং পৃথকভাবে বিভিন্ন জায়গায় লেখা ছিল।
অতএব, কিছু অংশ কাহারো নিকটে খেজুরের ডালে, কিছু অংশ কাহারো নিকটে পাথরের টুকরার উপরে,
কিছু অংশ কাহারো নিকটে চামড়ার উপরে এবং কিছু অংশ কাহারো নিকটে হাড়ের উপরে লেখা ছিল।
কেননা, কোরআনুল কারীম যে সময় যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা নবী কারীম তার লিপিকারকে লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
নবীজির মৃত্যুর পর হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রা.) হযরত উমর (রা.) এর নির্দেশে বিভিন্ন জায়গায় কোরআনের আয়াত এক জায়গায় একত্রিত করেছেন।
যেমন, বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপ বর্তমান কোরআনুল কারীমের সূরা সমূহ যে পদ্ধতিতে আমাদের সামনে বিদ্যমান।
নবীর যুগে সূরা গুলোকে এই পদ্ধতিতে সাজিয়ে রাখা ছিল না। বরং নবীর যুগের পরে সাহাবায়ে কেরামের ইজতেহাদ (গবেষণার) দ্বারা সূরা গুলোকে এই পদ্ধতিতে সাজিয়েছেন।
হ্যা, আয়াত সমূহকে সাজিয়েছেন নবীর সামনে এবং নবীর নির্দেশে এবং তার বর্ণনা এমন ছিল যে,
যখন হযরত জিবরীল (আ.) অবস্থা অনুযায়ী কোন আয়াত নিয়ে আসতেন।
তখন এটাও বলে দিতেন যে, এই আয়াতকে অমুক সূরার মধ্যে অমুক আয়াতের পরে বা অমুক আয়াতের আগে রাখেন।
কেননা লওহে মাহফূযে কোরআনুল কারীমের আয়াত সমূহ এই পদ্ধতি অনুযায়ী লেখা আছে।
ওখান থেকে কোরআনুল কারীমকে অবস্থা অনুযায়ী এবং জরুরতের ভিত্তিতে হযরত জিবরীল (আ.) সূরা সমূহ এবং আয়াত সমূহ হুজুর (সা.) এর নিকট নিয়ে আসতেন।
মোটকথা: বর্তমান যেভাবে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়, সেভাবে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়নি।
হযরত জিবরীল (আ.) যেভাবে কোরআন অবতীর্ণ করেছেন, সেভাবে প্রত্যেক বছর রমজানে হুজুর (সা.) এর সাথে একবার সমস্ত কোরআন দাওর করতেন।
যে বৎসর নবীজী মৃত্যুবরণ করেন ঐ বৎসর রমজানে তারা দুইবার সমস্ত কোরআন দাওর করে ছিলেন।
হযরত যায়েদ রা. বললেন:
যে, আমি সূরা তাওবার শেষাংশ “লাক্বাদ জা-আকুম রাসূলুম মিন আনফুসিকুম” আবু খুজাইমা ব্যতীত অন্য কাহারো নিকট পাইনি।
হাদীসের এই বাক্যের উদ্দেশ্য যে, সূরা তাওবার শেষাংশ আবু খুজাইমা ব্যতীত অন্য কারো নিকট লিখিত পাইনি।
কেননা, ঐ অবস্থায় সমস্ত কোরআন হুফফাজে সাহাবা কেরামের অন্তরে হেফাজত ছিল। অনুরূপভাবে সূরা তাওবার শেষাংশও তাদের অন্তরে হেফাজত ছিল।
অতএব, নবীর যুগে সাহাবা যেমন- উবাই ইবনে কাব, মুয়াজ ইবনে জাবাল, যায়েদ ইবনে সাবিত এবং আবু দারদা (রা.) ছাড়াও অনেক সাহাবীর সমস্ত কোরআন মুখস্ত ছিল।
হাদীসের শেষাংশের উদ্দেশ্য যে, হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত হযরত আবু বকর (রা.) এর নির্দেশে বিভক্ত থাকা কোরআন খানিকে কয়েক খন্ডে একত্রিত করেছিল।
তার উপর সমস্ত সাহাবি ঐক্য হলো। ঐ কয়েক খন্ডে বিভক্ত থাকা কোরআনকে পাণ্ডুলিপি আকারে একত্রিত করেননি।
বরং কয়েক খণ্ডে বিভক্ত করে কোরআনকে হযরত আবু বকর (রা.) নিজের নিকট রাখলেন এবং হযরত আবু বকরের মৃত্যুর পর,
হযরত উমর (রা.) নিজের নিকট রাখলেন এবং হযরত উমর (রা.) এর মৃত্যুর পর,
তার মেয়ে উম্মুল মুমিমীন হযরত হাফসার (রা.) নিকট রাখলেন।
হযরত উসমান (রা.) এর খিলাফত কালে ঐ কয়েক খণ্ডে বিভক্ত কোরআনকে হযরত হাফসা (রা.) থেকে নিয়ে হযরত উসমান (রা.) নিজের কাছে রাখলেন।
ঐ কয়েকটি ছহিফাগুলোকে (পুরো কোরআনকে) পাণ্ডুলিপি আকারে একত্রিত করলেন এবং কয়েকটি পাণ্ডুলিপি ইসলামী রাষ্ট্রের শহরে পাঠালেন।
(সূত্র: কোরআনের মহিমা-২৮,২৯)