(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
রোকন অর্থ হচ্ছে ভিতরের ফরজ। আর নামাজের রোকনগুলো (ভিতরের ফরজ) হচ্ছে-
১) তাকবীরে তাহরিমা। তাকবীরে তাহরীমার জন্য ঐ সমস্ত জিনিস শর্ত যা অন্যান্য রোকনের জন্য শর্ত।
অর্থাৎ শরীর ও কাপড় পবিত্র হওয়া এবং সতর আবৃত করা, কেবলামুখী হওয়া, নামাজের সময় হওয়া এবং নিয়ত করা।
২) ফজরের নামাজে দুই রাকআতের পর, আছর ও এশার নামাজে চার রাকআতের পর, মাগরিব ও বেতরের তিন রাকআতের পর শেষ বৈঠক করা।
৩) নামাজী ব্যক্তি কোন কাজের মাধ্যমে নামাজ থেকে ফারেগ হওয়াও ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর মতে ফরয।
৪) দাঁড়ানো।
৫) রুকু করা।
৬) সিজদা করা। প্রত্যেক রাকআতে এ তিনটি কাজ করা উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মতিক্রমে ফরজ।
ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে ফরয এবং নফল নামাজের প্রত্যেক রাকআতে ক্বেরাত পাঠ করা ফরজ।
আর আযম রহ.-এর মতে পাচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকআতে এবং বিতরের তিন রাকআতে ও নফল নামাজের প্রত্যেক রাকআতে ক্বেরাত পাঠ করা ফরজ।
ইমাম আবু ইউসুফ রহ.-এর মতে রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো, দুই সেজদার মাঝে বসা এবং প্রতিটি রোকন ধীরস্থির ভাবে আদায় করা ফরজ।
তবে অধিকাংশ আলেমগণের মতে এটা ফরজ নয়।
নামাজে কতটুকু ক্বিরাত পড়া ফরজ?
ক্বেরাতের ক্ষেত্রে ইমাম আযম রহ.-এত মতে এক আয়াত এবং সাহেবাইনের মতে সূরা কাউছারের সমান ছোট তিন আয়াত,
অথবা ছোট তিন আয়াতের সমান বড় এক আয়াত পাঠ করা ফরজ (এ অভিমতের উপরই ফাতওয়া)।
ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে সূরায়ে ফাতেহা পড়াও ফরজ। তাদের মতে বিসমিল্লাহ্ ও সূরায়ে ফাতেহার অংশ।
সেজদায় কপাল ও নাক জমিনে লাগানোর হুকুম কি?
সেজদার সময় কপাল ও নাক জমিনে রাখা ফরজ। তবে অপারগতায় এর যে কোন একটি দ্বারা সেজদা করাও জায়েজ হবে।
ইমাম শাফেয়ী ও আহমদ রহ.-এর মতে সেজদায় কপাল, নাক, হাতের তালু, হাটু এবং উভয় পায়ের আঙ্গুল জমিনে রাখাও ফরজ।
নামাজের প্রতিটি রোকনের তারতীবের প্রতি লক্ষ্য রাখা ফরজ।
নামাজ আদায়কালে প্রতিটি রোকনে তারতীব রক্ষা করা কি ফরজ?
দ্বিতীয় সেজদা এর ব্যতিক্রম। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি কোন রাকআতে মাত্র এক সেজদা করে এবং দ্বিতীয় সেজদার কথা ভুলে যায়,
তাহলে তার নামাজ নষ্ট হবে না। দ্বিতীয় রাকআতে ঐ সেজদাটি কাযা করে নিবে এবং এর উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
নামাজের কোন কোন রোকনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ফরজ?
সম্পূর্ণ নামাজ কিংবা এক রাকআতে যেসব রোকন একাধিকবার আদায় করতে হয় না, সেসব রোকনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ফরজ।
যেমন: প্রথমে কিয়াম তারপর রুকু, তারপর সেজদা, তারপর শেষ বৈঠক, এভাবে নামাজ আদায় করা।
পক্ষান্তরে যেসব রোকন একাধিকবার আদায় করতে হয়, সেসবে তারতীব ফরজ নয়।
যেমন: সেজদা, এক সেজদার পর আরেক সেজদা করা ফরজ নয় বরং ওয়াজিব।
কেউ যদি প্রথম রাকআতে শুধু এক সেজদা করে এবং দ্বিতীয় রাকআতে তিন সেজদা করে এবং সর্বশেষে সেজদায়ে সাহু করে নেয়।
তাহলে তার নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কিয়ামের আগে রুকু করলে নামাজই হবে না।
কোন নামাজী যদি কোন রাকআতে রুকু ছেড়ে দেয় এবং অপর রাকআতে সেজদা ছেড়ে দেয় তাহলে এর হুকুম কি?
ইবনে হুমাম রহ. হাকেম রহ.-এর কাফী নামক গ্রন্থ থেকে বর্ণনা করেন যে, কোন ব্যক্তি নামাজ আরম্ভ করে ক্বেরাত ও রুকু আদায় করল কিন্তু সেজদা করল না।
অত:পর দাঁড়িয়ে ক্বেরাত ও সেজদা করল, রুকু করল না, তাহলে এসব কিছু মিলে এক রাকআত হবে।
এমনিভাবে যদি প্রথমে রুকু করে অত:পর দাঁড়িয়ে ক্বেরাত পাঠ করে এবং রুকু-সেজদাও করে, তবুও এক রাকআতই হবে।
তদ্রূপ যদি প্রথমে দুই সেজদা করে এবং পরে দাঁড়িয়ে ক্বেরাত পাঠ করে ও রুকু করে কিন্তু সেজদা না করে,
অত:পর দাঁড়িয়ে ক্বেরাত পাঠ করে সেজদাও করে কিন্তু রুকু না করে। তাহলেও এক রাকআতই হবে।
এমনিভাবে যদি প্রথম রাকআতে রুকু করে, সেজদা না করে এবং দ্বিতীয় রাকআতেও রুকু করে, সেজদা না করে এবং তৃতীয় রাকআতে সেজদা করে,
রুকু না করে তবে এই সব মিলে এক রাকআতই হবে। প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ এবং শেষ বৈঠক ও তাশাহহুদ পাঠ করা ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে ফরজ।
অন্য কোন ইমামের মতে এসব ফরজ নয়। তবে ইমাম আযম রহ.-এর মতে,
উক্ত তিনটি বিষয়ই (অর্থাৎ প্রথম বৈঠক করা, তাশাহহুদ পাঠ করা এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা ওয়াজিব।
শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করার পর দুরূদ শরীফ পাঠ করার হুকুম কি?
শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পরে দুরূদ শরীফ পাঠ করা ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে ফরজ।
ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ রহ.-এর মতে সালাম বলা ফরজ ও রোকন। তবে আযম রহ.-এর মতে তা ফরজ নয় বরং ওয়াজিব।
তাসবীহ, দোয়া ও মুক্তাদির জন্য ক্বিরাত পড়ার হুকুম কি?
রুকু ও সেজদার মধ্যে মাথা ঝুঁকানো ও মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলা এবং রুকুর মধ্যে সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম একবার বলা,
সেজদার মধ্যে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা একবার বলা, রুকু থেকে উঠে সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলা এবং উভয় সেজদার মাঝে বসে-
আল্লাহুম মাগফিরলী একবার বলা ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে ফরজ। অন্য কারো মতে ফরজ নয়।
তবে ভুলে এর কোনটি ছুটে গেলে ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে নামাজ বাতিল হবে না।
ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর মতে মুক্তাদির উপর ক্বেরাত পাঠ করা ফরজ, অন্য কারো মতে তা ফরজ নয়। ইমাম আযম রহ.-এর মতে মুক্তাদির জন্য ক্বেরাত পাঠ করা হারাম।
মুক্তাদির জন্য ক্বেরাত পড়া জায়েজ আছে কি?
হানাফী মাযহাব অনুসারে মুক্তাদির জন্য ক্বেরাত পড়া হারাম। সুতরাং কোন মুক্তাদি ইমামের পিছনে ক্বেরাত পড়লে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না।
যে নামাজে ইমাম সশব্দে ক্বেরাত পাঠ করেন সে নামাজে মনোযোগের সাথে তিলাওয়াত শ্রবণ করা এবং যে নামাজে নি:শব্দে পাঠ করা হয়,
সে নামাজে নিরবে দাঁড়িয়ে থাকাই মুক্তাদির প্রতি কোরআনের নির্দেশ।
(হাওলা: মালাবুদ্দা মিনহু- ৫৮, ৫৯,৬০, ৬১)