(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
যদি কোন ব্যক্তি কারো বকরী ছিনিয়ে নিয়ে নিজের নামে কুরবানী করে ফেলে,
তবে কুরবানী জায়েজ হবে বটে, কিন্তু বকরীর মূল্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া আবশ্যক। এ হুকুমটি বন্ধক ও শরীকী বকরীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আর চুরি করে এনে নিজের নামে কুরবানী দিলে তা জায়েজ হবে না।
কোন ব্যক্তি যদি কাউকে আমানত হিসাবে একটি বকরী অপর্ণ করে এবং উক্ত আমানতদার ঐ বকরীটি জবাই করে ফেলে,
তাহলে তাতে কুরবানী আদায় হবে না। আরিয়াতের (ধার) মালের ক্ষেত্রেও ঠিক একই হুকুম।
(উদাহরণ স্বরূপ) যায়েদ ওমরের নিকট থেকে একটি বকরী ক্রয় করে জবাই করে ফেললো অত:পর জানা গেল, বকরীর প্রকৃত মালিক বকর।
এক্ষেত্রে বকর যদি উক্ত বিক্রয়কে অনুমোদন করে, তাহলে কুরবানী জায়েজ ; অন্যথায় জায়েজ হবে না।
কয়েকজনের কুরবানীর জন্তু মিশে গেলে কি করবে?
তিন ব্যক্তি এমন তিনটি বকরী বা গরু ক্রয় করলো, যাদের প্রথমটির মূল্য দশ হাজার, আর দ্বিতীয়টির মূল্য বিশ হাজার এবং তৃতীয়টির মূল্য ত্রিশ হাজার।
অত:পর (ঘটনাক্রমে) বকরীগুলি এমনভাবে মিলে গেল যে, তাদের কেউই নিজ নিজ বকরী সনাক্ত করতে পারল না।
অত:পর তারা আপসোস করে প্রত্যেক একটি করে বকরী বা গরু কুরবানী করে ফেললো। এতে কুরবানী শুদ্ধ হবে।
তবে ত্রিশ হাজার ওয়ালার জন্য বিশ হাজার ও বিশ হাজার ওয়ালার জন্য দশ হাজার টাকা সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব।
কেননা এ সম্ভাবনা আছে যে, ত্রিশ হাজার ও বিশ হাজারের বকরী বা গরু এর মালকগণ বেশী দামী গরু বা বকরীর পরিবর্তে কম দামী (দশ হাজারের) বকরী বা গরু জবাই করছে।
আর দশ হাজার দ্বারা ক্রয়কারীর কিছুই সদকা করা ওয়াজিব হবে না।
আর তিনজনের প্রত্যেককেই যদি একে অপরকে অনুমতি দিয়ে দেয় তাহলে কোন মালককেই সদকা করতে হবে না।
শরীর হতে বিচ্ছিন্ন দাত, নখ, শিং ইত্যাদি দ্বারা জবাই এর হুকুম কি?
কেউ যদি কর্তিত নখ পড়ে যাওয়া দাত বা উপড়ানো শিং দ্বারা পশু জবাই করে, তবে তা মাকরূহ হবে। অবশ্য উক্ত পশুর গোশত খাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই।
ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর মতে উক্ত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। এর অকীর্তিত নখ দ্বারা জবাই করা পশুর গোশত সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।
কেননা উক্ত পশুর হুকুম ঐ জাতীয় প্রাণীর অনুরূপ যাদেরকে গলা টিপে (শ্বাসরূদ্ধ করে) মারা হয়েছে।
কুরবানীর পশু কি দিয়ে জবাই করবে?
বাশের চটি, ধারালো পাথর ও এমন জিনিস দ্বারা জবাই করা জায়েজ, যা ধারালো এবং রগসমূহ কেটে রক্ত প্রবাহিত করতে সক্ষম।
ছুরি ধারানো, বিচ্ছিন্ন মস্তক ইত্যাদির হুকুম কি?
জবাইকারীর জন্য জবাই করার পূর্বে ছুরি ধার করে নেয়া মুস্তাহাব। পশুকে মাটিতে শোয়ানোর পর ছুরিতে ধার দেয়া মাকরূহ।
মাথা শরীর থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং হারাম মগজ পর্যন্ত ঠেকিয়ে দেওয়া মাকরূহ।
তাছাড়া পশুকে মাটিতে শোয়ানোর পর পা ধরে টেনে হেচড়ে জবাইয়ের স্থানে নিয়ে যাওয়া মাকরূহ।
জবাইয়ের পর পশুর নড়াচড়া বন্ধ হওয়ার পূর্বে গলা বিচ্ছিন্ন করা এবং চামড়া খসানো মাকরূহ। পশুর পিছন দিক থেকে জবাই করা মাকরূহ।
এমনকি রগ কর্তিত হওয়ার পূর্বে যদি পশু মারা যায় তবে তার গোশত খাওয়া হারাম হবে।
উল্লেখ্য যে, জবাইয়ের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, যে সকল আচরণে পশুর অনর্থক কষ্ট হয়, জবাইয়ের সময় যার কোন প্রয়োজনও পড়ে না।
এ ধরণের আচরণ করা মাকরূহ।
জবাই করার পদ্ধতি কি?
যে সকল পশু মানুষের গৃহপালিত ও মানুষ দেখে পালায় না, সেগুলো জবাই করার পদ্ধতি হলো উল্লেখিত রগসমূহ কেটে দেয়া।
আর যে সমস্ত বন্য পশু মানুষ দেখলে পালিয়ে যায় সেগুলো জবাই করার পদ্ধতি হলো, তাদের পা কেটে দেওয়া এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে,
শরীরের কোন অংশ যখম করে ফেলা একে যবেহ ইযতেরারী বলা হয়। ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে,
বকরী জঙ্গলে পালালে যবেহ ইযতেরারী জায়েজ আছে। কিন্তু লোকালয় পালনে যবহে ইযতেরারী জায়েজ নেই।
তবে গরু ও উটের ক্ষেত্রে লোকালয় ও জঙ্গল উভয়ের হুকুম একই।
কুরবানীর উট থেকে উপকৃত হবার হুকুম কি?
কুরবানীর উটে সওয়ার হওয়া, ভাড়া দেওয়া, দুধ দোহন করা ও নিজস্ব কোন ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে তার পশম কর্তন করা ইত্যাদি মাকরূহ।