(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
জবাইকারীদের নিম্নো গুণাবলী থাকা শর্ত:
১. আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া।
২. মুসলমানদের মতো আকীদা পোষণ করা অথবা (প্রকৃত) আহলে কিতাবগণের ন্যায় একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া।
৩. জবাই করতে জানা,অর্থাৎ একথাও জানা থাকতে হবে যে, বিসমিল্লাহ বলে জবাই করলে জবাই হালাল হয়।
(তাছাড়া) রগসমূহ কাটার ব্যাপারে পারদর্শী হতে হবে।
উক্ত শর্তসমূহ পুরুষ, মহিলা, বাচ্চা, পাগল বা সুস্থ যার মধ্যেই পাওয়া যাক না কেন তার জবাইকৃত জানোয়ার হালাল হবে।
আর যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহ পড়তে বা জবাই করতে জানে না, তার জবাইকৃত পশু হালাল নয়।
আহলে কিতাব জিম্মি হোক বা হারবী হোক যদি জবাই করার সময় আল্লাহ তায়ালার নাম উচ্চারণ করে এবং হযরত ওযায়ের আ. ও ঈসা আ.- এর নাম মুখে না আনে,
তবে তাদের জবাইকৃত জানোয়ার হালাল, অন্যথায় হালাল নয়।
দোয়া কখন পড়বে?
কুরবানীর পশুকে মাটিতে শোয়ানোর পূর্বে অথবা কুরবানীর পশু জবেহের পর “আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নী বা আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন ফুলানিন বলা জায়েজ।
তবে যবেহের সময় এরূপ বলা মাকরূহ। কেননা জবেহের শর্ত হলো শুধু বিসমিল্লাহ পাঠ করা এবং তাও দোয়া ইত্যাদির নিয়তে না বলা।
এমনকি যদি জবাই করার সময় কেহ আল্লাহুম্মাগফিরলি বলে তাহলেও জবাই হালাল হবে না।
তবে জবাই করার সময় হাচি আসার কারণে কেহ যদি “আলহামদুলিল্লাহ ” বলে এবং বিসমিল্লাহ এর নিয়ত করে তবে বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে জবাই শুদ্ধ হবে না।
আর যদি বিসমিল্লাহ-এর স্থলে আলহামদুলিল্লাহ অথবা সুবহানআল্লাহ বলে এবং অন্তরে বিসমিল্লাহ-এর নিয়ত রাখে তবে জবাই শুদ্ধ হবে।
বিসমিল্লাহ আল্লাহু আঁকবার নামে যে দোয়া প্রসিদ্ধ আছে, এটা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত।
পশুর কোন স্থানে জবাই করবে?
জবাই করার স্থান হলো, কণ্ঠনালি এবং লিব্বার (গলা) মধ্যবর্তী স্থান। জবাইয়ের অর্থ হলো, গলার উপর এবং তালুর নীচে যে সকল রগ রয়েছে সেগুলো কেটে দেওয়া।
জবাই করার সময় যে সকল রগ কেটে ফেলা শর্ত তা হলো, সর্বমোট চারটি- (১) হুলকুম, (২+৩) শ্বাসনালী দুইটি ও (৪) শাহরগ।
উক্ত রগসমূহ কাটার কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর মতে হুলকুম ও শ্বাসনালী সম্পূর্ণরূপে কাটা হলে জবাই হালাল হবে।
অন্যথায় হালাল হবে না। আর ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর মত হলো উল্লেখিত চারটি রগের যে কোন তিনটি রগ কাটা হলে জবাই হালাল।
ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতে প্রতিটি রগের অধিকাংশ কাটা হলে জবাই হালাল হবে।
উট জবাইয়ের পদ্ধতি হলো, উটের সীনার নিকটবর্তী গলার নিচের রগসমূহ দাঁড়ানো অবস্থায় বর্শা মেরে কেটে দিবে। এটাকে “নহর” বলা হয়।
গরু এবং বকরীকে জবাই করা এবং উটকে নহর করা মুস্তাহাব। আর এর বিপরীত মাকরূহ।
জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ পরিহার করলে কি হবে?
কেউ যদি জবাই করার সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে বিসমিল্লাহ পড়া ছেড়ে দেয়, তাহলে উক্ত জবাইকৃত পশু হারাম হবে।
আর যদি ভুলক্রমে বাদ পড়ে যায় তাহলে হালাল হবে। তবে ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর মতে উভয় অবস্থায় হালাল এবং ইমাম মালেক রহ.-এর মতে উভয় অবস্থায় হারাম।
বিসমিল্লাহ পরিত্যাগের ব্যপারে আহলে কিতাব ও মুসলমান সমান।
ভুলবশত: একে অন্যের জন্তু জবাই করলে এর হুকুম কি?
দুই ব্যক্তি যদি ভুলবশত: একে অপরের কুরবানীর পশু জবাই করে ফেলে, তবে কুরবানী শুদ্ধ হবে এবং উভয়ের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে।
কারও কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। বরং প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ কুরবানীর জানোয়ার নিয়ে নিবে। এটাই আমাদের ফিকাহবিদগণের ফাতওয়া।
একে অন্যের প্রাণী জবাইয়ের পর ভুল প্রমাণিত হলে কি করবে?
জবাই করার পর (ভুলবশত 🙂 যদি একে অপরের কুরবানীর গোশত খেয়ে ফেলে এবং পরবর্তীতে এটা জানতে পারে তাহলে উত্তম হলো,
একে অপরের নিকট থেকে মাফ চেয়ে নিয়ে গোশত নিজের জন্যে হালাল করে নেওয়া। আর যদি এ নিয়ে পরস্পর বিবাদ সৃষ্টি হয়,
তাহলে গোশতের মূল্য ক্ষতি পূরণ স্বরূপ সদকা করে দিবে। অন্যের কুরবানীর গোশত নষ্ট করলে তারও এই হুকুম।
অন্যের সহায়তা নিয়ে জবাই করলে এর হুকুম কি?
কেউ যদি নিজের কুরবানী পশু অন্যের সাহায্য নিয়ে জবাই করে তাহলে জবাইকারী এবং (ছুরি ধরার ব্যাপারে) সাহায্যকারী উভয়ের ও বিসমিল্লাহ বলা ওয়াজিব।
একজন যদি বিসমিল্লাহ না পড়ে তবে জবাই হারম হয়ে যাবে। এসম্পর্কে, দুরবে মুখতার, ও খাযানাতুল মুফতীয়্যীন নামক কিতাবে উল্লেখ আছে।
নির্দেশিত ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে বিসমিল্লাহ তরক করলে কি করবে?
কোন ব্যক্তি যদি অন্য ব্যক্তিকে জবাই করার নির্দেশ দেয় এবং উক্ত ব্যক্তি জবাই করার পর ও একথা প্রকাশ করে যে,
আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে বিসমিল্লাহ বলিনি, তাহলে (জরিমানা স্বরূপ) কুরবানী পশুর মূল্য জবাইকারী আদায় করতে হবে।
যদি কুরবানীর দিন বাকী থাকে তাহলে অন্য একটি পশু ক্রয় করে জবাই করে দিবে এবং উহার সব গোশত সদকা করে দিবে।
উক্ত গোশতের এক টুকরাও নিজে খাবে না। আর যদি কুরবানীর দিন অবশিষ্ট না থাকে তবে তার মূল্য নির্ধারণ করে ফকিরদের সদকা করে দিবে।
জবাইয়ের আগে কুরবানীর পশু বাচ্ছা প্রসব করলে কি করবে?
কুরবানীর পশু জবাই করার পূর্বে যদি পশুর বাচ্চা জন্ম নেয়। তাহলে উক্ত বাচ্চাকেও জবাই করে দিবে।
কোন কোন আলেমের অভিমত হলো বাচ্চা জবাই না করে বরং জীবিত সদকা করে দেবে।
যে গর্ভবতী বকরীর বাচ্চা দেওয়ার সময় নিকটবর্তী তা জবাই করা মাকরূহ।
কুরবানীর পশুর পেটে মরা বাচ্চা পাওয়া গেলে তা খাওয়া হালাল নয়। চাই তার পশম উঠুক বা না উঠুক,
এটা ইমাম আযম রহ.-এর অভিমত। সাহেবাইন রহ. ও শাফেয়ী রহ.-এর অভিমত হলো,
উক্ত বাচ্চার সমস্ত শরীরের গঠন যদি পূর্ণতা লাভ করে থাকে, তাহলে তা খাওয়া হালাল।