মুসলিমবিডি২৪ডটকম

বদনজরে (কুদৃষ্টি কারণে) নেক কাজের নূর নষ্ট হয়ে যায়
━━━━━━ • ✿ • ━━━━━━
এ থেকে তুমি অনুমান করতে পার যে, এই গোনাহ কত মারাত্মক।
তুমি নামায পড়েছ, তাহাজ্জুদ পড়েছ, তারাবীহ পড়েছ, যিকির করেছ, তাসবীহ পড়েছ,
কিন্তু এইসব আমল ও ইবাদতে যে নূর এবং বরকত অর্জিত হল, তা সব এই এক বদ আমলের কারণে অন্ধকার হয়ে গেল।
এবং সকল ইবাদতের উপকার, স্বাদ ও নূরানিয়াত সব ধ্বংস হয়ে গেল।
আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। ইবাদতের ফায়দা হল, মানুষ একটি নেক কাজের ফলে আরেকটি নেক কাজের দিকে অগ্রসর হয়।
দ্বিতীয় নেক কাজটি তাকে তৃতীয় আরেকটি নেক কাজের দিকে নিয়ে যায়।
এভাবে সে তার জীবনের উন্নতি করে চলে। কিন্তু ইবাদতে যখন নূর না থাকে তখন তা বিস্বাদ হয়ে যায় এবং তার উপকারিতা কমে যায়।

আসলে আমরা তো ইবাদতের নূর ও স্বাদ সম্পর্কেই অবগত নই। তাহলে তা নষ্ট হওয়ার অনুভূতি আমাদের হবে কোত্থেকে?
যার একবার এই নূর ও স্বাদ অর্জিত হয়েছে সেই অনুভব করতে পারে যে, এখন আমার সেই নূর ও স্বাদ হারিয়ে গেছে।
আমাদের স্বভাব ও রুচি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ইবাদতের নূর সম্পর্কেও আমাদের কোন ধারণা নেই।
যারা আল্লাহওয়ালা তারা তা অনুভব করেন। যেমন হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব নানুতভী রহ.-এর একটি ঘটনা লিখা হয়েছে যে,
তিনি একদিন কোন লোকের দাওয়াতে গিয়ে খানা খেয়ে ফেললেন। তাঁর জানা ছিল না, যার ঘরে দাওয়াত তার উপার্জন হারাম।
একজন মুসলমান দাওয়াত করেছেন তাই সরল বিশ্বাসে তিনি তা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু পরে জানা গেল তার উপার্জন সন্দেহযুক্ত।
তিনি বলেন, এই দাওয়াতের এমন কুপ্রভাব ছিল যে, অনেকদিন পর্যন্ত তার অন্ধকার আমার অন্তরে অনুভূত হয়েছে।
তা এভাবে হয়েছে যে, অনেকদিন পর্যন্ত অন্তরে বিভিন্ন খারাপ ও বাজে চিন্তা-ভাবনা আসতে থাকল
এবং না জায়েয কাজের প্রতি মনের আকর্ষণ হতে থাকল।
মোটকথা! যে আল্লাহ ওয়ালাদের অন্তর পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত তাদের অন্তরে সামান্য আঁচড় লাগলেও তাদের মনে হয় যেন কেয়ামত এসে গেল।
بر دل سالک ہزاراں غم بود ہیں
گر زباغ دل خلالے کم بود
সালেকের হৃদয় উদ্যান থেকে যদি একটি কণাও ঝরে পড়ে তবে তাদের হৃদয় আকাশে যেন বিপদ মহাবিপদের তুফান ছুটে।
যেহেতু আমাদের স্বভাব ও রুচি নষ্ট হয়ে গেছে, তাই না আমাদের ইবাদতের স্বাদ ও নূর অনুভূত হয়! না তা হারাবার কোন খোঁজ খবর হয়।
প্রথম কথা হল, যেদিন কোন মানুষ বদনজরের গোনাহে লিপ্ত হবে সেদিন তার ইবাদতে নূর থাকবে না।
এবং ঐ ইবাদতের দুনিয়াবী কল্যাণও সে পাবে না। এজন্য হযরত বলছেন, এই রোগের চিকিৎসা খুব গুরুত্বসহকারে করা চাই।
এরোগের মূল উৎস খারাপ নয়
এরপর তার চিকিৎসার ব্যাপারে হযরত থানভী রহ. বলেছেন- ‘একথা স্বাভাবিক যে, এরোগের উৎস আল্লাহর সৃষ্ট এবং তা মন্দ কিছু নয়’।
অর্থাৎ মনে কামচিন্তা আসা ও সম্ভোগেচ্ছা জাগ্রত হওয়া মূলত খারাপ কিছু নয়।
কারণ এটি মানুষের জন্মগত ও সহজাত বৈশিষ্ট্য। কোন মানুষ তা থেকে মুক্ত নয়। এ জন্যই তা না থাকা দোষণীয়।
তাই এই স্বভাবটি মৌলিকভাবে দোষণীয় নয়। বরং তাতে অনেক উপকারিতা রয়েছে।
কারণ তার উপর ভিত্তি করেই মানব বংশের অস্তিত্ব রক্ষা পায় এবং তার উপরই দুনিয়ার নেজাম পরিচালিত।
এ বৈশিষ্ট্য যদি মানব জাতিতে না থাকে তাহলে সারা বিশ্বই ধ্বংস হয়ে যাবে।
তবে এই স্বভাবের নাজায়েয চাহিদায় সাড়া দেয়া এবং নাজায়েয দাবী পূরণ করা অন্যায়।
অর্থাৎ, মৌলিকভাবে বৈশিষ্ট্যটাও খারাপ নয় এবং তাতে চাহিদা সৃষ্টি হওয়াও খারাপ নয়;
বরং তার নাজায়েয চাহিদা পূরণ করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা খারাপ ও অন্যায়।
পক্ষান্তরে তার জায়েয চাহিদার উপর আমল করা শুধু জায়েযই নয় বরং তা সওয়াবের কাজও বটে।
সূত্র: ইসলাহী মাজালিস | পৃষ্ঠা-৯৫
MuslimBD24.Com Islamic blog site Bangladesh

