(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
কেউ যদি দুই রাকাতের বৈঠক ছাড়াই ভুলবশত: দাঁড়িয়ে যায়,
আর তৃতীয় রাকাত পূর্ণ করে সেজদায়ে সাহু করত: সালাম ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তার তিন রাকাতের সবই বিফলে যাবে।
শেষ বৈঠকে আদায় না করার কারণে প্রথম দুই রাকাত ফাসেদ হয়ে যাবে এবং এক রাকাত বিশিষ্ট কোন নামাজ শরীয়তে নেই।
এ জন্য শেষ রাকাতটিও কোন কাজে আসবেনা। বিধায়, এই তিন রাকাত বিফলে যাবে শুধু বিফলেই যাবে যে এমন নয় ,
বরং প্রথম দুই রাকাত নামাজ শুরু করার কারণে তা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে গিয়েছিল আর ওয়াজিব নামাজ আদায় না করলে তার ক্বাযা করতে হয়।
কাজেই প্রথম দুই রাকাত শুরু করত: নষ্ট করার দরুন পরবর্তীতে তারাবীহ ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে এ দুই রাকাত ক্বাযা করতে হবে।
ঠিক তেমনিভাবে তৃতীয় রাকাত শুরু করার কারণে ঐ ব্যক্তির উপর আরও দুই রাকাত ওয়াজিব হবার কথা ছিল কিন্তু তৃতীয় রাকাতে দাড়ানোর ভুলবশত: হওয়ায় তা আর ধর্তব্য হবে না।
ফলে চার রাকাত নয় বরং দুই রাকাতেরই ক্বাযা করতে হবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী-২/৩২, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী-১/১১৩, ফাতাওয়ায়ে-ক্বাযীখান)
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীর অন্তর্ভুক্ত)-১/২৪১)
দুই বৈঠকে তিন রাকাত পড়লে
কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাতের শেষে তাশাহহুদ পরিমাণ সময় বসে তৃতীয় রাকাত ভুলবশত: দাঁড়িয়ে যায় এবং চার রাকাত পূর্ণ না করে তৃতীয় রাকাতেই সালাম ফিরিয়ে নেয়।
তাহলে তার প্রথম দুই রাকাত শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর তৃতীয় রাকাত বিফলে যাবে। ঐ রাকাতে তিলাওয়াতকৃত অংশ (খতমে তারাবীহ হলে) আবার পড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, এখানে তারাবীহ ছাড়াও পৃথক দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব হবে।
কেননা, উল্লেখিত ঐ অবস্থায় তৃতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে যাবার দরূন ঐ ব্যক্তির উপর আরও দুই রাকাত নামাজ ওয়াজিব হয়ে গেছে।
কারণ, নফল নামাজ শুরু করে দিলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
আর এখানে যেহেতু তৃতীয় রাকাত শুরু করার পর চার রাকাত পূর্ণ করা হয়নি বিধায়,
নিজের উপর ওয়াজিব সেই দুই রাকআত নামাজ অবশ্যই ক্বাযা করতে হবে।
(ফাতাওয়ায়ে ক্বাযীখান, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী অন্তর্ভুক্ত-১/২৪০-২৪১) ইমদাদুল- ফাতাওয়া (টিকা)-১/৪৯৮)
দুই বৈঠকে চার রাকআত পড়লে-
কেউ যদি দুই রাকাতের পর তাশাহহুদ পরিমাণ সময় বসে দাঁড়িয়ে যায় এবং চার রাকাত পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়ে নেয়,
তাহলে তার চার রাকাতের সম্পূর্ণটাই শুদ্ধ হবে এবং তারাবীহ বলে গণ্য হবে। সেজদাহ-এ সাহু করারও প্রয়োজন হবে না।
(ফাতাওয়ায়ে শামী-২/৪৫, ক্বাযীখান (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী অন্তর্ভুক্ত) -১/২৪০)
ভুলবশত: তৃতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে গেলে করণীয়
তারাবীহ এর নামাজে ভুলবশত: দ্বিতীয় রাকাতে ক্বা'দাহ' (বৈঠক) না করেই দাঁড়িয়ে গেলে নিয়ম হল তৃতীয় রাকাতের সেজদাহ করার আগে স্বরণ হয়ে গেলে,
সাথে সাথে বসে যাওয়া এবং সেজদাহ-এ সাহু আদায় করে নিয়ম মাফিক নামাজ শেষ করে নেয়া।
আর তৃতীয় রাকাতের সেজদাহ করে নিলে নিয়ম হল চতুর্থ রাকাত পূর্ণ করত: সেজদাহ-এ সাহু আদায়ের মাধ্যমে সালাম ফিরানো।
তবে এতে চার রাকাত তারাবীহ না হয়ে দুই রাকাত তারাবীহ বলে গণ্য হবে; তাও আবার শেষ দুই রাকাত।
কেননা, দুই রাকাআতী নামাজের শেষে বৈঠক হল ফরজ। আর ফরজ ছুটে গেলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যায়।
সুতরাং প্রথম দুই রাকাত ফাসেদ হয়ে যাওয়ায় শেষ দুই রাকাতও ফাসেদ হয়ে যাবার কথা ছিল, কিন্তু বিশেষ কারণে তাকবীরে তাহরীমাহ বাকী রয়ে গেছে বলে ধরে নেয়া হবে।
বিধায়, শেষ দুই রাকাত শুদ্ধ হবে এবং এর মধ্যে কুরআন শরীফের যে অংশ তিলাওয়াত করা হয়েছে তা খতমে কুরআন হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
কিন্তু প্রথম দুই রাকাত শুদ্ধ না হওয়ায় সেখানে যা তিলাওয়াত করা হয়েছে খতমে তারাবীহ হলে পরে তা আবার পড়তে হবে।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী-১/১১৮, ক্বাযীখান (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী অন্তর্ভুক্ত)-১/২৪০, ইমদাদুল ফাতাওয়া (টিকা)-১/৪৯৭, আহসানুল ফাতাওয়া-৩/৫১০-৫১২)
তারাবীহ এর নামাজে দুই সূরার মধ্যখানে বিসমিল্লাহ পড়া
সকল নামাজেই দুই সূরার মধ্যখানে বিসমিল্লাহ পড়া উত্তম। তবে ক্বিরাত স্বশব্দে হোক কিংবা নি:শব্দে বিসমিল্লাহ সর্বাবস্থায় নি:শব্দেই পড়তে হবে।
শব্দ করে পড়া খেলাফে সুন্নাত। বিধায়, তারাবীহ এর নামাজেও দুই সূরার মধ্যখানে বিসমিল্লাহ নি:শব্দেই পড়তে হবে; শব্দ করে নয়।
এটাই হানাফী মাযহাবের কথা। তবে সারা তারাবীহ এর মধ্যে একবার শব্দ করে পড়া জরুরী। তাহলে মুক্তাদীগণের খতম পূর্ণ হবে।
কেননা, বিসমিল্লাহ ও কুরআন শরীফের একখানা আয়াত। তবে কোন সূরাহ এর আয়াত নয়।
আর কুরআন শরীফের আয়াত হওয়ার দরুন একবার উচ্চস্বরে পড়া প্রয়োজন, যেন শ্রোতাদের খতম পরিপূর্ণ হয়।
তারাবীহ এর নামাজে ১০ রাকাত পর হাফিজ পরিবর্তন
বর্তমানে অনেক মসজিদে তারাবীহ এর নামাজ পড়ানোর জন্য দুইজন হাফিজ সাহেব নির্ধারিত থাকেন,
কোন কোন মসজিদে প্রতি রাতে প্রথম ১০ রাকাত শেষে হাফিজ পরিবর্তন হয়ে শেষ ১০ রাকাত অপর হাফিজ সাহেব পড়ান।
অথচ, তারাবীহ এর নামাজে ১০ রাকাত পর হাফিজ পরিবর্তন করা সুন্নাতের পরিপন্থী। একই রাতে একাধিক হাফিজ দ্বারা তারাবীহ এর নামাজ পড়াতে কোন দোষ নেই।
তবে হাফিজ পরিবর্তন করতে হলে যে কোন তারাবীহ শেষে অর্থাৎ, কোন ৪ রাকাত শেষে বিশ্রাম নেওয়ার পর হাফিজ পরিবর্তন করবে কিংবা ইমাম পরিবর্তন করবে।
যেমন, ৪ রাকাতের পর, ৮ রাকাতের পর বা ১২ রাকাতের পর প্রভৃতি।
(খুলাছাহ-১/৬৪ ও জাওয়াহির-১/৩০)