(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
জুমাবার (শুক্রবার) নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডে ২টি মসজিদে জুমার সালাতের সময় জঙ্গি হামলায় ৪৯ জন মুসলমান নিহত হওয়ার ঘটনাটি নাড়া দিয়েছে বিশ্ববাসীকে।
বিশ্বের প্রায় দেশের মতো নিউজিল্যান্ডে বর্ণবাদের সমস্যা তেমন ছিল না। শান্তিপূর্ণভাবেই বিভিন্ন মানবজাতি দেশটিতে বসবাস করত।
নিউজিল্যান্ডে ইসলাম প্রিয় মুসলমানরা খুবই শান্তিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল হিসেবেই পরিচিত।
ক্রাইস্টচার্চে ২টি মসজিদে মারাত্মক হামলার পর দেশটির এখন ইসলাম প্রিয় মুসলমানদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও আতঙ্ক।
নিউজিল্যান্ডের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ইসলাম অন্যতম। ১৯৯১-২০০৬ এর মধ্যে ইসলাম প্রিয় মুসলিম জনসংখ্যা ৬গুণ বাড়ছে।
দেশটির মোট জনসংখ্যার ১.১% নাগরিক মুসলমান
নিউজিল্যান্ডে মোট জনসংখ্যা বর্তমানে ৪.৩ মিলিয়ন। সে হিসেবে প্রতি ৪জন নাগরিকের মধ্যে ১জন মুসলিম।
২০১৩ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নিউজিল্যান্ডে মুসলমানদের সংখ্যা ৪৬১৪৯, যা ২০০৬ সালের আদমশুমারি থেকে ২৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিউজিল্যান্ডে ইসলাম প্রবেশ ও প্রচার ১৮৭০ সালে দেশটিতে শান্তিরধর্ম ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু হয়। ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইউরোপ,
এশিয়া, মিডলইস্ট ও আফ্রিকাসহ নানা দেশের অনেক মানুষ এখানে এসে বসবাস স্থাপন করে। নিউজিল্যান্ডে বর্তমানে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় লাখ খানেক।
নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের দেশটিতে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয় মূলত অভিবাসীদের মেহনত ও মাধ্যমে।
সে সময় স্বর্ণ অনুসন্ধানকারী পেশার ১৫ জন চীনা মুসলিম জীবিকার অন্বেষণে পাড়ি জমিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডে। ওটাগোর ডানস্টানের স্বর্ণক্ষেত্রে তারা কর্ম করতেন।
পরে ১৯০০ সালের প্রথম দিকে গুজরাটের তিনটি মুসলমান পরিবার সেখানে বসবাস স্থাপন করে।
তারপর ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সময়ে পূর্ব ইউরোপ এবং ভারত থেকে আসা আরও কিছু অভিবাসী মুসলিম সেখানে বসতি শুরু করে চিরস্থায়ীভাবে।
নিউজিল্যান্ড সরকারের হিসাব অনুযায়ী , ১৯৫০ সালে নিউজিল্যান্ডে মুসলিম অধিবাসী ছিল মাত্র ১৫০ জন।
১৯৬০ সালে এ সংখ্যা খুব বেশী উন্নীত হয় ২৬০-এ। অভিবাসী মুসলিমদের বড় আকারে বসবাস স্থাপন আরম্ভ হয় ১৯৭০ সালে।
সে সময় ফিজি থেকে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিমরা নিউজিল্যান্ডে বসবাস স্থাপন আরম্ভ করে।
তাদের অনুসরণ ও অনুকরণ করে ১৯৯০ সালের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত বিহুত দেশের উদ্বাস্তু মুসলিমরা পাড়ি জমায় নিউজিল্যান্ডে।
এরপর থেকেই নিউজিল্যান্ডে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে মুসলিমের সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি।
নিউজিল্যান্ডে আলেম-উলামাদের আগমন
ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ধর্মীয় জ্ঞান আহরণ করে এ দেশে এসেছেন, এমন বহুত যোগ্য ও অভিজ্ঞ আলেম-উলামাও রয়েছেন দেশটিতে।
তারা নিউজিল্যান্ডে ইসলামের প্রচার প্রসারের পাশাপাশি সেখানকার মুসলিমদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করার পেছনে দিন রাত মেহনত করে যাচ্ছেন।
নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৭৭% মুসলিম বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের প্রায়ই ভারতীয়। অনুপাত হিসেবে মুসলিমদের মধ্যে ২৯% ভারতীয়, আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২১%।
ধর্মীয় জ্ঞানের ক্ষেত্রেও মুসলিমরা একধাপ এগিয়ে রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটিতে তাদের আবাসস্থল ঘেঁষে মসজিদগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।
মসজিদসংলগ্ন কমপ্লেক্সে বাচ্চাদের প্রাথমিক ধর্মীয় জ্ঞান ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু হিফজখানাও মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে।
কয়েকটি মসজিদের উদ্যোগে ‘সানডে স্কুল' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বন্ধের দিন বাচ্চাদের দিনব্যাপী ধর্মীয় শিক্ষা (জ্ঞান) দেওয়া হয় তাতে।
মুসলিমরা নিউজিল্যান্ডে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ক্রাইস্টচার্চে ২টি মসজিদে মারাত্মক হামলা তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি করেছে।
(সূত্র: আল খলিজ অনলাইনস)