(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
প্রবাসী ছেলে জীবনে প্রথম মাসের বেতন তুলে তার বাবা কে ফোন করেছে- হ্যালো বাবা?
– হ্যাঁ বাপজান কেমন আছিস?
আব্বু আমি অনেক ভাল আছি। তুমি ভাল আছো তো? শরীর সাস্থ ভাল, তবে তোকে অনেক মনে পড়ে। বাদ দে তোর কি খবর বল?
আমিও ভাল আছি। একটা নাম্বার দিচ্ছি তোমাকে লেখ।
(মানিগ্রাম) – কিসের নাম্বার খোকা? আমি বেতন পেয়েছি বাবা। পুরা এক লাখ smile emoticon- আলহামদুলিল্লাহ।
বাবা একটা কথা বলি? ( কিছুটা দুষ্টামির ছলে ) – এতদিন পর ফোন করেছিস শুধু মাত্র একটাই কথাই বলবি? বাবা তুমি তো বলেছিলে পিতৃ ঋণ কোন দিন শোধ হয় না।
তুমি ২৬ বছরে আমার পেছনে যত টাকা ব্যয় করেছ তুমি কি জানো আমি আগামী ৫ বছরে সে টাকা তোমায় ফিরিয়ে দিতে পারবো।
আমার এখানে ১ টাকা তোমার ওখানে ১০০ টাকা বাবা smile emoticon
বাবা : ( কিছুটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল) বাবা একটা গল্প শুনবি? ছেলেটা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। নিচু স্বরে বললো- বলো বাবা শুনবো……
– তোর বয়স যখন ৪ বছর আমার বেতন তখন তিন হাজার টাকা। ১,২০০ টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে আঠারোশ টাকায় চলে সংসার।
আমি আমার সাধ্যের মধ্যে সব সময় চেষ্টা করে গিয়েছি তোর ‘মা কে ‘সুখী করতে। তোকে যেবার স্কুলে ভর্তি করলাম,
সেবার ই প্রথম আমরা আমাদের ম্যারিজডে টা পালন করিনি। সে বছর তোর আম্মুকে কিছুই আমি দিতে পারিনি।
তুই যখন কলেজে উঠলি আমাদের অবস্থা মোটামুটি তখন ভাল। কিন্তু খুব কষ্ট হয়ে গেছিল যখন আমার ট্রান্সফার নারায়ণগঞ্জ হয়।
রোজ রোজ উত্তরা থেকে নারায়ণগঞ্জ বাসে করে পায়ে হেটে ঘামে ভিজে অনেক দুর্বিষহ লাগছিল। একদিন শোরুম থেকে একটা বাইক দেখে আসলাম।
সে রাতে আমি স্বপ্নেও দেখে ছিলাম আমি বাইকে চালিয়ে অফিস যাচ্ছি। কিন্তু পরের দিন তুই বায়নাধরলি উত্তরা থেকে বনানী ভার্সিটি করতে তোর কষ্ট হয়।
তোর কষ্টে আমার কষ্ট হয় বাবা। আমি তোকে বাইক টা ক্রয় করে দিয়েছিলাম। আমার এক টাকা তোর ওখানে এখন ১ পয়সা!
কিন্তু মনে করে দেখ এই ১ টাকা দিয়ে তুই বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করেছিস। ব্রান্ড নিউ মোবাইলে হেড ফোন কানে লাগিয়ে সারা রাত গান শুনেছিস।
পিকনিক করেছিস, ট্যুর করেছিস, আড্ডা পূর্তি করছিস । তোর প্রতিটা দিন ছিল স্বপ্নের মতন।
আর তোর একশ টাকা নিয়ে আমি এখন হার্টের বাইপাসকরাই ডায়াবেটিক মাপাই
জানিস বাবা আমার মাছ খাওয়া নিষেধ, গোশত খাওয়া নিষেধ, কি করে এত টাকা খরচ করি বল! তোর টাকা নিয়ে তাই আমি কল্পনার হাট বসাই।
সে হাটে আমি বাইক চালিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াই। বন্ধুদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে যাই। তোর মায়ের হাত ধরে চাঁদনী পসরে সেন্ট মার্টিনের বালুচরে হেঁটে বেড়াই।
বাবা চুপ করো প্লীজ!! আমি তোমার কাছে চলে আসব। টাকা না তোমার ভালবাসা তোমাকে ফিরিয়ে দিব। হাহাহা বোঁকা ছেলে!
পিতাদের ভালবাসা কখনো ফিরিয়ে দেয়া যায় না। ছোট্ট শিশুর মল মুত্রও মোছা যায় আর বুড়োদের ঘরেও ঢোকা যায় না। তোকে একটা প্রশ্ন করি বাবা।
ধর তুই আমি আর তোর খোঁকা ৩ জন এক নৌকায় বসে আছি। হটাৎ নৌকা টা ডুবতে শুরু করলো…যে কোন ১জনকে বাঁচাতে পারবি তুই।
কাকে বাঁচাবি বল? ছেলেটা হাজার চেষ্টা করেও এক চুল ঠোঁট নড়াতে পারছেনা! উত্তর দিতে হবে না। ছেলেরা পিতা হয়, পিতা কখনো ছেলে হতে পারে না।
পৃথিবীতে সব চেয়ে ভারী জিনিস কি জানিস? বাবার কাঁধে ছেলের লাশ! আমি শুধু জায়নামাজে বসে একটা জিনিস চাই।
আমার কবরের ঘরটায় যেন আমি আমার ছেলের কাঁধে চড়ে যাই। তাহলেই তুই ১টা ঋণ শোধ করতে পারবি তোকে কোলে নেয়ার ঋণ ।