(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত লিপিকার ফেরেশতাদের সাথে থাকবে।
আর যে কোরআন পাঠে আটকায় এবং তার পক্ষে কষ্টদায়ক হয়, তার জন্য দুইটি পুরস্কার রয়েছে।
(বুখারী ও মুসলিম)
ব্যাখ্যা:
কোরআন পাঠে দক্ষ ঐ ব্যক্তি, যে কোরআন ঠেকে ঠেকে ছাড়া পড়তে পারে এবং ঐ ব্যক্তির জন্য কোরআন পড়া কঠিন কোন কাজ নয়।
আর উল্লেখিত ফেরেশতা দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ ফেরেশতা:
যে লাওহে মাহফূয থেকে আল্লাহর কিতাব সমূহ নকল করতেন অথবা ঐ ফেরেশতা যাকে আল্লাহ হুকুম করেছেন মানুষের আমাল লেখার উপর।
হাদীসের উদ্দেশ্য:
ঐ উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতা দুনিয়ার মধ্যে যেমন আমল করবে এবং আখেরাতে তার যে মর্যাদা হাসেল হবে ঐ মর্যাদা মধ্যে কোরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তিও শরীক থাকবে।
যে ব্যক্তির কোরআন স্মরণ নেই এবং কোরআন ঠেকে ঠেকে পড়ে ঐ ব্যক্তির জন্য দুইটি সাওয়াবের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
(১) সাওয়াব কোরআন পড়ার, (২) সাওয়াব কোরআন ঠেকে ঠেকে পড়ার।
কিন্তু এর উদ্দেশ্য এই নয় যে, কোরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তির থেকেও কোরআন ঠেকে ঠেকে পড়নেওয়ালা সাওয়াব বেশী পাবে।
কেননা কোরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তিতো অনেক সাওয়াব পাবে এবং এই কারণেই তাকে ফেরেশতাদের সাথে থাকার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
মোটকথা, কোরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তিতো অতি উত্তম ব্যক্তি এবং যে ব্যক্তি কোরআন ঠেকে ঠেকে পড়বে সে দুইটি সাওয়াব পাবে।
হযরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই ব্যক্তি ছাড়া কেউ ঈর্ষার পাএ নয়।
(১) সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কোরআন দান করেছেন আর সে তা,পড়ে রাত-দিন।(২) অপর ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন দান করেছেন আর সে তা হতে দান করে রাত-দিন।
ব্যাখ্যা:
হিংসার অর্থ অন্যের থেকে নিয়ামত ছিনিয়ে নেওয়া এনং নিজের জন্য ঐ নিয়ামত হাসেল করার ইচ্ছা করা।
যেমন হযরত মিরাক (রহ.) বলেন, হিংসা দুই প্রকার (১) প্রকৃত হিংসা, (২) অপ্রকৃত হিংসা। প্রকৃত হিংসার উদ্দেশ্য এই যে, কোন ব্যক্তির থেকে নিয়ামত ছিনিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা করা।
সুতরাং হিংসার এই প্রকার কোরআনের আহকাম এবং হাদীসের তালীমের প্রেক্ষাপটে সমস্ত উলামায়ে উম্মতের নিকট হারাম।
অপ্রকৃত হিংসার উদ্দেশ্য এই যে, কোন ব্যক্তির নিকট কেউ নিয়ামত দেখে ঐ নিয়ামত তার হাসেল হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করা।
এই ইচ্ছা ব্যতীত যে, এই নিয়ামত ঐ ব্যক্তির থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হোক। এ প্রকার হিংসাকে ঈর্ষা বলে। অপ্রকৃত হিংসা যদি দুনিয়ার কাজে হয়, তো এটা জায়েজ আছে।
আর যদি দ্বীনী কাজে হয়, তো এটা মুস্তাহাব। যেমন কোন ব্যক্তিকে কেউ দেখল যে, সে মসজিদ বানাচ্ছে এবং যে দেখল সে ইচ্ছা পোষণ করল,
যদি আমার নিকট টাকা থাকতো তাহলে আমিও এরূপ মসজিদ নির্মাণ করতাম, এটা ভালো ঈর্ষা এবং ঐ ব্যক্তির ইচ্ছার উপর সাওয়াব পাবে।
মোটকথা: এই হাদীসের মধ্যে হিংসার দ্বারা উদ্দেশ্য ঈর্ষা। কিন্তু এই হাদীসের মধ্যে ঈর্ষার অনুমতি শুধু এই দুই নিয়ামতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উদ্দেশ্য নয়।
বরং উদ্দেশ্য যে, কোন নিয়ামত এই দুই নিয়ামত থেকে বড় নয়, যে নিয়ামতই হাসেল করার ইচ্ছা করুক না কেন।
সুতরাং এই জন্য মাজহারী (রহ.) বলেন, যে কোন ব্যক্তির জন্য এটা উচিত হবে না যে,
সে কোন ব্যক্তির নিকট কোন নিয়ামত দেখে সে ঐ নিয়ামত হাসেল করার ইচ্ছ করবে।
হ্যা যদি ঐ নিয়ামত এমন হয় যা আল্লহর নিকটবর্তী হওয়ার মাধ্যম হয়।
যেমন: কোরআন তিলাওয়াত, সদকা, দান করা এরকম অন্য ভাল জিনিসের নিয়ামত হাসেল করার ইচ্ছা করা ভাল।
(কোরআনের মহিমা-৮২,৮৩,৮৪)