(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, আবুল মুনযির! বলতে পার কি?
আল্লাহর কিতাবের মধ্য থেকে কোন আয়াতটি শ্রেষ্ঠতর? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি আবার বললেন, হে আবুল মুনযির!
তুমি বলতে পার কি? আল্লাহর কিতাবের মধ্যে কোন আয়াতটি শ্রেষ্ঠতর? এবার আমি বললাম, “আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম।” উবাই (রা.) বলেন,
এ সময় হুজুর (সা.) আমার সিনায় হাত মেরে বললেন, তোমার ধারণা মোবারক সঠিক হোক হে আবুল মুনযির!
(মুসলিম)
ব্যাখ্যা:
হুজুর (সা.) যখন প্রথম বার প্রশ্ন করলেন, তখন হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) আদবের দিকে খেয়াল করে কোন উত্তর দিলেন না।
বরং আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের উপর প্রশ্নের উত্তর অর্পণ করলেন।
পুনরায় যখন দ্বিতীয়বার হুজুর (সা.) প্রশ্ন করলেন, তখন উবাই ইবনে কাব (রা.) উত্তর দিলেন।
কিন্তু কিছু কিছু ধর্মজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ বলেন, প্রথমবার যখন হুজুর (সা.) প্রশ্ন করলেন, তখন হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) এর নিকটে উত্তর জানা ছিল না।
কিন্তু দ্বিতীয়বার হুজুর (সা.) যখন প্রশ্ন করলেন, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) কে,
ইলহাম (খোদার পক্ষ থেকে অন্ত:নিক্ষিপ্ত নির্দেশ বা বার্তা) এর মাধ্যমে ঐ প্রশ্নের উত্তর স্মরণ করে দিলেন। অত:পর হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) উত্তর দিলেন।
আয়াতুল কুরসী সব থেকে শ্রেষ্ঠ আয়াত এই জন্য বলা হয়েছে যে, এর মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাস, আল্লাহর মহত্ত্ব্ব এবং আল্লাহর গুণাবলীর বর্ণনা রয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন
একরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে ফিৎরার মাল পাহারায় নিযুক্ত করলেন। এ সময় আমার নিকট এক ব্যক্তি আসল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্য শস্য নিতে লাগল।
আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, তোমাকে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট নিয়ে যাব। সে বলল, আমি একজন অভাবগ্রস্ত লোক।
আমার বহু পোষ্য রয়েছে এবং আমার অভাবও নিদারুণ। আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
যখন ভোরে গেলাম, নবী কারীম (সা.) আমাকে বললেন, আবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দীর কী হলো? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
সে নিদারুণ অভাব ও বহু পোষ্যের অভিযোগ করল, তাই আমি তার প্রতি দয়া করলাম এবং তাকে ছেড়ে দিলাম।
হুজুর (সা.) বললেন, শুনো! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে।
আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, , আমি নিশ্চিতভাবে বুঝলাম যে, সে আবার আবার আসবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বলার কারণে। অতএব আমি তার প্রতীক্ষায় রইলাম।
সে আবার আসল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্য শস্য ভরে খাদ্য শস্য নিতে লাগল।
এ সময় আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট নিয়ে যাব।
সে বললো, এবারও আমাকে ছাড়। আমি বড় অভাবগ্রস্ত এবং আমার বহু পোষ্য রয়েছে, আমি আর আসব না।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এবারও আমি তার প্রতি দয়া করলাম এবং তাকে ছেড়ে দিলাম। যখন আমি ভোরে উঠলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন,
আবু হুরায়রা! তোমার বন্দীর কী হলো? আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাল!
সে নিদারুণ অভাবগ্রস্ত ও বহু পোষ্যের অভিযোগ করল, তাই আমি তার প্রতি দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলাম।
হুজুর (সা.) বললেন, শুনো! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে, সে আবারও আসবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, সে আবারও আসবে।
কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- “সে আবার আসবে।” সুতরাং আমি তার,প্রতীরক্ষায় রইলাম। সে আবার আসল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্য শস্য নিতে লাগল।
আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট নিয়ে যাব।
এটি তিনবারের শেষ বার
তুমি ওয়াদা করেছিলে, তুমি আর আসবে না। অথচ তুমি এসেছ। সে বলল, এবারও আমাকে ছাড়। আমি তোমাকে এমন কয়েকটি বাক্য শিখাব,
তার দ্বারা আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন। তা হল এই: যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে, “আয়াতুল কুরসী” পড়বে-
“আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম” আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন নেগাহবান (পাহারাদার) থাকবে এবং শয়তান তোমার নিকট আসতে পারবে না, যে যাবৎ না তুমি ভোরে উঠ।
এবারও আমি তাকে ছেড়ে, দিলাম। যখন ভোরে উঠলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, তোমার বন্দীর কী হলো!
আমি বললাম, হুজুর! সে বলল- সে আমাকে এমন কয়টি কথা শিখাবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন।
হুজুর (সা.) বললেন, শুন! সে এবার তোমাকে সত্য বলেছে। অথচ সে নিছক মিথ্যুক। তুমি কি জান? তুমি রাত্রিযাবৎ কার সাথে কথা বলেছ!
আমি বললাম, জী না। তিনি বললেন, সে ছিল একটা শয়তান।
(বুখারী)
(সূত্র: কোরআনের মহিমা-৯৮, ৯৯,১০০, ১০১)