(মুসলিমবিডি২৪ ডটক)
একজন গর্ভবতী বোন, প্রসূতি এবং তার পাশাপাশি অন্যন্য অসুস্থতা ছিলো। স্বামী স্ত্রী বাসাতেই ছিলেন।
লাগলো আগুন, অসুস্থ স্ত্রী উপর তলা থেকে নিচতলাতে নামতে পারেননি, স্বামী চেষ্টা করেও স্ত্রীকে নামাতে পারেননি।
যদিও স্বামী চাইলে একাই বের হয়ে যেতে পারতেন, অসুস্থ স্ত্রীকে ফেলা একা ফেলে নামাটার চাইতে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বাঁচতে চাওয়াটাই মূখ্য মনে করলেন।
দগ্ধ ঘরে স্বামী ও স্ত্রী এবং গর্ভের সন্তান সহ তিনজনই চলে গেলেন রবের কাছে।
প্রতিদিনের নিয়মিত আড্ডা দিচ্ছিলেন চার বন্ধু
আগুন লাগলো, কিন্তু পালাতে পারলো না কেউই। সব কিছু পুড়ে ছাই এখন পড়ে আছে শুধু চারটি বন্ধুর মাথার খুলি।
বড় আবদার জুড়েছিল সন্তান, একটু বিরিয়ানী খাবে বলে। বাসা থেকে বাবা প্রিয় সন্তানের জন্য বিরিয়ানী কিনতে গেলেন।
বিরিয়ানী নিয়ে ফেরা হলো ঠিকই কিন্তু পাওয়া হলো না সন্তানকে। আদরের সন্তান রবের কাছে চলে গেছেন বাবাকে ফেলে…
হাফেজ কাওসার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছোট্ট ফুটফুটে যমজ সন্তানের বাবা তিনি। মর্গের বাহিরে, হাসপাতালে ছুটাছুটি করে,
এখান থেকে সেখানে ছুটাছুটি করছে বাবার জন্য। এক বছরের বাচ্চা অপেক্ষার প্রহর গুনছে কোলে কোলে ঘুরে ঘুরে বাবার জন্য।
বাবাকে দেখার অপেক্ষার প্রহর গুনছে বাবাগুলো… আদৌ কি বাবার দেখা মিলবে তাদের! দুই ভাইয়ের জড়াজড়ি করা লাশ আলাদা করা যাচ্ছেনা কোন কিছুতেই।
অনেক চেষ্টা করে আলাদা করার পর দেখা গেলো তাদের বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে একটি শিশুকে। নিজের জীবন দিয়েও সর্বাত্তক শিশুটিকে বাচাঁনোর শেষ চেষ্টা করছিলেন এ দুই ভাই।
যা পান, একটু মাংস হলেও
একটু, একটু হলেও দেন! আমার বাবারে আমি কোলে নিমু! আমার বাবারে ডাকলে আসবে না?
বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল, বিদেশ যাবে! ও নর্থ সাউথ এ পরে! আমার বাবারে আমি ডাকলে আসবে তো?
যা পান, আমার বাবার, একটু বের করে দেন! — এভাবেই আর্তনাদ জানাচ্ছিলেন আগুনে সন্তান হারানো এক মা..
দারে দারে ঘুরে ফিরেও পাওয়া যাচ্ছিলো না ভাইয়ের লাশ। অনেক খুঁজে পাওয়া গেলো ভাইয়ের লাশ। মৃত ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করে বাবাকে ফোন দিয়ে বলছে ভাইয়ের লাশ পাবার কথা।
কেই'বা জানতে আজ এভাবে তাদের মৃত্যু লিখা আছে। হাসি, আশা, কত দুনিয়াবী স্বপ্ন নিয়ে তারা বেঁচে ছিলো।
ভাবতেও কি পেরেছিলো এরকম একটি মরন তাদের হবে?
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
কেউই জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে বা যায়গায় বা দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
(সূরা লুকমানঃ ৩১/৩৪)
ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ডে কেউ হয়েছেন সন্তানহারা, কারো শেষ হয়েছে শেষ সম্বলটুকু, নিজের ব্যবসা, নিজের বাড়ি-ঘর, নিজের সম্বলটুকু।
সন্তান, সম্বল, নিজের স্ত্রী, ভাই-বোন কতকিছুইনা মানুষ হারিয়েছেন। এ সব কিছুই কারো জন্য পরীক্ষা আবার কারো জন্য তাদের পাপের দুনিয়াবী আযাব।
মুসলিমদের একটি পায়ে কাটা বিধলেও তার সু-বিনিময় একজন মুসলিম পায়। হাদিসে এসেছেঃ
যে আগুনে পুড়ে মারা গেল সে শহীদ।
(নাসায়ী ১৮৪৬, আবূ দাউদ ৩১১১)
আমরা আশা করতে পারি মুসলিম যেসকল ভাই-বোনেরা আমাদের প্রজ্ঞাময় রবের কাছে চলে গেছেন তাদের তিনি শহীদ হিসেবে কবুল করবেন ইন শা আল্লাহ।
আর যারা দুনিয়াতে বেঁচে আছেন তাদের সুস্থতার দুয়া করি। আর পরিশেষে আহত ও নিহত সকল পরিবার-পরিজনকে জানাতে চাই – আল্লাহ ﷻ বলেনঃ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই: মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে।
আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সু-খবর দাও।❞
(সূরা আল-বাক্বারাহঃ ০২/১৫৫)
.
সুতরাং, সবর ও সালাতের মধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করুন। আল্লাহ আপনাদের ধৈর্য দান করুন, আমীন।