(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী কারীম (সা.) এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন।
তিনি বললেন, “আলিফ লাম রা” ওয়ালা সূরা সমূহের মধ্য থেকে তিনটি সূরা পড়বে। সে বলল : হুজুর!
আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং আমার অন্তর কঠিন ও জিহবা শক্ত হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, তবে তুমি “হা-মীম” ওয়ালা সূরা সমূহ থেকে তিনটি সূরা পড়বে।
সে পূর্বের ন্যায়্ উত্তর দিল: অত:পর বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে ব্যাপক অর্থযুক্ত একটি সূরা শিখিয়ে দিন।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে সূরা “ইযা যুলযিলা” শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে দিলেন। এবার সে বলল, তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন।
আমি এর উপর কখনো কিছু বাড়াবো না। অত:পর সে প্রস্থান করলো। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) দুইবার বললেন: লোকটি কৃতকার্জ হলো! লোকটি কৃতকার্য হলো!!
(আহমদ ও আবু দাউদ)
ব্যাখ্যা:
পাচটি সূরার শুরুতে “আলিফ লাম রা” রয়েছে। সূরা ইউনুছ, সূরা হুদ, সূরা ইব্রাহীম, সূরা ইউসুফ ও সূরা হিজর ইহাদিগকে যাওয়াতুর রা” বা রা-ওয়ালা সূরা বলে।
আর সাতটি সূরার প্রথমে “হা-মীম” রয়েছে সূরা মুমিন, সূরা ফুচ্ছিলাত, সুরা শুরা, সূরা যুখরুফ, সূরা দোখান, সূরা যাসিয়াহ ও সূরা আহকাফ ইহাদিগকে-
“যাওয়াতুন হা-মীম” বা হা-মীম ওয়ালা সূরা বলে। সূরা ইযা-যুলযিলাকে ব্যাপক অর্থযুক্ত সূরা এজন্য বলা হয়েছে যে, ঐ সূরার মধ্যে এই আয়াত আছে:
“ফামাই ইয়ায়মাল মিসকা-লা যাররাতিন খাইরাই এরাহ, ওয়ামাই ইয়ায়মাল মিসকা-লা যাররাতিন সাররাই এরাহ”
আয়াতের অর্থ: অত:পর কেউ অনুপরিমাণ সৎকর্ম করলে, তা দেখতে পাবে এবং কেউ অনুপরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।
প্রথমে যে আয়াত আছে, ঐ আয়াত দ্বারা ঐ সমস্ত কর্মের কথা বলা হয়েছে,
যে কর্মগুলো করা শরীয়ত সম্মত এবং দ্বিতীয় আয়াত দ্বারা ঐ সমস্ত অসৎকর্মের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো শরীয়ত পরিপন্থী।
সূরা যিলযাল, সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাসের ফজিলত
হযরত ইবনে আব্বাস ও আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূরা ইযা যুলযিলাত (সাওয়াবে) কোরআনের অর্ধেকের সমান।
“কুল হুয়াল্লাহু আহাদ” এ কোরআনের তৃতীয়াংশের সমান এবং “কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরূন” এক কোরআনের এক চতুর্থাংশের সমান।
(তিরমিযী)
ব্যাখ্যা:
কোরআনে সূচনালগ্ন এবং পরকাল দুইটা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সূরা যিলযালে পরকাল সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।
এ জন্য এই সূরাকে কোরআনের অর্ধেকের সমান বলা হয়েছে। সূরা ইখলাস কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান এই সম্পর্কে কেহ বলেন-
কোরআনে প্রধানত: তিনটি বিষয় রয়েছে, এক. আহকাম। অর্থাৎ আদেশ-নিষেধ বা বিধানাবলী। দুই. ঘটনাবলী এবং তিন. তাওহীদ।
আর এই সূরাতে তাওহীদের বিবরণ রয়েছে। সুতরাং এই সূরাটি কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। অপর কারো মতে অন্য কারণে এই সূরা এক তৃতীয়াংশের সমান।
সূরা কাফিরূন কোরআনের এক চতুর্থাংশের সমান। কারণ কোরআনে চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এক. আল্লাহর একত্ববাদ। দুই. নবীর নবুওয়ত। তিন. শরীয়তের আদেশ-নিষেধ। চার. পূর্ববর্তীদের ঘটনাবলী। আর এই সূরাতে তাওহীদের বিবরণ রয়েছে।
সুতরাং এই সূরাটি কোরআনের এক চতুর্থাংশের সমান। সূরা ইখলাস ও কাফিরূন এর মধ্যে পার্থক্য হলো যে,
সূরা ইখলাসের মধ্যে কোরআনকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং সূরা কাফিরূনের মধ্যে কোরআনকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
সূরা তাকাসুর এর ফজিলত
হযরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্যে কেহ কি প্রতিদিন হাজার আয়াত পড়তে পারেনা?
সাহাবীগণ বললেন, কে প্রতিদিন হাজার আয়াত পড়তে পারবে? তখন তিনি বললেন, তবে কী তোমাদের কেহ প্রতিদিন সূরা “আল-হাকুমুত্তাকাসুর” পড়তে পারেনা?
অর্থাৎ সূরা আল-হাকুমুত্তাকাসুর পাঠ করলে এক হাজার আয়াত পাঠ করার সওয়াব পাওয়া যাবে।
(বায়হাকী- শুআবুল ঈমান)
ব্যাখ্যা:
সূরা আল-হাকুমুত্তাকাসুর পাঠ করলে, এক হাজার আয়াতের সওয়াব পাওয়া যাবে। কেননা ঐ সূরার মধ্যে পার্থিব জীবনকে ব্যতিরেকে পরকালীন জীবনের দিকে উৎসাহিত করেছে।
সূরা কাফিরূনের ফযিলত
তাবেঈ ফরওয়া ইবনে নওফেল তার পিতা নওফেল হতে বর্ণনা করেন যে, একদা নওফেল বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আমাকে এমন একটি জিনিস শিখিয়ে দিন, যা আমি শয্যাগ্রহণকালে পড়তে পারি। হুজুর (সা:) বললেন, সূরা “কুল ইয়া-আইয়ুহাল কাফিরূন” পড়বে।
কেননা, এই সূরাতে শিরক হতে বিরাগ রয়েছে।
(তিরমীযী, আবু দাউদ ও দারেমী)
(কোরআনের মহিমা-১১৮,১১৯,১২০,১২১)