(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- কোরআন পাকে ত্রিশ আয়াতের একটি সূরা আছে,
যা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছে, ফলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সূরাটি “তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক”
(আহমদ, তিরমিযী,আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ)
ব্যাখ্যা:
(ঐ সূরা সুপারিশ করবে বা করেছে) বাক্যের মধ্যে দুইটা সম্ভাবনা আছে।
প্রথম যে, ঐ বাক্য অতীত কালের খবর দিচ্ছে যে, এক ব্যক্তি সূরা মুলক পড়তেন,
এবং সূরা মুলকের বহু ইজ্জত-সম্মান করতেন। যখন ঐ ব্যক্তি মারা গেল, তখন ঐ সূরা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে ঐ ব্যক্তির মুক্তির জন্য।
অত:পর আল্লাহ তায়ালা ঐ সূরার সুপারিশ কবুল করেন।
দ্বিতীয় যে, ঐ বাক্য ভবিষ্যৎকালের খবর দিচ্ছে, যে ব্যক্তি ঐ সূরা পাঠ করবে। কিয়ামতের দিন ঐ সূরা আল্লাহর দরবারে ঐ ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে।
এবং আল্লাহ তার সুপারিশকে কবুল করবেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) একবার নবী কারীম (সা.) এর কোন এক সাহাবী একটি কবরের উপর আপন তাবু খাটালেন।
তিনি জানতেন না যে, এখানে একটি কবর আছে। হঠাৎ তিনি দেখেন তার মধ্যে একটি লোক “তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক পড়তেছে।
এমনকি তা শেষ করে ফেলেছে, অত:পর তিনি নবী কারীম (সা.) এর নিকট আসলেন এবং তাকে এই সংবাদ জানালেন, নবী কারীম (সা.) বললেন-
এই সূরাটি হচ্ছে আযাব বাধা দানকারী এবং মুক্তি দানকারী। যা পাঠককে আল্লাহ আযাব হতে মুক্তি দিয়ে থাকে।
(তিরমিযী ইহা নিজেই বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে,হাদীসটি গরীব)
ব্যাখ্যা:
যে সাহাবী কবরের উপর তাবু খাটালেন, তিনি মৃত ব্যক্তির সূরা মুলক পড়া শুনলেন জাগ্রত অবস্থায় অথবা ঘুমন্ত অবস্থায়।
জাগ্রত অবস্থায় শুনাটা অগ্রাধিকার যোগ্য।
সূরা মুলক আযাব হতে বাধা দানকারী এর উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যক্তি এই সূরা পাঠ করবে, ঐ ব্যক্তিকে ঐ সূরা মুক্তি দিবে কবরের আযাব থেকে।
সূরা হাশর এর শেষ তিন আয়াতের বরকত
হযরত মাকেল ইবনে ইয়াসার (রা.) নবী কারীম (সা.) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন- যে ব্যক্তি সকালে উঠে তিনবার বলবে-
“আউযু বিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি মিনাশ শায়ত্বানির রাজিম” অত:পর সূরা হাশরের শেষের তিন আয়াত পড়বে,
আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন। যারা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকবে।
আর যদি সে এই দিনে মারা যায়, তাহলে মারা যাবে শহীদরূপে এবং যে ব্যক্তি উহা সন্ধ্যায় পড়বে সেও অনুরূপ মর্যাদার অধিকারী হবে।
(তিরমিযী ও দারেমী, কিন্তু তিরমিযী বলেছেন- হাদীসটি গরীব)
ব্যাখ্যা:
“আউযু বিল্লাহিস সামীয়িল আলীম” এর অর্থ আমি আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহর নিকট, যিনি শ্রোতা, জ্ঞাতা বিতাড়িত শয়তান হতে।
সূরা ওয়াক্বিয়ার কার্যকারীতা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ পড়েবে, কখনো সে দরিদ্রে পতিত হবে না।
(পরবর্তী রাবী বলেন) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ তার মেয়েদিগকে প্রত্যেক রাতে তা পড়তে বলতেন।
(উক্ত হাদীসটি বাইহাকী শুআবুল ঈমানে বর্ণনা করেছেন।)
ব্যাখ্যা:
এই হাদীসের উদ্দেশ্য, যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ পাঠ করে সে পার্থিব জীবনের দারিদ্রতা এবং পেরেশানি থেকে হেফাযত থাকবে।
এই সূরার বরকতে আল্লাহ ধৈর্য এবং অল্পতুষ্ট হওয়ার মত দৌলত তাকে দান করবে। অথবা এমন ব্যক্তির অন্তর অভাবমুক্ত থাকবে।
অর্থাৎ বাস্তবে দারিদ্র থাকলেও তার অন্তর অভাবমুক্ত থকবে।
কেননা, আল্লাহ তার অন্তরে আরাম এবং প্রশস্ততা দান করবে এবং ঐ ব্যক্তি আধ্যাত্মিক জ্ঞানী হওয়ার কারণে ভরসা ও বিশ্বস্ততা তার অন্তর ও রূহে প্রশান্তি সৃষ্টি করবে।
তার কারণ যে, ঐ ব্যক্তি ঐ সূরার অর্থ থেকে উপকৃত হয়েছে।
(সূত্র: কোরআনের মহিমা-১১৩, ১১৪,১১৫,১১৬)