(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বলেন, ইয়ামামা যুদ্ধের সময় (অর্থাৎ অব্যাহতর পরে) খলীফা আবু বকর (রা.) আমাকে ডেকে পাঠালেন।
আমি গিয়ে দেখি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তার নিকট বসা।
হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, উমর আমার নিকট আসে বলেন, ইয়ামামা যুদ্ধে বহু হাফেজে কোরআন শহীদ হয়েছে।
আমার আশংকা হয়, যদি বিভিন্ন স্থানে এভাবে হাফেজে কোরআন শহীদ হতে থাকে, তাহলে কোরআনের অনেকাংশ লোপ পাবে।
অতএব, আমি সঙ্গত মনে করি যে, আপনি কোরআনকে মাসহাফ বা কিতাব আকারে একত্র করতে নির্দেশ দিবেন।
আমি উমরকে বললাম, আপনি এমন কাজ কী করে করবেন। যা রাসূলুল্লাহ (সা.) করেননি। উমর (রা.) বললেন, খোদার কসম! ইহা অতি উত্তম কাজ হবে।
এই রূপে উমর আমাকে ইহা বার বার বলতে লাগল। অবশেষে ইহার জন্য আল্লাহ আমার অন্তরকে প্রশস্ত করে দিলেন এবং আমিও সঙ্গত মনে করলাম যা উমর সঙ্গত মনে করেছিল।
যায়েদ বলেন, হযরত আবু বকর (রা.) আমাকে বললেন, তুমি এমন একজন বুদ্ধিমান ও বিশ্বাসী জওয়ান!
যার প্রতি আমরা কোন সন্দেহ পোষণ করি না এবং তুমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওহীও লিখতে। সুতরাং তুমি কোরআনের আয়াত সমূহ অনুসন্ধান কর এবং তা একত্র কর।
যায়েদ বলেন, যদি তারা আমাকে পাহাড় সমূহের একটি পাহাড় স্থানান্তরিত করার দায়িত্ব অর্পণ করতো,
তবে তা আমার পক্ষে কোরআন একত্র করার যে গুরুদায়িত্ব তারা আমার উপর অর্পণ করেছিল তা অপেক্ষা অধিকতর দু:সাধ্য হতো না।
যায়েদ বলেন, আমি বললাম- আপনারা কেমন করে এমন কাজ করবেন যা রাসূলুল্লাহ (সা.) করেননি।
তিনি বললেন খোদার খসম! ইহা বড় উত্তম কাজ।
মোটকথা: হযরত আবু বকর (রা.) এভাবেই আমাকে পূণ: পূণ: বলতে লাগলেন। অবশেষে আল্লাহ আমার অন্তরকে ঐ কারণে প্রশস্ত করে দিলেন।
যে কারণে হযরত আবু বকর ও উমরের অন্তর প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন। সুতরাং আমি উহা সংগ্রহ করলাম খেজুর ডাল, সাদা পাথর, পশুর হাড় ও মানুষের অন্তর বা স্মৃতি হতে।
অবশেষে সূরা তাওবার শেষাংশ “লাক্বাদ জা-আকুম রাসূলুম মিন আনফুসিকুম” হতে সূরার শেষ পর্যন্ত পেলাম আবু খুজাইমা আনসারীর নিকট।
তা আমি তিনি ছাড়া অপর কারো নিকট পাইনি। যায়েদ বলেন, এই লিখিত ছহিফাগুলি খলীফা হযরত আবু বকরের নিকট ছিল।
এমতাবস্থায় আল্লাহ তায়ালা তাকে উঠিয়ে নিলেন। অত:পর তা খলীফা হযরত উমর ফারুকের নিকট তার জীবনাবধি অবস্থায় ছিল।
অত:পর তার কন্যা উম্মুল মুমিনীন হাফসার (রা.) নিকট।
ব্যাখ্যা:
ইয়ামামা এক শহরের নাম। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর খেলাফত কালে হযরত খালেদ ইবনে ওলীদ (রা.) এর নেতৃত্বে এক ফৌজ ইয়ামামা শহরে পাঠালেন।
ওখানকার লোকদের সাথে জোরালোভাবে যুদ্ধ হলো। যে যুদ্ধে মুসায়লামাতুল কাযযাব (মিথ্যা নবুওয়ত দাবীদার) মারা গেল।
মুসলমানদের ফৌজে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলো। মুসলমান ফৌজের মধ্যে যারা শহীদ হলো, তাদের অধিকাংশের অন্তরে কোরআনুল কারীম হেফাজত ছিল।
যেমন কিছু বুজুর্গদের মতে ঐ যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা সাতশত এবং কিছু বুজুর্গদের মতে বারশত।
এমন অবস্থায় হযরত উমর (রা.) এর চিন্তা হলো যে, কোরআনের হেফাজতের ব্যাপারে শুধু একটার (হাফিজদের) উপর ভরসা করা ঠিক হবে না।
বরং এই মহান আমানতকে হাফেজদের অন্তরের সাথে কাগজের উপর হেফাজতেরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
হাদীসের মধ্যে রয়েছে যে, হযরত আবু বকর (রা.) যায়েদ (রা.) কে বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওহী লিখতে।
এর উদ্দেশ্য যে, যায়েদ (রা.) অধিকাংশ সময় ওহী লিখতেন। অধিকাংশ শর্ত এই জন্য দিলেন যে, নবীর নিকট অবতীর্ণ হওয়া ওহী লিখতেন মোট চব্বিশজন সাহাবা।
যাদের মধ্যে চার খলীফা ছিলেন। সুতরাং হযরত আবু বকর (রা.) হযরত যায়েদ (রা.) কে কোরআন একত্রিত করার হুকুম দেওয়ার উদ্দেশ্য যে তুমি আল্লাহর নবীর ওহী লিখতে।
এই জন্য কোরআন একত্রিত করা বা লেখার ব্যাপারে তোমার আমানতদারী স্বীকৃত এবং বিশ্বাসী।
(সূত্র: কোরআনের মহিমা-২৭,২৮)