মুসলিমবিডি২৪ ডট কম
পবিত্র কাবাঘরের ভিতরে কি আছে? প্রায়ই আমাদের মনে এ প্রশ্ন জাগে। এ কালো ঘরটির অভ্যন্তরে না জানি কত কিছু লুকিয়ে আছে,
এমন কৌতূহল প্রত্যেক মুসলমানের মনে উদ্রেক হয়। আসুন জেনে নেই কি লুকিয়ে আছে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে।
সৌদি আরবের আল আরাবিয়া ডটনেট অবলম্বনে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন মুশাহিদ দেওয়ান।
পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে ১৮০ বর্গমিটার পরিধিতে তিনটি কাঠের খুটি আছে, যা এর ছাদকে দাড় করিয়ে রেখেছে।
খুটির কাঠগুলো এতই শক্ত প্রকৃতির যে, এর মতো বিকল্প কাঠ পাওয়া যায় না। এগুলো প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর (রা:) স্থাপন করেছিলেন।
বর্তমানে এ কাঠনির্মিত খুটির বয়স ১ হাজার ৩৫০ বছর। হালকা কালো রঙের এ খুটিগুলোর আয়তন ১৫০ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ৪৪ সেন্টিমিটার।
প্রতিটি খুটি একটি কাঠনির্মিত চৌকা ভিত্তিক ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যাতে কাঠ খোদাই করে সুন্দর কারুকার্য করা হয়েছে।
তিনটি খুটির মাঝে লম্বা করে একটি দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। সেটিতে পবিত্র কাবার জন্য হাদিয়াস্বরূপ প্রেরিত মূল্যবান তাম্র-রূপা ও কাচের তৈরি প্রদীপ,
(যা প্রাচীনযুগে আমির-বাদশাহরা পাঠিয়েছিলেন) ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়াও খুটিগুলোতে বিস্তৃত একটি স্ট্যান্ড আছে, যা উত্তর ও পূর্বপার্শ্বের দেয়াল পর্যন্ত প্রসারিত।
মেশক,আম্বর (সুগন্ধি দ্রব্য) ও উদের (এক ধরনের সুগন্ধি কাঠ) সুরভিত ঘ্রাণ পবিত্র কাবার অভ্যন্তরকে মোহনীয় করে রেখেছে।
ভিতরে একটি বাক্সে গোসলের বিভিন্ন সামগ্রী রাখা হয়েছে। প্রতি বছর একবার কাবাকে সাবান-পানি ও সুগন্ধি দিয়ে ধৌত করা হয়।
হারামাইন কর্তৃপক্ষ জানায়, পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে ডান পাশের রুকনে শামি ছাদে ওঠার সিঁড়ি সংযুক্ত করেছে।
এটা সমকোণী চতুর্ভুজ একটি ভিত্তি, যা জানালা ব্যতীত অবরুদ্ধ কক্ষের মতো। এর বিশেষ চাবিবিশিষ্ট একটি দরজা আছে।
একে স্বর্ণ-রূপা খচিত (কোরআনের আয়াতগুলো) লিপিমালায় কারুকার্য ও নকশাকৃত একটি রেশমের সুন্দর পর্দা দিয়ে আবৃত করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়
পবিত্র কাবাঘরের ফ্লোর (মেঝে) শ্বেতমর্মর (মার্বেল) পাথর দিয়ে সজ্জিত। এর অধিকাংশ সাদা আর বাকিটুকু রঙিন।
আর কাবার ভেতরের দেয়াল দামি রঙিন মর্মর পাথর ও দৃষ্টিনন্দন নকশায় অলংকৃত।
দেয়ালের অভ্যন্তরীণ অংশকে গোলাপি লাল রঙের রেশমি কাপড়ের পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়েছে।
এসব পর্দায় সাদা সুতা দিয়ে সাত-আট স্তরে শাহাদাতাইন (দুই কালেমা) ও কিছু আসমাউল হুসনা কারুকার্য করে বুনন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ পর্দা দিয়ে পবিত্র কাবার ছাদও ঢাকা হয়েছে। কাবার অভ্যন্তরে মোট নয়টি মার্বেল পাথরের ফলক আছে।
এর মধ্যে আটটিতে খত্তে সুলুছে (সুলুছ লিপিরীতি) শিলালিপি অংকন করা হয়েছে। আর অবশিষ্ট একটিতে কুফি লিপিরীতিতে অঙ্কিত।
চতুষ্পদী কুফি লিপিরীতিতে লিখিত এ ফলকের হতফগুলো রঙিন মূল্যবান মার্বেল পাথরের টুকরো দিয়ে অঙ্কিত এবং এর এক অংশ আরেক অংশের সঙ্গে সংযুক্ত।
এসব শিলালিপি হিজরি ষষ্ঠ শতাব্দীর পরে লেখা হয়েছে। এছাড়াও কাবা ঘরের অভ্যন্তরে পূর্বাপাশের দেয়ালে কাবার দরজা এবং বাবুত তওবার মাঝে,
খাদিমুল হারামাইন বাদশার ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদি কর্তৃক মর্মর পাথরে খোদাইকৃত একটি নথিপত্র আছে,
যা তার আমলে কাবার ব্যাপক পুন:সংস্কারের তারিখ নির্দেশ কর। এ ফলক নিয়ে কাবার অভ্যন্তরে অবস্থিত মোট শিলালিপির সংখ্যা ১০ টি হয়,
যার সবকয়টি সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত।
কাবাঘরের ৪টি কোণের আলাদা নাম আছে
(১) হাজরে আসওয়াদ (২) রুকনে ইরাকী (৩) রুকনে শামী ও (৪) রুকনে ইয়ামেনী।
বর্তমান কাবাঘরের আয়তন হলো
পশ্চিম পাশ ২২ হাত, পূর্ব পাশ ১৮.৫ হাত, দক্ষিণ পাশ ১৮ হাত, উত্তর পাশ ১২ হাত, উচ্চতা ২৭ ফুট।
হাজরে আসওয়াদ (দৈর্ঘ্য ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৭ ইঞ্চি) মানে কালো পাথর, এটি একটি বেহেশত পাথর।
কাবা শরীফ দেখলেও সওয়াব হয় যেমন মাতাপিতার চেহারা দর্শনে ও কোরআন শরীফ দর্শনে সওয়াব হয়।
তেমনি কাবা ঘরের দিকে তাকালেও আমল নামায় সওয়াব (নেকি) লিখা হয়। (সুবহান-আল্লাহ)
আল্লাহ তায়ালা আমরা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে পবিত্র কাবা শরীফ যিয়ারত করার তাওফিক দান করুক। (আমিন)