হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, হুজুর (সা:) আমাদেরকে এমন নসীহত খুব কমই করেছন,
যার ভিতর তিনি একথা বলেননি যে, খেয়ানতকারী ব্যক্তির ঈমান নেই এবং ওয়াদাভঙ্গকারী ব্যক্তির দ্বীন নেই।
(বায়হাকী)
ব্যাখ্যা:
উপরোক্ত হাদীসটিতে প্রিয় নবী (সা:) দ্বীন ও ঈমানের পরিপন্থী দুটি মারাত্মক অপরাধমূলক কাজের কথা উল্লেখ করেছন।
এর একটি হচ্ছে আমানতের খেয়ানত, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ওয়াদা ভঙ্গ।
এ হাদীসে আমানত শব্দটি ব্যপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তির আমানত, সমাজের আমানত, জাতির আমানত ইত্যাদি,
সব শ্রেণীর আমানতই এতে শামিল। অনুরূপভাবে অর্থসম্পদের আমানত, দায়িত্ব কর্তব্যের আমানত, ইজ্জত আবরুর আমানত প্রভৃতিও এর অন্তর্ভুক্ত।
ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতিও এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তির ওয়াদা হতে আরম্ভ করে জাতীয় আন্তর্জাতিক ওয়াদা,
চুক্তি, প্রতিজ্ঞা প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি সবই এতে শামিল।
হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত নবী কারীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্য হতে কেহই মুমিন হতে পারবে না,
যে পর্যন্ত না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা তার মুমিন ভাইয়ের জন্য পছন্দ করবে।
(বুখারী মুসলিম)
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা:
একজন লোক ঈমান গ্রহণ করার পর স্বাভাবিক ভাবেই ঈমানের চাহিদা মোতাবেক তার ওপর কতকগুলো দায়িত্ব অর্পিত হয়।
এ দায়িত্ব সমূহের মধ্যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বসমূহও শামিল। হাদীসে উল্লেখিত দায়িত্বটি একজন মুমিন ব্যক্তির সামাজিক দায়িত্ব।
অর্থাৎ একজন ঈমানদার ব্যক্তি তার নিজের স্বার্থ ও অধিকারকে যে চোখে দেখে, সমাজে বসবাসকারী তার মুমিন ভাইয়ের,
স্বার্থ ও অধিকারকেও ঠিক সেই চোখে দেখবে, অন্যথায় সে পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হস্ত ও জিহ্বা হতে অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে।
আর মুহাজির হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ্র নিষিদ্ধ বস্তু হতে হিজরত করে।
(বুখারী)
ব্যাখ্যা:
বর্ণিত হাদীসটিতে একজন প্রকৃত মুসলিম ও একজন মুহাজিরের চরিত্র কি ধরণের হওয়া উচিত সে দিকই ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলামকে নিজের জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তার হস্ত কিংবা জিহ্বা দ্বারা কোন মুসলমানকেই তকলীফ দিবে না।
অনুরূপভাবে হিজরতের পূর্ণ ফজিলত তিনিই প্রাপ্ত হবেন, যিনি আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু হতে হিজরত করবেন।
পার্থিব স্বার্থে দেশ ত্যাগ করা হিজরত নয়।