হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে,
রাসূললুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, যাবতীয় কাজের ফলাফল নিয়তের উপরেই নির্ভর করে।
প্রতিটি লোক (পরকালে) তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছে।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের উদ্দেশ্য হিজরত (দেশত্যাগ) করে, তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের উদ্দেশ্যেই হবে,
আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোন লোভ লালসা কিংবা কোন রমনীকে পাওয়ার মতলবে হিজরত করে, ফলত: তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে।
(বুখারী,মুসলিম)
ব্যাখ্যা:
মানব সন্তান ইহকালে যেসব ক্রিয়া-কর্ম করে তার ফলাফল পরবর্তীকালে আল্লাহ তায়ালা কিসের ভিত্তিতে দিবেন সে সম্পর্কেই মহানবীর উক্ত হাদীসাটি।
নবী কারীম (সা:) বলেন, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তার কাজের ফলাফল নিয়তের ভিত্তিতে দিবেন কাজের ভিত্তিতে নয়।
অর্থাৎ যে সংকল্প বা মনোবৃত্তি তাকে উক্ত কাজটি করতে বাধ্য করেছে সেই সংকল্পের ভিত্তিতেই দেয়া হবে তাকে তার কাজের প্রতিফল।
সুতরাং যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানের উদ্দেশ্যে তার নির্দেশাবলী পালনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে হিজরত করবে,
পরকালে সে তার উক্ত হিজরতের পূর্ণ সাওয়াব প্রাপ্ত হবে পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি যদি পার্থিব কোন স্বার্থের (যেমন কোন সুন্দরী নারীকে বিয়ে করা, কিংবা কোন সম্পদ লাভ করার) মোহে হিজরত করে, সে পার্থিব স্বার্থই লাভ করবে।
পরকালে আল্লাহর কাছে তার কিছুই পাওনা থাকবে না।
মনে করুন, এক ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি বিধানের মানসে হজ্জ সমাধা করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বাড়ী হতে রওয়ানা হলো।
কিন্তু পথিমধ্যে কোন দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে তার জীবন সূর্য অস্তমিত হলো।
এমতাবস্থায় তার হজ্জ কার্য সমাধা না হলেও মনের কলুষহীন সংকল্পের কারণে সে হজ্জের সাওয়াবের অধিকারী হবে।
পক্ষান্তরে অন্য এক ব্যক্তি দেশ ভ্রমণের মনোভাব নিয়ে হজ্জ কার্য সমাধা করলেও সাওয়াব হতে বঞ্চিত হবে।
অন্য একটি হাদীসে হযরত আবু হোরায়রা (রা:) বর্ণনা করেন:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে লক্ষ করেন না বরং তোমাদের অন্তরীকরণ ও কাজের দিকে লক্ষ করেন।
মুসলিম শরীফ
ব্যাখ্যা :
উপরোক্ত হাদীসটির সারমর্ম এই যে, আল্লাহর নিকট মানুষের শারীরিক সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ ইত্যাদির বিশেষ কোন গুরুত্ব নেই।
আল্লাহর কাছে গুরুত্ব হলো মানুষের অন্তর ও কাজের। অর্থাৎ মানুষ অন্তরে নেক নিয়ত রেখে যে কাজটি করে তা-ই আল্লাহর নিকট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য দুটি শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন। একটি হলো ঈমান, আর দ্বিতীয়টি বিশুদ্ধ নিয়ত।
আল্লাহ যেমন বেঈমানের ইবাদত বা উত্তম কাজ কবুল করেন না, তেমনি কবুল করেন না ত্রুটিপূর্ণ নিয়তের অধিকারী ইবাদত।